কুড়িগ্রামে সদর উপজেলার ভোগডাঙা ইউনিয়নের পরমালী বড়ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খরচে বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর অভিযোগ উঠছে ওই স্কুলের শিক্ষক মোছা. রওশনার বেগমের বিরুদ্ধে। তিনি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙা ইউনিয়নের পরমালী বড়ভিটা গ্রামের মো. রাকিব হাসানের স্ত্রী।
জানা যায়, বিদ্যুৎ মিটারে তার সংযোগ দিয়ে অবৈধভাবে বিদ্যুতের চাহিদা মিটিয়ে আসছেন ওই শিক্ষক পরিবার। একাধিকবার ওই সংযোগ বন্ধ করতে বলা হলেও তা আমলে নেননি তিনি। এমনটাই অভিযোগ তুলেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-সভাপতিসহ স্থানীয় বাসিন্দারা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, পরমালী বড়ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মোছা. রওশনারা বেগমের বাড়ির বিদ্যুৎ বিল ১৪ হাজার টাকা বকেয়া থাকায় সংযোগ কেটে দেয় বিদ্যুৎ অফিস। হঠাৎ সংযোগ কেটে দেয়ার অজুহাত ও বিদ্যালয় কমিটির সাবেক সভাপতি নিজ স্বামীর ক্ষমতার জোরে বিদ্যুৎ সংযোগ নেন তিনি। স্কুলের মিটার থেকে ৫০০ মিটার দুরে নিজ বাড়িতে মাত্র দু-তিনদিনের জন্য বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন এমন শর্তে বিদ্যুৎ সংযোগ নেন। কিন্তু দীর্ঘ ২ মাস অতিবাহিত হলেও সংযোগ বন্ধের কোনো নাম নেই।
গত ৭ মাসের বিদ্যুৎ বিল হিসেব করে দেখা যায়, ডিসেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত প্রতিমাসে গড়ে প্রায় ২৫০-৩০০ টাকার বিদ্যুৎ বিল এসেছে ওই প্রতিষ্ঠানটি। যা ব্যবহার করেছে ওই শিক্ষিকার পরিবারও। আর সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ বিলের খরচ বহন করছে ওই বিদ্যালয়টি।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. মইনুল হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, অবৈধভাবে নিজ বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়া অপরাধ। সেখানে একজন শিক্ষক কিভাবে স্কুল থেকে নিজ বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নিলেন তা বুঝতে পারছি না। একজন শিক্ষক হয়েও যদি এমন বেআইনি কাজ করেন তাহলে স্কুলের বাচ্চাদের সে কি শিক্ষা দেবেন।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষিকা মোছা. রওশনারা বেগম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমি বিদ্যুৎ অফিসকে বিষয়টি জানিয়েছি। কোন সমস্যা নেই। নতুন মিটার পেলে স্কুলের বিদ্যুৎ আর ব্যবহার করবো না।
পরমালী বড়ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি মো. আজাদ হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ওই শিক্ষিকার বাড়িতে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় বিদ্যুৎ অফিস লাইন কেটে দিয়েছে। এছাড়া ওই শিক্ষিকার স্বামী জমি দাতা ও সাবেক সভাপতি থাকায় জোড় করে আমাদের না জানিয়ে বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়। তিনদিনের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ না কাটলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সিদ্দিকুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমি মানবিক কারণে দু একদিনের জন্য বিদ্যুৎ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছি। পরে অনেকবার ওই শিক্ষিকাকে সংযোগ বন্ধ করতে বলেছি। সে নানা অযুহাত দেখিয়ে আমার কথা আর ভ্রুক্ষেপ করছে না। আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানিয়েছি।
কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুতের সমিতির ভারপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার মোস্তফা কামাল দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিষয়টি জানা ছিলো না। আমরা এখনই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি।
জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিষয়টি আমি একজন অভিভাবকের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।