সরকারি চাকরিতে ৩৫ আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ?

শরিফুল ইসলাম শিপন |

বর্তমানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা পোষ্যদের জন্য ৩২ বছর। সমসাময়িক আন্দোলনগুলোর মধ্যে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর আন্দোলন অন্যতম। আন্দোলনকারীদের দাবি- তাদের পড়াশোনা শেষ করতে অনেক সময় লেগে যায়! এজন্য তারা মূলত সেশনজটকে দায়ী করে থাকেন। তাছাড়া এক্ষেত্রে অনেক উন্নত দেশের উদাহরণও উপস্থাপন করা হয়।

তবে বিষয়টি নিয়ে আমার দ্বিমত রয়েছে। বর্তমান সময়ে আমরা দেখতে পাই- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় সেশনজট নেই বললেই চলে। ফলে ২২-২৩ বছরেই সবার পাঠ চুকে যায়। এরপর সরকারি চাকরির জন্য নিঃসন্দেহে অনেকটা সময় পাওয়া যায়। আর উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের দেশের সরকারি চাকরির তুলনা করাটা বোকামি হবে। উন্নত দেশের লোকজন পড়াশোনা শেষ করে কেউ বসে থাকতে চায় না; তারা কোনো একটা কিছু করে। তারা সরকারি চাকরির জন্য এতটা মুখিয়ে থাকে না, যতটা আমরা থাকি!

আমাদের এখানে ছাত্রছাত্রীদের একটা সাধারণ প্রবণতা থাকে- তাকে সরকারি চাকরি পেতেই হবে! হোক সে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, নার্সিং অথবা সাধারণ ডিগ্রি পাস। তাদের বয়স যতদিন পর্যন্ত ত্রিশ না হবে, ততদিন পর্যন্ত তারা সরকারি চাকরির জন্য চেষ্টা-তদবির চালিয়ে যেতেই থাকে! যেদিন নির্ধারিত বয়স শেষ হয়, সেদিন থেকে অন্যকিছু করার চেষ্টা করতে থাকে! এর ফলে দেখা যায়, এতদিন পর্যন্ত তারা বাবা-মায়ের আয়ের টাকায় বসে বসে খাচ্ছে আর দেশে বেকারত্বের হার বাড়াচ্ছে।

এখন যদি সরকারি চাকরির বয়স বাড়িয়ে ৩৫ বছর করা হয়, তাহলে আরও ৫ বছর তারা তাদের বাবা-মায়ের ঘাড়ে বসে খাবে আর দেশে বেকারত্বের হার তীব্র থেকে তীব্রতর করে তুলবে। কারণ দেশের শিক্ষিত সমাজ চাকরির আবেদনের বয়সসীমা শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্য কিছু করার চেষ্টা করে না! তারমানে ৩০ বছর শেষ হওয়ার পরে যে শিক্ষিত যুবসমাজ একটা কিছু করত, সে যুবসমাজ আরো ৫টি বছর বসে থাকবে!

উন্নত দেশের শিক্ষিত সমাজের মন-মানসিতা ও ধ্যান-ধারণার মতো যদি আমাদের শিক্ষিত সমাজের মন-মানসিকতা হতো, তাহলে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর জন্য হয়ত আন্দোলন করার প্রয়োজন পড়ত না। শিক্ষিত বেকারদের উচিত- সরকারি চাকরি নামক কথিত সোনার হরিণের পেছনে না ছুটে নিজে কিছু করা। তাহলেই দেশ, সমাজ ও নিজেদের উন্নতি হবে।

 

শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025889873504639