সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতাল করোনা চিকিৎসায় যুক্ত হচ্ছে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

দেশে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩৬ হাজার ছাড়িয়েছে। আক্রান্ত রোগীদের একটি বড় অংশ বাসা-বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। স্বাস্থ্য বিভাগের ধারণা, প্রায় ৮০ শতাংশ রোগী বাসা-বাড়িতে অবস্থান করছেন। অন্যরা সরকার নির্ধারিত করোনা চিকিৎসার হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কিন্তু প্রতিদিন যে পরিমাণ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, সে তুলনায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করার মানুষের সংখ্যা অত্যন্ত কম।

গত এক সপ্তাহে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। পরিস্থিতি ক্রমেই নাজুক হয়ে পড়ছে। সরকার নির্ধারিত করোনা চিকিৎসার হাসপাতালে আক্রান্তদের সবাইকে সংকুলান করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।এর পরিপ্রেক্ষিতে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা সুবিধা সম্প্রসারণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করেছে। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী, ৫০ এবং তার বেশি থাকা শয্যার প্রত্যেকটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীর চিকিৎসা দিতে হবে।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন দেশের কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা পর্যালোচনা করে একই হাসপাতালে কভিড ও নন-কভিড রোগীদের হাসপাতালের পৃথক অংশে রেখে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রস্তাব অনুযায়ী, কোভিড ও নন-কোভিড রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৫০ শয্যা এবং এর বেশি শয্যাবিশিষ্ট সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড এবং নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য পৃথক ব্যবস্থা চালুর নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ফোকাল পারসন ও অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান খান  বলেন, বর্তমানে করোনা সংক্রমণের পিকটাইম চলছে। সর্বোচ্চ সংক্রমণের এই সময়ে প্রতিদিন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়বে। আক্রান্ত মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার বিষয়টি এখানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে। এটি বিবেচনা করে ৫০ শয্যা ও তার ওপরের সবদেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে সব মানুষকে চিকিৎসার আওতায় আনা সম্ভব হবে।

তিনি আরও বলেন, করোনা সংক্রমণের পর হাসপাতালে বেশকিছু চিকিৎসক-নার্স আক্রান্ত হয়েছেন। কিছু প্রতিষ্ঠান ও ইউনিটে কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়েছিল। অনেক হাসপাতালে করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়া হাসপাতালে রোগী ভর্তি করতে চাইছিল না বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এতে করে অন্য রোগে আক্রান্ত রোগীদের সেবা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি আদেশ জারি করে সাধারণ রোগীদের সেবা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়তে থাকায় নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৫০ শয্যা ও তার ওপরে থাকা শয্যার প্রত্যেকটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড ও নন-কোভিড জোনে ভাগ করা হবে। এতে করে সব ধরনের রোগীরা সেবা পাবেন।

করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবায় চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগের প্রসঙ্গ তুলে ধরে হাবিবুর রহমান খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্বাস্থ্যবিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার বিষয়টি নিশ্চিত করতে তিনি জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগের নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর মাত্র ১০ দিনের মধ্যে দুই হাজার চিকিৎসক ও পাঁচ হাজার ৫৪ জন নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু স্বাভাবিক নিয়মে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে গেলে এক থেকে দুই বছর সময় লেগে যেত। চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাকে আরও শক্তিশালী করতে তিনি নতুন করে আরও ১ হাজার ২০০ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ১ হাজার ৬৫০ জন মেডিকেল টেকনিশিয়ান এবং ১৫০ জন কার্ডিওগ্রাফার নিয়োগের নির্দেশনা দিয়েছেন। এই ৩ হাজার জনবল নিয়োগের বিষয়ে অর্থ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় অনুমোদন প্রদান করেছেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই নিয়োগ প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করা হবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই ফোকাল পারসন আরও বলেন, বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশ্বব্যাপী হিমসিম খাচ্ছে। উন্নত দেশগুলোও আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। উন্নয়নশীল একটি দেশ হিসেবে আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করে যাচ্ছি। অনেকাংশে আমরা সফলও হয়েছি। কিছুক্ষেত্রে মানুষ হয়ত সমালোচনা করছে এবং সেটি করতেই পারে। তাদের সমালোচনা ও পরামর্শকে আমরা গ্রহণ করেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি।

করোনা রোগ নিয়ে গবেষণা ও চিকিৎসার বিষয়ে বলেন, শুধু হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা নিয়েই কিন্তু আমরা বসে নেই। বেশকিছু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান করোনা ভাইরাসের জিনোম সিক্যুয়েন্স (জীবন রহস্য) উন্মোচন করেছেন। প্লাজমা থেরাপি নিয়েও কাজ চলছে। এর বাইরে রেমডিসিভিরসহ আরও বেশকিছু ওষুধ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে বলে জানান তিনি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির - dainik shiksha বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ - dainik shiksha ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024619102478027