গতবছরের শেষ দিকে প্রকাশিত গণবিজ্ঞপ্তি অনুসারে রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া কলেজে প্রভাষক পদে নিয়োগের সুপারিশ পান চার প্রার্থী। কিন্তু নিয়োগ সুপারিশ পেলেও তাদের যোগদান করানো হয়নি। কলেজটির অধ্যক্ষ ফরিদ মিয়া তালুকদার সেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তে সুপারিশ পেয়েও নিয়োগবঞ্চিত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন সুপারিশপ্রাপ্তরা। অপরদিকে কলেজটি সরকারিকরণের ঘোষণা হওয়ায় নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, তাই সুপারিশপ্রাপ্তদের যোগদান করানো হয়নি বলে এক লিখিত বক্তব্যে দাবি করেছে কলেজে সভাপতি ভদন্ত খেমাচারা মহাথের।
জানা গেছে, গত ২৪ জানুয়ারি রাঙ্গামাটি জেলাধীন রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া কলেজে পরিসংখ্যান বিষয়ে প্রভাষক পদে মো. মিজানুর রহমান চৌধুরী, ইংরেজি বিষয়ের প্রভাষক পদে মো. কামাল হোসেন, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ের প্রভাষক পদে মাহমুদুল হাসান রিয়াদ এবং আইসিটি বিষয়ের প্রভাষক পদে আফিয়া খাতুন নিয়োগের সুপারিশ পান। কিন্তু যোগদান করতে কলেজের অধ্যক্ষ ফরিদ মিয়ার সাথে যোগাযোগ করলে তাদের নিয়োগপত্র দেয়া হয়নি।
সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থী মো. মিজানুর রহমান চৌধুরী দৈনিক শিক্ষাকে জানান, ২৪ জানুয়ারি এনটিআরসিএ প্রকাশিত ফলের ভিত্তিতে সুপারিশ পেয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া কলেজে গিয়ে অধ্যক্ষ ফরিদ মিয়া তালুকদারের সাথে দেখা করেন। তখন সুপারিশপত্রসহ যোগদান পত্র দাখিল করে যোগদান করতে চাইলে তিনি যোগদান করান নি। তবে, কি কারণে যোগদান করতে দিবেন না সে বিষয়ে অধ্যক্ষ কিছু জানাননি। অধ্যক্ষের কাছে যোগদান না করানোর কারণ লিখিত দেয়ার জন্য বার বার অনুরোধ করলেও তা দেননি তিনি। আমাদের যোগদানপত্রের রিসিভ কপি ও দেননি।
তিনি আরও জানান, সেদিনই অনেক অনুনয় বিনয় করে স্যারের কাছে সুপারিশপত্রসহ যোগদান পত্র রেখে আসি। পরবর্তীতে সভাপতির সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে তার কাছে ও সুপারিশপত্র সহ যোগদানপত্রের কপি রেখে আসি। প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত কমিটি আছে। পদটি ও শূন্য পদ এবং এমপিওভুক্ত। এরপরেও কি কারণে নিয়োগ দিতে অসম্মতি জানান সে বিষয়ে অধ্যক্ষ লিখিত কোন বক্তব্য দেননি। অধ্যক্ষ আমিসহ সুপারিশপ্রাপ্ত অন্যান্য সবাইকে এনটিআরসিএর সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
সুপারিশপ্রাপ্তরা দৈনিক শিক্ষাকে জানান, এনটিআরসিএর সাথে যোগাযোগ করলে তারা সুপারিশপত্র নিয়ে যোগদান করতে বলেন অথবা কি কারণে নিয়োগ দিবে না সে বিষয়ে অধ্যক্ষের কাছ থেকে লিখিত নিয়ে যেতে বলেন। তাই পুনরায় গত ৯ ফেব্রুয়ারি ডাকযোগে সুপারিশপত্রসহ যোগদানপত্রের অনুলিপি পাঠাই। তারপরেও অধ্যক্ষ মহোদয় আমাদেরকে কোনো নিয়োগপত্র দেননি। গত ১০ ফেব্রুয়ারি সুপারিশপ্রাপ্তদের যোগদান করিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। বিজ্ঞপ্তিটি নিয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানে গেলেও নিয়োগপত্র দেয়া হয় নি। এরপর গত ১৬ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এলাকার চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় সভাপতি কাছ থেকে এনটিআরসিএর চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো একটি চিঠির অনুলিপি আমরা সংগ্রহ করি। তা থেকে জানতে পেরেছি, শূন্য পদের চাহিদা দেয়ার পরে এবং নিয়োগ সুপারিশের ফল প্রকাশের কিছুদিন আগে কলেজটি সরকারিকরণের সম্মতি পাওয়া গেছে। যা সরকারিকরণের প্রথম পর্যায়। কলেজটির ডিড অব গিফট বা সরকারিকরণের প্রজ্ঞাপন জারি হয় নাই বলে দৈনিক শিক্ষাকে জানান সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীরা।
তারা আরও জানান, সভাপতির পাঠানো চিঠির অনুলিপিটি নিয়ে সরাসরি এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান এস এম আশফাক হুসেনের কাছে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি জমা দেয়া হয়। এ প্রেক্ষিতে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি এনটিআরসিএ থেকে প্রতিষ্ঠান প্রধানতে চিঠি পাঠিয়ে যোগদান করিয়ে নিতে বলা হয়। এনটিআরসিএ পাঠানো চিঠির অনুলিপি নিয়ে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি কলেজে গেলে অধ্যক্ষ ও সভাপতির বলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে চিঠি না দিলে নিয়োগ দিতে পারবেন না। পরে গত ২০ ফেব্রুয়ারি এনটিআরসিএ থেকে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ২০ নভেম্বর জারি করা একটি চিঠি নিয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানের সাথে দেখা করি। চিঠিতে বলা হয়, সরকারিকরণের প্রক্রিয়াধীন যে সকল কলেজে এনটিআরসিএ কর্তৃক শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে সেসব নির্বাচিত শিক্ষকদের নিয়োগ দিয়ে সরকারিকরণের জন্য পরিদর্শন প্রতিবেদনে তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করাতে বলা হয়েছিল। এরপর অধ্যক্ষ ও সভাপতি বলেন আমাদের নাম উল্লেখ করে শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে আপডেট লিখিত নিতে হবে। তা না হলে নিয়োগ দেয়া সম্ভব নয়। প্রার্থীরা আরও জানান, এ পরিপত্র অনুযায়ী ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে নিয়োগ দিতে পারলে আমাদের নিয়োগ দিতে কোনো বাধা নেই। অধ্যক্ষ ও সভাপতি হয়রানি করছেন। তিন মাসেও তারা কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি।
এ বিষয়ে বাঙ্গালহালিয়া কলেজের অধ্যক্ষ ফরিদ মিয়া তালুকদার দৈনিক শিক্ষাকে জানান, কলেজ সরকারিকরণে সম্মতি পেয়েছি তাই নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা আছে। প্রতিষ্ঠানের ডিড অব গিফট হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তা হয়নি বলে জানান অধ্যক্ষ। ডিড অব গিফটের পর নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা জারি হয় বিষয়টি অধ্যক্ষকে জানালে তিনি দাবি করেন সরকারিকরণের সম্মতির সাথে সাথে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
অধ্যক্ষ প্রতিবেদককে আরও বলেন, বিষয়টি ‘ম্যানেজ’ হয়ে গেছে। কি প্রেক্ষিতে ‘ম্যানেজ’ হয়ছে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, ‘এনটিআরসিএর চেয়ারম্যানের সাথে বিষয়টি ম্যানেজ হয়েছে, উনার কাছ থেকে বিষয়টি জানুন। এখন মেহমান আছে কথা তাই কথা বলতে পারবো না।’