জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সরকারি কলেজগুলোকে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শুক্রবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেল, এ প্রক্রিয়ার প্রথম দফায় রাজধানী ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছে। এখন থেকে এই কলেজগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস অনুযায়ী; শিক্ষার্থীদের ভর্তি ও পরীক্ষা কার্যক্রমও পরিচালিত হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
এটা অংশত আগের ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার প্রক্রিয়া। কেননা, স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা দেওয়া হয় এমন সরকারি কলেজগুলো একসময় কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেই পরিচালিত হতো। তেমন কলেজের সংখ্যা ক্রমে বেড়ে যাওয়ার ফলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর বাড়তি দায়িত্বের চাপ সৃষ্টি হয়। সে চাপ থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখন সেই কলেজগুলোকে আবারও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধীনে ফিরিয়ে নেওয়ার অর্থ হলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়েছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনাগত ব্যর্থতা, অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ পুরোনো। কিন্তু প্রতিকারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, জবাবদিহি নিশ্চিত করা হয়নি। এখন যখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর এই বাড়তি দায়িত্ব ফিরে আসছে, তখন স্বাভাবিক প্রত্যাশা যে এর ফলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজেদের ব্যবস্থাপনাই তো যথেষ্ট দক্ষ ও সবল নয়; সেগুলোর ওপর সরকারি কলেজগুলোর ভার বাড়তি বোঝা মনে হতে পারে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সরকারি কলেজগুলো সম্পর্কে প্রধান অভিযোগ হলো, অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে ঠিকমতো পাঠদান হয় না। গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দক্ষ জনশক্তি ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার উদ্দেশ্য সফল করতে হলে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষাদানের কোনো বিকল্প নেই। যেসব সরকারি কলেজ এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধিভুক্ত হচ্ছে, সেগুলোর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষাদান নিশ্চিত করাই হবে প্রথম কাজ। শিক্ষার্থী ভর্তি, যথাসময়ে পরীক্ষা গ্রহণ, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, ফল ঘোষণা ইত্যাদি সব ক্ষেত্রে সুব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।
সব সরকারি কলেজ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধিভুক্ত হবে না, অধিকাংশই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেই থেকে যাবে। সুতরাং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকেও দৃষ্টি রাখতে হবে। এই প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা-সীমাবদ্ধতা দূর করে একে আরও কার্যকর করে তুলতে হবে।