মাসিক সমন্বয় সভা, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের প্রয়োজনে প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকতে হয়। তখন রুটিনে থাকা তার ক্লাসগুলো স্বভাবতই সহকারী শিক্ষকগণ পরিচালনা করেন। যদিও তারা নিজেদের নির্ধারিত ক্লাস নিয়েই খুব ব্যস্ত এবং ক্লান্ত। মানসম্মত পাঠদানের নির্ধারিত শিখনফল অর্জনের লক্ষ্যে প্রতিটি পাঠের জন্য শিক্ষকদের লিখিত পাঠপরিকল্পনার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় বাস্তব উপকরণ অথবা হাতে লেখা/আঁকা ছবি, পোস্টার, চার্ট ইত্যাদি তৈরি করতে হয়। শুক্রবার (৩ এপ্রিল) সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানা যায়।
চিঠিতে আরও জানা যায়, মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উপকরণ ও পরিকল্পনাসহ শ্রেণী পাঠদানের পাশাপাশি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আরও নানা রকম কাজ করতে হয়। ভর্তি রেজিস্টার, বই বিতরণ, প্রতি মাসে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভা, অভিভাবক সমাবেশ, মা সমাবেশ, উপবৃত্তির হরেক কাজ, শিক্ষার্থীদের বাড়ি গমন, ক্ষুদে ডাক্তার কার্যক্রম, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, ছাত্র সংসদ নির্বাচনসহ নানাবিধ কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় প্রধানসহ সকল শিক্ষককে।
এছাড়া প্রতি অর্থবছরে সরকারি বরাদ্দ দিয়ে অনুমোদিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজও নেহায়েত কম নয়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে প্রচুর লেখালেখির কাজ। এসব কাজের ব্যস্ততা ও চাপে নিয়মিত মানসম্মত ও প্রত্যাশিত পাঠদান অনেকটাই দুঃসাধ্য হয়ে যায়। আর বিভিন্ন স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণের কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটের দরূন দিশেহারা হয়ে যান সম্মানিত শিক্ষকগণ। ফলে কালেভদ্রে কোন কোন বিদ্যালয়ে দপ্তরি-কাম প্রহরীকে দিয়ে শ্রেণীর শিশু শিক্ষার্থীদের হট্টগোল নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত রাখাকে ফলাও করে সংবাদপত্রে ‘দপ্তরিকে দিয়ে পাঠদান’ শিরোনামে তুলে ধরে শিক্ষকদের গাফিলতি ও অদক্ষতা বলে চালানো হয়। অথচ প্রধান শিক্ষককে যাবতীয় লেখালেখির কাজে সহায়তা করার জন্য একজন অফিস সহকারী নিয়োগ করলে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকগণ যেমন অকারণ কাজের চাপ থেকে রেহান পান তেমনি তারা শ্রেণী পাঠদানে হতে পারেন শতভাগ স্বতঃস্ফূর্ত। একই সঙ্গে সৃষ্টি হবে ৬৬ হাজারেরও বেশি নতুন কর্মসংস্থান।
তাই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করা, অন্যান্য শিক্ষকদের ওপর থেকে পাঠদান বহির্ভূত কাজের বোঝা অপসারণ করে প্রত্যাশিত মানের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত ও অর্ধ লক্ষেরও বেশি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে দেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী পদ সৃষ্টি করার জোর দাবি করছি।
লেখক : আবু ফারুক, সহকারী শিক্ষক, ভাগ্যকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সদর, বান্দরবান।