রাবির মেডিকেল সেন্টারসমস্যা না শুনেই ওষুধ লেখেন চিকিৎসকরা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসকসহ অন্যান্য লোকবল সংকট, চিকিৎসকদের দায়িত্বে গাফিলতি, মানহীন চিকিৎসা সেবা দেওয়াসহ অসংখ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন সময় চিকিৎসকের গাফিলতি ও চিকিৎসার মান নিয়ে অভিযোগ থাকলেও গত কয়েক দিনে সেটি আরও বেড়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের সমস্যা না শুনেই ওষুধ লিখে দেন চিকিৎসকরা। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, শিক্ষার্থীদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে দ্রুতই পদক্ষেপ নেবেন তারা। শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন নুরুজ্জামান খান।

মেডিকেল সেন্টার সূত্রে জানা যায়, এখানে চিকিৎসকদের জন্য ২৭টি পদ রয়েছে। কর্মরত আছেন ১৯ জন। এছাড়া অফিস সহকারী, অ্যাম্বুলেন্স চালক, নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ অন্য পদে আরও ৬৩ জন কর্মরত আছেন। এখানে প্রায় সব রোগের চিকিৎসার পাশাপাশি প্যাথলজি সেবার ব্যবস্থাও রয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, চিকিৎসা নিতে এলে তারা চিকিৎসকদের আন্তরিকতা দেখতে পান না। সমস্যার কথা ভালোভাবে না শুনেই ওষুধ লিখে দেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসলিমা আক্তার অভিযোগ করেন, মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা নিতে গেলে চিকিৎসকরা আন্তরিকভাবে রোগীর কথা শোনেন না। এমনকি রোগীর দিকে তাকানও না। কম্পিউটারের পর্দার দিকে তাকিয়ে থেকে প্রেসক্রিপশন লিখে দেন। একই অভিযোগ করেন হুমায়ুন কবির নামে আরেক শিক্ষার্থী।

মেডিকেলের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী অভিযোগ করেন, কিছু চিকিৎসক রাজনৈতিক ক্ষমতা দেখিয়ে সময়মতো মেডিকেলে  এসে রোগী দেখেন না। ফলে সেবাগ্রহীতারা  ভোগান্তিতে পড়েন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, লোকবল কম হলেও চিকিৎসকদের আনন্তরিকতা থাকলে এ সমস্যা কাটানো সম্ভব। মেডিকেলের বদনাম মানে সবারই বদনাম। কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন, যারা দায়িত্বের চেয়ে রাজনীতিতে বেশি সময় দিচ্ছেন। এখানে এসেও রাজনৈতিক আচরণ করেন অনেকে।

মেডিকেলের প্রধান চিকিৎসক তবিবুর রহমান শেখ বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে চেষ্টা করি। রোগ অনুযায়ী চিকিৎসকরা ওষুধ দিয়ে থাকেন। যদি প্যারাসিট্যামল দিয়ে জ্বর ভালো হয় সেক্ষেত্রে তো এটি ব্যবহার করতেই হবে। কিন্তু তারা না বুঝেই নানা কথা বলে। কিছু চিকিৎসকের আন্তরিকতার অভাব থাকতে পারে, বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিতে সবাই নিজেকে স্বাধীন ভাবে। কাউকে কিছু বলাও যায় না। এ বিষয়ে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে কথা বলেছি। মেডিকেলে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কেনা এবং লোকবল বাড়ানোর জন্য উপাচার্যের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

চিকিৎসক ও লোকবল নিয়োগে ইউজিসির অনুমোদন :চিকিৎসক ও লোকবল সংকট সমাধানে কয়েকটি পদে ৩৯ জন নিয়োগে অনুমোদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কাছে আবেদন জানিয়েছিল রাবি কর্তৃপক্ষ। কমিশন ১২ কর্মকর্তাসহ ২৯ জন নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে। চলতি অর্থবছরে নতুন লোকবল নিয়োগ সম্পন্ন করার নির্দেশনাও দিয়েছে ইউজিসি। এ সময়ে নিয়োগ সম্পন্ন না করতে পারলে কমিশনকে জানাতে বলা হয়েছে।

মাস্টারপ্ল্যানে ৫০০ শয্যা মেডিকেল :বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন, গবেষণা বৃদ্ধি, শিক্ষার মানোন্নয়নসহ নানা বিষয়ে ৫০ বছর মেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান করেছে প্রশাসন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ আশপাশের মানুষের চিকিৎসার জন্য ৫০০ শয্যা ১০ তলা ভবনের একটি মেডিকেল স্থাপনের পরিকল্পনাও রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়েই এমবিবিএস কোর্স চালু করার বিষয়েও প্রশাসন চিন্তা করছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা

যায়। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের নানা অভিযোগ পেয়েছি। মেডিকেলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এসেছি এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের নির্দেশনা দিয়েছি। আশা করি, দ্রুতই এ সমস্যা কাটানো সম্ভব হবে।

তিনি আরও বলেন, মেডিকেল কর্তৃপক্ষ লোকবল নিয়োগ এবং যন্ত্রপাতি কেনার জন্য আবেদন করেছে। তাদের চাহিদা পূরণে প্রশাসন চিন্তা করছে। মাস্টারপ্ল্যানের কিছু কার্যক্রম আমরা পাঁচ বছর মেয়াদে ভাগ করেছি। সেগুলোর কাজ চলছে। একনেকে বরাদ্দ চেয়েছি, বিষয়টি এখনও প্রি-একনেকে রয়েছে। বরাদ্দ পেলে মাস্টারপ্ল্যানের বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030920505523682