দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: ভারতীয় উপমহাদেশে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জহিরুদ্দীন মহম্মদ বাবরের জন্মদিন আজ। ১৪৮৩ খ্রিষ্টাব্দে বাবর তুর্কিস্তানের খোকন্দে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা উমর শেখ মির্জা ফরগানার অধিপতি ছিলেন। বাবর ‘বাবুর’ নামেই বেশি জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি ছিলেন মধ্য এশিয়ার তুর্কো-মঙ্গোল বংশোদ্ভূত শাসক। তিনি তৈমুর লংয়ের সরাসরি বংশধর এবং মায়ের দিক থেকে চেঙ্গিস খানের বংশধর। তিনি পানিপথের প্রথম যুদ্ধে দিল্লির লোদি রাজবংশের সুলতান ইব্রাহিম লোদিকে পরাজিত করে এ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। ১৫৩০ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বাবরের মৃত্যুর পর তার ছেলে হুমায়ুন সিংহাসনে আরোহণ করেন।
সম্রাট বাবর আত্মজীবনীমূলক বই বাবরনামা। চাঘতাই ভাষায় রচিত এই বইটি তুজুক-ই-বাবরি নামেও যথেষ্ট পরিচিত। বাবরের জীবন ও ইতিহাস সংক্রান্ত তথ্য আহরণের পক্ষে এই গ্রন্থটি একটি সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও বিশ্বস্ত গ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃত। সাহিত্যমূল্যর দিক থেকেও বইটি উচ্চ প্রশংসিত।
পিতার দিক থেকে আমীর তৈমুর এবং মায়ের দিক থেকে চেঙ্গিজ খানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ১৪৯৪ খ্রিষ্টাব্দে পিতার মৃত্যুর পর বাবর অল্প বয়সে ক্ষমতা লাভ করেন। বারবার রাজ্যহারা হয়ে তিনি মধ্যএশিয়া ত্যাগ করেন এবং ১৫০৪ খ্রিষ্টাব্দে কাবুল দখল করেন। ১৫০৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বাদশাহ উপাধি গ্রহণ করেন। ১৫১১ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে বাবর প্রায় সমগ্র মধ্য এশিয়ার শাসকে পরিণত হন। উজবেক কর্তৃক বিতাড়িত হয়ে তিনি ১৫১৪ খ্রি. কাবুলে ফিরে আসেন।
ভারতীয় উপমহাদেশ অধিকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষে্য বাবর ১৫১৫ খ্রিষ্টাব্দে বাজাউর, সোয়াত, ইউসুফজাই উপজাতিদের পরাজিত করেন ও ১৫১৯-২০ খ্রি. ভিরা, শিয়ালকোট, সাঈদপুর এবং ১৫২২ খ্রি. কান্দাহার দখল করেন। সর্বপরি বাবর ১৫২৬ খ্রিষ্টাব্দে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে লোদী বংশের সুলতান ইবরাহিম লোদীকে পরাজিত করে ভারতে মুগল শাসনের সূচনা করেন।
এসময়ে বাংলার শাসক ছিলেন নাসিরুদ্দীন নুসরত শাহ। বাবরের কাছে পরাজিত হয়ে আফগান নেতারা নুসরত শাহের আশ্রয় প্রার্থী হওয়ায় বাবর বাংলার শাসকের বিরুদ্ধে অভিযানের সিদ্ধান্ত নেন। ১৫২৭ খ্রিষ্টাব্দে বাবর গোগরা নদী পর্যন্ত অগ্রসর হন। তিনি মোল্লা মুহাম্মদ মাজাহার নামক একজন দূতকে নুসরত শাহের কাছে পাঠিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চান। নুসরত স্পষ্ট কোনো উত্তর না পাঠিয়ে দূতকে প্রায় এক বছর নিজ দরবারে রাখেন। নুসরত শাহ নিরপেক্ষতা অবলম্বন করেন এবং ১৫২৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রচুর উপঢৌকনসহ একজন দূতকে বাবরের দরবারে প্রেরণ করেন। বাবর নিরপেক্ষতা প্রদর্শনের জন্য নুসরতের প্রতি সন্তুষ্ট হন এবং বাংলা আক্রমণের পরিকল্পনা ত্যাগ করেন।
আফগান নেতাগণ বাবরের বিরুদ্ধে সৈন্য পরিচালনা করে ব্যর্থ হন। বাবর ত্রিহুত অধিকার করে গঙ্গা ও গন্ডকের সঙ্গম স্থানে বীবন ও বায়েজীদের অধীন আফগানদের পরাজিত করে বাংলার সৈন্যদলের সম্মুখীন হন। বক্সারের শিবির থেকে বাবর গোগরা নদীর তীর ত্যাগ করার জন্য নুসরত শাহের কাছে দূত পাঠান। নুসরত উত্তর দিতে একমাস দেরি করায় বাবর পুনরায় দূত পাঠান। অবশেষে যুদ্ধ শুরু হয় এবং বাংলার পদাতিক, অশ্বারোহী ও নৌবাহিনী যথেষ্ট বীরত্ব প্রদর্শন করেও বাবরের রণকৌশলের কাছে পরাজিত হয়। এ বিজয়ের দ্বারা গোগরা নদীর পূর্বতীরে বাবরের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। কূটনৈতিক কারণে বাবর বিহার ও অযোধ্যা জয়ের পূর্বে বাংলা আক্রমণ করা সমীচীন মনে করেননি। এসময়ে বাবরের শর্তাবলি বাংলার সুলতান মেনে নেন। এর ফলে মুগলদের সরাসরি আক্রমণ থেকে বাংলা রক্ষা পায়। ১৫৩০ খ্রিষ্টাব্দে বাবরের মৃত্যুর পর বাংলা অঞ্চল আপাতত মুগল আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়।