মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থা সরকারিকরণ দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিন দিন ধর্মঘট কর্মসূচির ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)। আগামী ১১ জুন থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত সব বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষক সংগঠনটির নেতারা। এছাড়া চলতি জুন মাসের শেষাংশে জেলায়-জেলায় মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন, এমপি ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়, লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তারা। আর এরপরও সরকারের পক্ষ থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণের ঘোষণা না এলে আগামী ১১ জুলাই থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বিটিএ।
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সংগঠনটি। সংবাদ সম্মেলনে বিটিএ নেতারা আসন্ন ঈদুল আজহার আগেই এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের শতভাগ উৎসব ভাতা দেয়ারও দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিটিএর সভাপতি অধ্যক্ষ মো. বজলুর রহমান মিয়া। পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ।
লিখিত বক্তব্যে সরকারিকরণ দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বিটিএর কর্মসূচিগুলো হলো, ১১ থেকে ১৩ জুন সব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট, ১৩ জুন সব জেলা সদরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল, ১৪ থেকে ২০ জুন সরকারিকরণ দাবিতে জেলার-জেলায় সংবাদ সম্মেলন, আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত দাবি আদায়ে জনপ্রতিনিধি ও এমপিদের সঙ্গে মতবিনিময় ও অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের মাঝে লিফলেট বিতরণ। এরপরও সরকার ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণের সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না দিলে আগামী ১১ জুলাই থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়া হয় সংবাদ সম্মেলনে।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক দুরাবস্থার পরিস্থিতিতে সরকারিকরণের দাবি জানানোর যৌক্তিকতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ বলেন, এখনই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণ করতে হবে তা নয়। আমরা চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিক তিনি মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণ করবেন। এর জন্য বেশ সময় এবং বেশ কয়েকটি বাজেট লাগবে তা আমরা জানি। কিন্তু আমরা সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণাটাই চাচ্ছি। আর এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয় সরকারি কোষাগারে জমা নিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণ করতে সরকারের খুব বেশি অর্থ ব্যয় করতে হবে না।
মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণ বলতে কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বোঝানো হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতিতে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মাধ্যমিক শিক্ষা হিসেবে ধরা হয়েছে। আমরা বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল ও প্রচলিতভাবে যে প্রতিষ্ঠানগুলোকে উচ্চমাধ্যমিক কলেজ বলা হয় সে প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারিকরণ দাবি করছি। আর প্রাথমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকার ইতোমধ্যে সরকারি করেছেন।
বিটিএ নেতারা বলছেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মাত্র ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা, ১ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ও ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। একই কারিকুলামে একই সিলেবাসে পাঠদান করিয়েও সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধানদের থেকে এক ধাপ নিচে বেতন দেয়া হচ্ছে। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাওয়ার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। তাছাড়া বিগত কয়েক বছর যাবত অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কেটে নেয়া হচ্ছে। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করা হলেও প্রতিকার পাওয়া যায়নি। বর্তমান সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থা স্মার্ট করতে প্রয়োজন স্মার্ট শিক্ষক। তাই স্মার্ট শিক্ষক পেতে শিক্ষায় বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণের বিকল্প নেই।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।