যশোর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও যশোর-২ (চৌগাছা-ঝিকরগাছা) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম মনিরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে দু:খ প্রকাশও করেছেন তিনি। নিজের ফেসবুক পেইজে দেয়া স্ট্যাটাসে তিনি বলেছেন,ভিডিওটির কারণে কারো মনে অযাচিতভাবে আঘাত দিয়ে থাকলে আমি আন্তরিকভাবে দু:খিত! ভিডিওটা নিয়ে কেউ কু-রাজনীতি করতে পারে এটা সত্যিই লজ্জাজনক"।
বৃহস্পতিবার (১১ অক্টোবর) যশোরের চৌগাছা উপজেলার এবিসিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গানের তালে তালে কোমলমতি ছাত্রীদের উঠবস করিয়ে ফুলের মালায় সাংসদ মনিরুল ইসলাম নিজেকে বরণ করিয়ে নেওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর দেশব্যাপী তোলপার শুরু হয়। সেখানে বলা হচ্ছে, এ যেন জমিদারি প্রথা। একজন সংসদ সদস্য, যিনি কিনা একজন আইনজীবীও, তিনি কি করে মধ্যযুগীয় কায়দায় এ ধরনের সম্মাননা নিতে পারলেন? একই সঙ্গে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরও সমালোচনা করেছেন অনেকেই।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটিতে দেখা যায়, কক্ষের মাঝের সারি দিয়ে স্কুলড্রেস পরা কয়েকজন বালিকা শিক্ষার্থী ফুলের মালা হাতে এগিয়ে আসছে। প্রথম জন মালা হাতে দাঁড়িয়ে গেলো সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম মনিরের সামনে। একে একে পর্যায়ক্রমে অন্যরা বসে থাকা অতিথির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে কিছুসময় পরে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। এভাবে তারা সাতবার হাঁটু গেড়ে বসেছে এবং উঠে দাঁড়িয়েছে। পরে তারা অতিথিদের গলায় ফুলের মালা পরিয়ে দিয়ে হাত জোড় করে ফিরে যায় নিজেদের আসনে।
তবে কিছু মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ভিডিওটি ভাইরাল করছে বলে দাবি করে নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম মনির। স্টাটাসটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
'সম্মানিত সূধী,
আপনাদের সকলের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ভাইরালে স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং জাতির শ্রেষ্ট সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের মালা পরিয়ে দেয়ার একটি ভিডিও নিয়ে সমালোচনা করা হচ্ছে। যা উদ্দেশ্য প্রণোদিত। ১১ অক্টোবর, সকাল ১০টায় যশোরের চৌগাছায় অবস্থিত এবিসিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নতুন ভবন উদ্বোধন উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলাম আমি জাতীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম মনির। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতির শ্রেষ্ট ৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান। তারা হলেন- ১. জেলা মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার আবুল হোসেন, ২. উপজেলা সাবেক কমান্ডার নূর হোসেন, ৩. সাবেক কমান্ডার শওকত আলী, ৪. সাবেক ডেপুটি কমান্ডার কিতাব আলী, ৫. উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা শাহাজান কবীর।
‘আমাকে এবং জাতির এই শ্রেষ্ট সন্তানদের সম্মান জানাতে ধনধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা দেশত্ববোধক গানের সঙ্গে বিনম্র শ্রদ্ধায় ফুলেল শুভেচ্ছা জানায় স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। বিরুপ আবহাওয়ার কারণে স্কুল মাঠে শিক্ষার্থীদের ওই ডিসপ্লেটি করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে প্রধান শিক্ষকের পীড়াপিড়িতে এক পর্যায়ে স্কুলের ক্লাসরুমের ভেতরে স্বল্প পরিমাণ জায়গায় ডিসপ্লেটি করে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। ডিসপ্লের সামনে জায়গা না থাকায় এবং অতিথিদের আসন ডিসপ্লের নিকটে হওয়ায় ডিসপ্লেটি দৃষ্টিকটু মনে হয়েছে ভিডিওতে।’
উল্লেখ্য, একজন অতিথির পক্ষে কোনোভাবেই জানা সম্ভব নয় যে, স্টেজে কি পারফর্ম হবে।
এই ভিডিওটি নিয়ে কিছু কুচক্রী মহল জাতীয় সংসদের একজন সদস্যের সম্মান ক্ষুন্ন করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির সঙ্গে মাননীয় সংসদ সদস্যের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এই ফুলেল শুভেচ্ছার দিক নির্দেশনা দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক (বিএনপি সমর্থিত) শাহজাহান কবীর। ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বিএনপি থেকে নির্বাচিত স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল হাসান। কৌশলগত কারনে তিনি অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন ভবনের উদ্বোধন করতেই সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম মনির উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
ভেন্না পাতার চেয়েও খারাপ টিনের ছাপড়া ছিল চৌগাছা উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের এবিসিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের। "বিদ্যানন্দিনী প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার সেটি পাকা করে দেওয়ায় বাচ্চারা প্রখর তাপ আর ঝড়বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাবে। সোনার টুকরা ছাত্রছাত্রীরা খুশী, অভিভাবকগণ, শিক্ষক শিক্ষিকাবৃন্দ খুশী। যে স্কুল ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ২০১৮ তে এসে আজকে বিদ্যানন্দিনী জননেত্রী শেখ হাসিনা'র কল্যাণে পাকা দালান পেল সেইরকম দিনে এসেও কেউ এটা নিয়ে কু-রাজনীতি করতে পারে এটা সত্যিই লজ্জাজনক"। ভিডিওটির কারণে কারো মনে অযাচিতভাবে আঘাত দিয়ে থাকলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত!'