সমুদ্রপথে হজে যাওয়ার সম্ভাব্যতা যাচাই হচ্ছে

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

পঞ্চশ-ষাটের দশকে ভারতের মুম্বাই থেকে, এমনকি বাংলাদেশ থেকে আশির দশকেও জাহাজে চড়ে সৌদিআরব গিয়ে হজ পালন করতেন মুসলমানরা। সময়ের স্রোতের সঙ্গে সমুদ্রপথের দূর যাত্রা হ্রাস পেলেও এখন পর্যন্ত বাণিজ্যিক জাহাজের কদরে ভাটা পড়েনি। নতুন করে বাংলাদেশ থেকে জাহাজে চড়ে সমুদ্রপথে হজে যাওয়ার সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করছে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফের যদি সমুদ্রপথে জাহাজে চড়ে সৌদি আরব গিয়ে হজ করার পথ চালু করা যায়, এটি বড় ব্যাপার হবে বাংলাদেশের জন্য। আকাশপথ থেকে তুলনামূলক কম খরচে হজ পালনে যেতে পারবে মানুষ। এখন আধুনিক গতির জাহাজে করে সর্বোচ্চ দশ দিন লাগবে যেতে। আমাদের যত কম খরচ হবে, বেশি লোকজন হজের সুযোগ পাবেন।

জানা গেছে, গত বছরের চেয়ে এবার হজের খরচ বেড়েছে প্রায় দুই লাখ টাকা। ফলে নয় দফা সময় বাড়ানোর পরও নির্ধারিত কোটা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। প্রায় পাঁচ হাজার কোটা ফেরত যাচ্ছে। আগামীতে হজের খরচ আরও বাড়বে- এমন আভাসও দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। সবমিলিয়ে সামনের বছরগুলোতে নির্ধারিত কোটার হজযাত্রী পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এমন বাস্তবতায় সমুদ্রপথে হজে যাওয়া চালু করা গেলে একটি বড় ব্যাপার হবে বাংলাদেশের জন্য।

এ বছর হজের খরচ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ বিমান ভাড়া। এ বিষয়ে হজ এজেন্সিগুলো সরকারের কাছে আবেদন নিবেদন করেও কোনো লাভ হয়নি। ধর্ম মন্ত্রণালয় বিমান মন্ত্রণালয়কে বলেও কোনো সুরাহা হয়নি। হজের ব্যয় কমাতে পারেনি তারা। এমন প্রেক্ষাপটে আলোচনায় আসে সমুদ্রপথে হজে যাওয়ার প্রস্তাব। কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে এমন প্রস্তাব দেয়।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সৌদি আরবের জেদ্দা বন্দরে যেতে জাহাজে সময় লাগবে ১০ দিন। যাওয়া-আসা এবং হজের আনুষ্ঠানিকতা মিলিয়ে একজন হজযাত্রীর মোট সময় লাগবে ৩৫-৪০ দিন। জাহাজে গেলে উড়োজাহাজের চেয়ে এক থেকে দেড় লাখ টাকা খরচ কম হবে।

তাদের আবেদন নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মতামত এলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে তা পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া পেলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সৌদি সরকারের কাছে প্রস্তাবটি পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।

এ প্রসঙ্গে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মতিউল ইসলাম  বলেন, সেটা খুবই প্রাথমিক স্তরে রয়েছে। কাছাকাছি সময়ে তা বাস্তবায়ন করার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। জাহাজে করে বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রার বিষয়ে যে আলোচনা হচ্ছে, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করছে।

উল্লেখ্য, চলতি বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের খরচ ধরা হয় ছয় লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকা। বেসরকারিভাবে সর্বনিম্ন খরচ ধরা হয় ছয় লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। হজ প্যাকেজের ১৬ ধাপের মধ্যে মোটা দাগে বিমান ও বাড়ি ভাড়ার পেছনে বেশি অর্থ ব্যয় হয়। এর মধ্যে বিমান ভাড়া এক লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা এবং মক্কা ও মদিনায় বাড়ি ভাড়া বাবদ দুই লাখ চার হাজার ৪৪৪ টাকা খরচ হয়। এ দুই খাতের মোট খরচ দাঁড়ায় চার লাখ চার হাজার টাকা।

অথচ মন্ত্রণালয় ও হজ এজেন্সির বাণিজ্যিক বিশেষ সুবিধার বিষয়টি মাথায় রেখে এমন উদ্যোগ নিতে পারেনি মন্ত্রণালয়। কারণ, মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট অনেক কর্মকর্তা ও এজেন্সির মালিক হজের সময় মক্কা-মদিনায় আবাসন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, হজের খরচ দুটি অংশে বিভক্ত। একটি সৌদির অংশ, অন্যটি বাংলাদেশের অংশ। সৌদি অংশে রয়েছে- বাড়ি ভাড়া, যার পেছনে ব্যয় দুই লাখ চার হাজার ৪৪৪ টাকা; মুজদালিফায় মোয়াল্লেম সেবা এক লাখ ৬০ হাজার ৬৩০ টাকা; জেদ্দা-মক্কা-মদিনা ও আল-মাশায়েরে পরিবহন ব্যয় ৩৫ হাজার ১৬২ টাকা; উন্নত মানের বাস সার্ভিসের পেছনে দুই হাজার ৮৩৯ টাকা; জমজম পানির পেছনে ৪২৫ টাকা; পবিত্র হজের পাঁচ দিন মিনা, আরাফাত ও মক্কা রুট সার্ভিস (লাগেজ পরিবহন) ৫৮৭ টাকা; মিনা, আরাফাত ও মুজদালিফায় যাতায়াতের জন্য অতিরিক্ত বাস ভাড়া ১৯ হাজার ৩৩৩ টাকা, দেশে প্রত্যাবর্তনকালে লাগেজ পরিবহন ব্যয় ৮৫১ টাকা, ভিসা ফি পাঁচ হাজার ৮১৭ টাকা, স্বাস্থ্যবিমা বাবদ সৌদি সরকারের ফি ৯৪৬ টকা। সবমিলিয়ে চার লাখ ৩৩ হাজার ৭৩৯ টাকা।

বাংলাদেশ অংশের খরচের মধ্যে রয়েছে- বিমান ভাড়া এক লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা। এর মধ্যে মূল বিমান ভাড়া এক লাখ ৮৩ হাজার ৯১০ টাকা এবং এজেন্ট ফি দুই হাজার ৬৫০ টাকা। আইডি কার্ড, লাগেজ ট্যাগ, আইটি সার্ভিস, মক্কা রোড সার্ভিস মিলিয়ে ৮০০ টাকা; হজযাত্রীদের কল্যাণ তহবিল বাবদ ২০০ টাকা; প্রশিক্ষণ ফি ৩০০ টাকা; খাবার খরচ ৩৫ হাজার টাকা এবং হজ গাইড ফি ১৫ হাজার ১৭৮ টাকা।

সরকারি ও বেসরকারি উভয় প্যাকেজের সঙ্গে যুক্ত হয় কোরবানির খরচ। যদিও পরবর্তী সময়ে সরকারি ও বেসরকারি দুই প্যাকেজেই ১১ হাজার ২৭৫ টাকা করে কমানো হয়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
‘২৬ লাখ টাকা’র প্রধান শিক্ষক নাজমার শাস্তি দাবি আনন্দময়ী স্কুল ছাত্রীদের - dainik shiksha ‘২৬ লাখ টাকা’র প্রধান শিক্ষক নাজমার শাস্তি দাবি আনন্দময়ী স্কুল ছাত্রীদের জানুয়ারিতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha জানুয়ারিতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা ইএফটিতে বেতন: ব্যাংক হিসাব নিয়ে এমপিও শিক্ষকদের অসন্তোষ - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন: ব্যাংক হিসাব নিয়ে এমপিও শিক্ষকদের অসন্তোষ পবিপ্রবিতে গাঁজাসহ ৫ মাদকসেবী আটক - dainik shiksha পবিপ্রবিতে গাঁজাসহ ৫ মাদকসেবী আটক ভর্তিতে লটারি বাতিলের দাবিতে সড়ক আটকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ - dainik shiksha ভর্তিতে লটারি বাতিলের দাবিতে সড়ক আটকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ প্রাথমিকের ১০ম গ্রেডের দাবি সর্বজনীন - dainik shiksha প্রাথমিকের ১০ম গ্রেডের দাবি সর্বজনীন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023598670959473