দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক : বাক্স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অর্থ কী এ ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসন ও প্রচলিত ব্যবস্থাকে প্রকৃত শিক্ষিত করা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
গতকাল বৃস্পতিবার এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে দায়ের করা এফআইআর খারিজের রায়ের পর্যবেক্ষণে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এ এস ওকা ও উজ্জ্বল ভূঁইয়ার ডিভিশন বেঞ্চ এ সব কথা বলেন।
এর আগে দুটি হোয়াটসঅ্যাপ বার্তাকে কেন্দ্র করে মহারাষ্ট্রের কোলাপুরের একটি কলেজের অধ্যাপক জাভেদ আহমেদ হাজামের বিরুদ্ধে সম্প্রীতি নষ্ট করার অভিযোগ আনা হয়। অধ্যাপক জাভেদের বাড়ি জম্মু-কাশ্মীরে। তিনি কোলাপুরের এক কলেজে তিনি অধ্যাপনা করেন।
এই রায়ের সঙ্গেই বিচারপতিরা আরো বলেন, ‘এখন সময় এসেছে আমাদের পুলিশ বাহিনীকে শিক্ষিত করার। সংবিধান কী বলছে, কোনো ক্ষোভ প্রদর্শন ন্যায়সংগত, বাক্সংযমের সীমা কোথায়, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ কেমন, সেসব বিষয়ে আমাদের পুলিশ প্রশাসন ও ব্যবস্থাকে প্রকৃত শিক্ষিত হতে হবে।’
এর আগে ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে দাখিল করা এফআইআর খারিজের আবেদন নাকচ করে বোম্বে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন, গতকাল তা বাতিল করেন সুপ্রিমকোর্ট।
বোম্বে হাইকোর্ট তার আবেদন নাকচ করে ‘অপরাধ’ বহাল রাখায় অধ্যাপক হাজাম সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। বোম্বে হাইকোর্ট ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ১০ এপ্রিল তার এফআইআর খারিজের আবেদন বাতিল করেছিলেন।
জানা যায়, অধ্যাপক হাজামের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০২২ খি্রষ্টাব্দের ১৩ ও ১৫ আগস্ট তিনি শিক্ষক ও অভিভাবকদের এক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দুটি বার্তা পাঠান। তার একটিতে লেখা ছিলো, ‘৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীরের কালো দিন। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল হয়েছে। আমরা খুশি নই।’
হাজামের অন্য বার্তায় লেখা হয়, ‘১৪ আগস্ট পাকিস্তানের শুভ স্বাধীনতা দিবস।’ এই দুই বার্তা পাঠানোর কারণে কোলাপুর পুলিশ অধ্যাপক হাজামের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩ (ক) ধারায় এফআইআর দাখিল করে। ওই ধারা অনুযায়ী ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, জাতি, জন্মস্থান, বাসস্থান নিয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতার জন্ম দেয়া এবং সম্প্রীতি নষ্ট করা অপরাধ বলে গণ্য হয়।
গতকাল রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেন, আইন ও শালীনতা মেনে ক্ষোভ প্রকাশের অধিকার ভারতীয় সংবিধান ১৯ (ক) (১) ধারায় প্রতিটি নাগরিককে দিয়েছে। এটা নাগরিকদের মৌলিক অধিকার। অন্যের ক্ষোভ প্রকাশের অধিকারকে সবার সম্মান জানানো উচিত। এটাই গণতন্ত্র। এই অধিকার রক্ষা হওয়া দরকার।
বিচারপতি ওকা ও ভুঁইয়া বলেন, গণতান্ত্রিক পরিমণ্ডলে ক্ষোভ বা অসন্তোষ প্রকাশ সংগত। তবে তা লাগামছাড়া হতে পারে না। কিছু নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিতই আছে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে আবেদনকারী সেই সীমা মোটেই লঙ্ঘন করেননি। তিনি যা করেছেন, তা নিজস্ব মতপ্রকাশ। সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ নিয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ১৫৩ (ক) ধারায় অপরাধ গণ্য হওয়ার মতো কিছু করেননি। সেই মানসিকতাও তার ছিলো না। তিনি তার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মাত্র। সেই অধিকার ভারতের সংবিধানই তাকে দিয়েছে।