মর্যাদা ও ঐতিহ্যের কালো গাউন পরে সমাবর্তনের মাধ্যমে শিক্ষাজীবন শেষ করার প্রত্যাশা থাকে সব শিক্ষার্থীরই। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সেই বহুল আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণের দিন আগামীকাল শনিবার। প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পর প্রথমবার সমাবর্তন হচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি)। পুরান ঢাকার ধূপখোলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠে হবে এ আয়োজন। সমাবর্তনে অংশ নিচ্ছেন প্রায় ১৮ হাজার গ্র্যাজুয়েট ও অন্য ডিগ্রিধারী। আজ হবে সমাবর্তন মহড়া। সমাবর্তন ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে পুরো ক্যাম্পাসে। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে মেতে উঠেছেন আনন্দ-উল্লাসে। এদিকে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ত সময় পার করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সমাবর্তনের স্থান ধূপখোলা মাঠে নির্মাণ করা হয়েছে এক লাখ ৫০ হাজার বর্গফুটের বিশালাকৃতির প্যান্ডেল। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের পুরোনো প্রশাসনিক ভবনের আদলে মূল মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে। শনিবার সকাল ১১টা ৫৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান শুরু হবে। জবির প্রথম সমাবর্তন বক্তা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী ড. অরুণ কুমার বসাক। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সমাবর্তন অনুষ্ঠান শেষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মঞ্চ মাতাবেন কণ্ঠশিল্পী বাপ্পা মজুমদার।
সার্বিক বিষয়ে জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, সমাবর্তন প্রত্যেক শিক্ষার্থীর একান্ত প্রত্যাশার বিষয়। প্রথমবার এত বড় আয়োজন করাটা চ্যালেঞ্জের। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতায় ইতোমধ্যে
সমাবর্তনের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আজ সমাবর্তন মহড়া হবে। তিনি বলেন, এখন থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত সমাবর্তন হবে। এ বছরের শেষদিকে ডিসেম্বরে দ্বিতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করার চিন্তাভাবনা চলছে।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ২০০১-০২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল, পিএইচডি ও সান্ধ্যকালীন ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থী, যারা অন্তত একটি ডিগ্রি জবি থেকে অর্জন করেছেন, তারাই প্রথম সমাবর্তনে অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে স্নাতক ১১ হাজার ৮৭৭ জন, স্নাতকোত্তর চার হাজার ৮২৯, এমফিল ১১, পিএইচডি ছয় ও ইভনিং প্রোগ্রামের এক হাজার ৫৭৪ জন অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে ছেলে ১৩ হাজার ৭৬২ ও মেয়ে চার হাজার ৫৫৫ জন। সমাবর্তন উপলক্ষে ১৮ হাজার ৩১৭ শিক্ষার্থীর সার্টিফিকেট প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে সমাবর্তনে একজন শিক্ষার্থী কেবল একটি সনদের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পেরেছেন। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একাধিক ডিগ্রি অর্জনকারীরা সমাবর্তনের পর সনদ তুলতে পারবেন। যারা সুযোগ পেয়েও এ বছর সমাবর্তনে অংশগ্রহণ-আবেদন করেননি, তারা আর কখনও সমাবর্তনে অংশ নিতে পারবেন না।
সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারীরা আজ বিকেল পর্যন্ত অফিস চলাকালীন নিজ নিজ বিভাগ থেকে কস্টিউম, ব্যাগ ও গিফট সংগ্রহ করতে পারবেন। এবার সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারীদের গাউন ফেরত নেওয়া হবে না। সমাবর্তনের দিন ছাড়াও ১২ ও ১৩ জানুয়ারি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নিজ নিজ বিভাগ থেকে মূল সনদ গ্রহণ করা যাবে। কেউ এ সময়ের মধ্যে সনদ গ্রহণে ব্যর্থ হলে পরে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর থেকে সনদ তুলতে পারবেন।
সমাবর্তন ঘিরে চারস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ইতোমধ্যে বিএনসিসি, রোভার স্কাউট সদস্যদের প্রস্তুত করা হয়েছে। সমাবর্তন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুন রূপে সাজানো হয়েছে। প্রশাসনিক ভবন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ভবনে রং করা হয়েছে। সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য লাগানো হয়েছে ফুলের গাছ।