সরকারি দপ্তর ও সংস্থাগুলোতে ১৩ থেকে ২০ গ্রেডে বেতনক্রমের অন্তর্ভুক্ত কর্মচারী নিয়োগে প্যানেল পদ সংরক্ষণ অর্থাৎ অপেক্ষমাণ তালিকা প্রণয়নের চিন্তা করছে সরকার। নন-ক্যাডার ও নিম্ন বেতনভুকদের এই আটটি গ্রেডের জন্য তালিকা হবে। প্রতিবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিস্তৃত প্রক্রিয়ায় নিয়োগের পরিবর্তে একবার চূড়ান্ত নিয়োগের পরে বাছাইদের অপেক্ষমাণ রেখে পরবর্তী কিছুদিন সেই প্যানেল থেকে চাহিদা পূরণ করা যাবে। এক মাসের মধ্যে এ বিষয়ে সুপারিশ দিতে কমিটি গঠন করে দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন বাহরাম খান।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, 'সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে ১৩-২০ গ্রেড পদে কর্মচারী নিয়োগ প্যানেল সংরক্ষণসংক্রান্ত বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে' গঠিত সাত সদস্যের কমিটির প্রধান হয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন। সদস্য সচিব একই অনুবিভাগের উপসচিব ড. ফরিদুর রহমান। বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের বাইরের নিয়োগের ক্ষেত্রে এটি নতুন একটি পদক্ষেপ হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নতুন পদ্ধতিতে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বিষয়ে জটিলতা কমানো যাবে। নিযুক্ত কর্মচারীদের কারও চাকরি চলে গেলে, কেউ ভিন্ন চাকরি বা পেশায় চলে গেলে দ্রুত শূূন্যস্থান পূরণ করা যাবে। দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হবে না।
স্ট্যাটিসস্টিকস অব সিভিল অফিসার অ্যান্ড স্টাফ্স ২০২১-এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বেসামরিক প্রশাসনে সরকারি কর্মচারীর পদ রয়েছে ১৯ লাখ ১৩ হাজার ৫৫২টি। এসব পদের বেশিরভাগই তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির। এখন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ৯ লাখ ৫৭ হাজার ৯৬৭ জন। তারা মোট সরকারি কর্মচারীর ৬২ শতাংশের বেশি। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সংখ্যা ২ লাখ ৩১ হাজার ৯২, যা মোট সরকারি কর্মচারীর ১৫ শতাংশ। সরকারি কর্মচারীদের ২০ লাখের মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী প্রায় ১২ লাখ। এত বিপুল সংখ্যক কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে এমন উদ্যোগ অনেক আগেই প্রত্যাশিত ছিল বলে মনে করেন সংশ্নিষ্টরা।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে পাওয়াএক তথ্যে জানা যায়, সেখানে ১৬ গ্রেডের একজন কর্মচারীর বাড়ির স্থায়ী ঠিকানা ভুল থাকার কারণে তাঁর চাকরি চলে যায়। নিয়োগের অল্প দিনের মধ্যে এটি ঘটায় পরবর্তী নিয়োগের জন্য দুই বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল।
জানতে চাইলে গতকাল সোমবার আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, 'দীর্ঘদিন পর্যন্ত প্যানেলের উদ্যোগ নিতে চাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এখন কমিটি হওয়ায় আইনগত বিষয়সহ বিভিন্ন দিক আমরা খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন দেব।'
বিভিন্ন দপ্তরে সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিয়েছেন ইডেন কলেজের ছাত্রী সুরাইয়া আখতার ইভা। এখন বয়স পার হয়ে যাওয়ায় বেসরকারি চাকরির চেষ্টা করছেন। সরকারের নতুন উদ্যোগের বিষয়ে জেনে ইভা বলেন, 'এমন পদ্ধতি থাকলে বেকারদের জন্য খুবই ভালো হয়। আমি এ পর্যন্ত যতগুলো
চাকরির পরীক্ষা দিয়েছি, এমন ব্যবস্থা থাকলে হয়তো আগেই ডাক পেয়ে যেতাম। এতে প্রার্থীদের পরীক্ষার সংখ্যা কমে আসবে, খরচও কমবে।'
এ বিষয়ে গঠিত কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, অর্থ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, লেজিসলেটিভ বিভাগ ও পিএসসির যুগ্ম সচিব মর্যাদার কর্মকর্তাদের সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। তবে কমিটি চাইলে যে কোনো বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিকে সদস্য হিসেবে নিতে পারবে।
কমিটির জন্য নির্ধারিত কার্যপরিধিতে বাংলাদেশ কর্মকমিশনের (পিএসসি) আওতাবহির্ভূত বেতন গ্রেড ১৩ থেকে ২০ পর্যন্ত পদে নিয়োগের লক্ষ্যে অপেক্ষমাণ তালিকা প্রণয়নসংক্রান্ত বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যও পর্যালোচনা করবে কমিটি।