পর্ব-১সরকারিকরণ : প্রত্যাশা প্রাপ্তি বাস্তবতা

জহুরুল ইসলাম |
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় সরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত কলেজগুলো হলো ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী কলেজ। বাকি সব কলেজই ছিল বেসরকারি। সরকারিকরণের মাধ্যমে সেগুলো সরকারি কলেজে রূপান্তরিত হয়েছে। ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে সিলেটের মুরারিচাঁদ কলেজ (এমসি কলেজ), ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে রংপুর কারমাইকেল কলেজ, ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজ, ঢাকার বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ ও ইডেন কলেজ, ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে খুলনার বিএল কলেজ, ১৯৬৮-তে যশোরের এম এম  কলেজ, কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজ, ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ, বগুড়ার আজিজুল হক কলেজ, পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ, ঢাকার কবি নজরুল কলেজ, দিনাজপুর কলেজ, নোয়াখালী কলেজ, রাজশাহী মহিলা কলেজ, চট্টগ্রাম মহিলা কলেজ এবং ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে পটুয়াখালী কলেজ সরকারিকরণ করা হয়।
 
স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু কলেজ এবং ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে এম এম আলী কলেজ, টাঙ্গাইল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারিকরণ করা হয়। ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন সরকার মহকুমা সদরে অবস্থিত বেসরকারি কলেজগুলো সরকারিকরণ করে। ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বিক্ষিপ্তভাবে বেশ কিছু বেসরকারি কলেজ সরকারিকরণ করা হয়। পরবর্তীতে সুদীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেসব জেলা সদরে সরকারি মহিলা কলেজ নেই, সেসব জেলা সদরে একটি করে মহিলা কলেজ সরকারি করে নারী শিক্ষার প্রসার ঘটান। আবার ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪৬টি বেসরকারি কলেজ সরকারিকরণ করেন এবং ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে পুনরায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসায় ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে সরকারি স্কুল ও কলেজবিহীন উপজেলাসমূহে একটি করে স্কুল ও একটি করে কলেজ এবং ১৭টি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজকে সরকারিকরণ করে তিনি ছাত্র-শিক্ষক সমাজের মনে স্থান করে নিয়েছেন।

 

 

স্বাধীনতার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময় থেকে সরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত ও সরকারিকরণের মাধ্যমে সৃষ্ট সরকারি কলেজ শিক্ষকদের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি--সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করত ডিরেক্টরেট অব পাবলিক ইনস্ট্রাক্টর এবং সবাই শিক্ষক হিসাবে মর্যাদা পেতেন। সস্তা জনপ্রিয়তার আশায় তৎকালীন সরকার সরকারি কলেজ শিক্ষকদের ক্যাডারভুক্ত করার উদ্দেশ্যে The Bangladesh Civil Service (Education: General Education) Composition and Cadre Rules’1980 প্রণয়ন করে শিডিউল পদগুলো সৃজন করা হয়। সরকারিকৃত কলেজ শিক্ষকদের আত্তীকরণের জন্য Bangladesh civil service (Education General Education) Composition and Cadre rules 1980-এর ১০ ধারা অনুসারে মহামান্য রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১৩৩ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে Teachers and Non-teaching staff of Nationalized Colleges (Directorate Public Instruction) Absorption Rules’ 1981 তৈরি করে SRO. 93-2/81  তারিখ: ২৫/০৩/১৯৮১ খ্রি-এ Notification হিসেবে জারির মাধ্যমে জন্মলগ্ন থেকে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের পার্শ্ব প্রবেশ শুরু হয়।

 
এই The Bangladesh Civil Service (Education: General Education) Composition and Cadre Rules 1980 অনুসারে সৃষ্ট ডিরেক্টর অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন ১টি, জয়েন্ট ডিরেক্টর অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন ১টি, ডেপুটি ডিরেক্টর অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন (DDPI)  ১টি, অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন (ADPI) ১টি, ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন (DADPI) ১টি, শিক্ষা অফিসার ১টি, বিশেষজ্ঞ (অ্যাডাল্ট এডুকেশন) ১টি, প্রিন্সিপাল (অনার্স কলেজ) অ্যান্ড টিচারস ট্রেনিং কলেজ (টি টি কলেজ) অফারিং এম এড ১৩টি, প্রিন্সিপাল (নন-অনার্স কলেজ) ৩টি, ডিরেক্টর, বাংলাদেশ এডুকেশন এক্সটেনশন অ্যান্ড রিসার্চস ইন্সটিটিউট (BEERI) ১টি, প্রিন্সিপাল টি টি কলেজ (নন-অফারিং এমএড) ৩টি, প্রিন্সিপাল আলিয়া মাদরাসা ২টি, হেড মাওলানা, আলিয়া মাদরাসা ১টি, প্রিন্সিপাল, ইন্টারমিডিয়েট কলেজ অ্যান্ড রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল ২টি, ভাইস-প্রিন্সিপাল (নন-অনার্স কলেজ) ৪টি, ভাইস-প্রিন্সিপাল (টি টি কলেজ) ৪টি, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর (অনার্স অ্যান্ড জেনারেল কলেজ) ১৬টি, ডেপুটি ডিরেক্টর, বিইইআরআই ১টি, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ১৭৮টি, কনসুলার ২টি, বিশেষজ্ঞ, বিইইআরআই ১৭টি, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর (আলিয়া মাদরাসা), অ্যাডিশনাল হেড মাওলানা, সুপারিন্টেন্ডেন্ট, হাই মাদরাসা ৪টি, প্রিন্সিপাল, রাজশাহী গভ. মাদরাসা ১টি, লেকচারার অফ কলেজেস ইনক্লোডিং টিটি কলেজেস, আলিয়া মাদরাসা, এএফই, কলেজ অফ আর্টস অ্যান্ড ক্রাফট, হোম ইকোনোমিকস কলেজ ৪৬২টি, অ্যাসিস্ট্যান্ট মৌলভী (আলিয়া মাদরাসা) ৫টি ডেপুটেশন, লিভ, ট্রেইনিং রিজার্ভ ১০ শতাংশ  ৪৭টি, ইন্সপেক্টর অব স্কুল (আই.এস) (ইন্টারচেন্সএবল উইদ এডিপিআই) ৪টি, হেডমাস্টার (গভ. সেকেন্ডারি স্কুল) ৩১টি, হেডমিস্ট্রেস (গভ. সেকেন্ডারি স্কুল) ১৬টি, সুপারিন্টেন্ডেন্ট, প্রাইমারি ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ২৪টি, ডিস্ট্র্রিক্টস এডুকেশন অফিসার ১৭টি, ডিস্ট্র্রিক্টস ইন্সপেক্টর অফ স্কুলস ১৭টি, অ্যাসিস্ট্যান্ট ইন্সপেক্টর অফ স্কুলস ৪টি, অ্যাসিস্ট্যান্ট ইন্সপেক্টর অফ স্কুলস ০৪টি, অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার (গভ. সেকেন্ডারি স্কুলস) ৩৫টি, অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিসট্রেস (গভ. সেকেন্ডারি স্কুলস) ২৪টি, অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারিন্টেন্ডেন্ট, প্রাইমারি ট্রেনিং ইন্সটিটিউট  ৪৭টি, সর্বমোট ১০১৮টি সিডিউল পদ সৃষ্টি করা হয়েছিল যার মধ্যে ৭১২টি পদ ছিল আত্তীকৃতদের পদ। ইতোমধ্যেই ১০১৮টি পদ থেকে ২২৭টি পদ বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে। বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা কথায় কথায় ক্যাডার কম্পোজিশন অ্যাক্টের কথা বলেন, কিন্তু এই অ্যাক্ট অনুসারে সৃষ্ট পদগলো যে হাতছাড়া হয়ে গেছে, সেগুলো ফিরে পেতে কোনো তৎপরতা নেই, আছে শুধু অন্যকে অধিকার পেতে না দেয়ার অপতৎপরতা।         
 
১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে মহকুমা সদরে অবস্থিত বেসরকারি কলেজগুলোকে সরকারিকরণের মাধ্যমে সরকারি কলেজের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দের ক্যাডার কম্পোজিশন রুলস-এর মাধ্যমে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের জন্ম হয়। সরকারিকৃত কলেজ শিক্ষকদের আত্তীকরণের জন্য Bangladesh civil service (General Education) Composition and Cadre rules 1980  এর ১০ ধারা অনুসারে মহামান্য রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১৩৩ অনুচ্ছেদের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ÔTeachers and Non-teaching staff of Nationalized Colleges (Directorate Public Instruction) Absorption Rules’ 1981 তৈরি করে SRO. 93-2/81  তারিখ: ২৫/০৩/১৯৮১খ্রি. এ Notification হিসেবে জারির মাধ্যমে জন্মলগ্ন থেকে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের পার্শ্বপ্রবেশ শুরু হয়। এই বিধিমালার বলে আত্তীকৃত শিক্ষকগণ স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ক্যাডার মর্যাদার অধিকারী হয়েছেন এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে তৎকালীন সরকার বেসরকারি কলেজ সরকারিকরণের প্রক্রিয়া গ্রহণ করায় নতুন করে ’Teachers and Non-teaching staff of Nationalized Colleges (Directorate Public Instruction) Absorption Rules’,1985 এর খসড়া তৈরি করা হয়, তৈরিকৃত বিধি বাস্তবায়নে গড়িমসি করায় এ এইচ এম আমির হোসেন, সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা ও মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও শিক্ষা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ, ঢাকা-কে বিবাদী করে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। এই রিট পিটিশনে রাষ্ট্রপক্ষ হেরে যায় এবং আপিল বিভাগে ওই রায়ের বিপরীতে আপিল করেন। উক্ত আপিলেও রাষ্ট্রপক্ষ হেরে যায় এবং উপরোক্ত রায়ের আলোকে জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারী আত্তীকরণ বিধিমালা ১৯৯৮ তৈরি করে  ১৯৯৮ খিষ্টাব্দের ২৬ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হয়। সে সময় ও তার পরবর্তী সময়ে বেসরকারি কলেজ সরকারিকরণ হলে শিক্ষক-কর্মচারীগণ এই বিধিমালা দ্বারা আত্তীকৃত হতেন এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ক্যাডার মর্যাদা পেতেন।
 
 
জহুরুল ইসলাম : সভাপতি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি, সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতি (সকশিস)
 
[দৈনিক আমাদের বার্তায় ধারাবহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। আজ প্রথম পর্ব]

 

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় - dainik shiksha হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে - dainik shiksha সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড - dainik shiksha মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027780532836914