সরকারিকৃত কলেজে বেসরকারি বেতন, হাইকোর্টের আদেশ

মুরাদ মজুমদার |

সদ্য সরকারিকৃত একটি কলেজের ২৭ জন শিক্ষককে বেসরকারি আমলের মতোই বেতন-ভাতা দেওয়ার অন্তবর্তীকালীন আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বেসরকারি আমলের পদ-পদবি ও বেতন-ভাতা বহাল রাখার নির্দেশনা কেন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন।  

বর্তমানে সারাদেশের নতুন সরকারিকৃত কলেজের জন্য ২০১৮ বিধি অনুযায়ী জনবল আত্তীকরণ হচ্ছে। কিন্তু সদ্য সরকারিকৃত রাজধানীর লালমাটিয়া মহিলা কলেজের রিটকারী ২৭ জন শিক্ষকের জন্য আদালত এমন আদেশ দিয়েছেন। এই আদেশে ২০১৮ বিধির কয়েকটি ধারা অকার্যকর হবে।

জানা যায়, লালমাটিয়া কলেজের মোট শিক্ষক ১৩৪ জন। তাদের মধ্যে ৯৩ জন ২০১৮ বিধি অনুযায়ী বেতন-ভাতা নিচ্ছেন। তারা নিজেদের বঞ্চিত মনে করছেন না। ১১ জন অবসরে গেছেন। কিন্তু বাদবাকীরা রিট করেছেন। রিটের শুনানি শেষে অন্তবর্তীকালীন আদেশ ও রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। 

গত ৮ মার্চ হাইকোর্টের বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান এই আদেশ দেন।

জানা গেছে, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত কলেজটির ২৭ জন শিক্ষক যে হারে বেতন-ভাতা পেয়েছেন সেই অনুযায়ী তাদের বেতন-ভাতা চালু রাখতে বলা হয়েছে আদেশে। কলেজটি সরকারিকরণের চূড়ান্ত আদেশ জারি হয় ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ৪ জানুয়ারি। কিন্তু কার্যকর হয়  ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ ডিসেম্বর থেকে।  তার আগ পর্যন্ত এই শিক্ষকরা এমপিও ছাড়াও কলেজের নিজস্ব পদ্ধতিতে সহযোগী ও অধ্যাপক পদে পদোন্নতি ও বেতন-ভাতা গ্রহণ করে আসছিলেন। ২০১৮ বিধি অনুযায়ী তাদের বেতন-ভাতা কমে যায়। পদও অবনমন হয়। যদিও এমপিও নীতিমালায় কলেজ শিক্ষকদের জন্য প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপকের পদ রয়েছে। বাকী দুটো—অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ প্রশাসনিক পদ।   

হাইকোর্টের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঢাকার জেলা প্রশাসক, লালামাটিয়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ও হিসাব রক্ষক এবং আইএফআইসি ব্যাংকের ম্যানেজারসহ মোট ৮ জনকে। তাদের অন্তবর্তীকালীন আদেশ বাস্তবায়ন করে আদালতকে জানাতেও বলা হয়েছে। 

অধিকতর শুনানির আগ পর্যন্ত অন্তবর্তীকালীন আদেশ বহাল থাকার কথা বলা হয়েছে।  

রুলে লালমাটিয়া কলেজের অধ্যক্ষ ও হিসাবরক্ষককে রিটকারী শিক্ষকদের নিয়োগ, বেতন-ভাতাসহ সব তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছে।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অন্যতম রিটকারী মো. ইয়াকুব হোসেন দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমাদের কলেজ সরকারি হলেও আমরা সরকারি হইনি। বেসরকারি আমলে আমরা যে পদ-পদবিতে ও বেতন-ভাতা পেতাম সেগুলো বহাল রাখার আবেদন জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। 

আরেক রিটকারী শিক্ষক আফরোজা সুলতানা বলেছেন, মামলার বিষয়ে কোনো তথ্য কাউকে দেয়া যাবে না।

নতুন সরকারিকৃত কলেজ থেকে আত্তীকৃত ও সরাসরি বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে নানা বিষয়ে মামলামোকদ্দমা যুগ যুগ ধরে চলছে। এর মধ্যে এই আদেশ নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলে মনে করছেন ক্যাডার সদস্যদের অনেকেই। 

জানতে চাইলে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নব-নির্বাচিত মহাসচিব মো. শওকত হোসেন মোল্যা গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমরা রুল ও আদেশের কথা শুনেছি। বিশ্লেষণ করে দেখবো, আমাদের ক্যাডারের বিপক্ষে যদি কিছু থাকে শুধু তবেই এ বিষয়ে সিনিয়রদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো।  

কলেজ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ছাত্রীদের টিউশন ফি অন্যান্য সরকারি কলেজের মতোই নেয়া হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, বেসরকারি আমলে [২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ ডিসেম্বর] একজন অনার্সের ছাত্রী মাসিক টিউশন ফি ছিলো এক হাজার একশ টাকা। কিন্তু জানুয়ারি মাস থেকে তা মাত্র ২৫ টাকা। একইভাবে মাস্টার্স ও উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির ছাত্রীদের জন্য সরকারি হারে টিউশন ফি নেয়া হচ্ছে।  

কলেজের একটি সূত্র জানায়, ছাত্রীদের কাছ থেকে সরকারি নিয়মের টিউশন ফি নিয়ে বেসরকারি নিয়মে কীভাবে তাদের বেতন-ভাতা দেবে তা বড় চিন্তার বিষয়। কারণ, জাতীয়করণের চূড়ান্ত আদেশ জারির আগেই কলেজে জমাকৃত ৮১ কোটি টাকা ও সব সম্পত্তি সরকারকে হস্তান্তর করা হয়েছে।  

আদালতের আদেশ পেয়ে আইনজীবী ও মহাপরিচালকের সঙ্গে আলাপ শুরু করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024340152740479