সরকারি স্কুলে উপবৃত্তির সুফল, বাহবা পাচ্ছে নগদ

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

কুয়াশায় ছাওয়া সকাল। স্কুল মাঠের এপাশ থেকে ওপাশ ঠিকঠাক ঠাহরে আসে না। মাঠের ভেতর শুধু একটা আবছা অবয়বের নড়াচড়া। কিছু শিশু গোল হয়ে ঘুরছে। দূর থেকে কেউ ডাকছে- ‘মালা, ও মালা...’।

কাছে যেতেই উজ্জ্বল হয়ে উঠলো মুখগুলো। কুয়াশাচ্ছন্ন সকালেও ওদের মুখাবয়বে যেনো আলোকিত দিনের আভা। মুন্সীগঞ্জ শহরের মাঠপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে যেনো আলোর মেলায় পরিণত করেছে ওরা। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক নিলুফা আফরোজ হেসে বললেন- ‘বছরের এই শুরুতে, এমন শীতের দিনেও সব বাচ্চা স্কুলে এসেছে। উপস্থিতির হার এখন প্রায় একশ ভাগ।’

এই চিত্র কেবল মাঠপাড়া স্কুলের নয়। পুরো মুন্সীগঞ্জ শহরই জানান দিচ্ছে, প্রতিটা সরকারি স্কুল কয়েক বছর আগের চেয়ে এখন অনেক জমজমাট। আজকাল শিশুদের ঝরে পড়া আর অনুপস্থিতি নেই বললেই চলে। বিভিন্ন বেসরকারি স্কুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়েছে সরকারি স্কুলগুলো। আর এ জন্য সরকারের উপবৃত্তি কার্যক্রমকে অন্যতম সহায়ক হিসেব চিহ্নিত করলেন প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকরা।

সম্প্রতি বরিশাল ও ঢাকার কিছু সরকারি স্কুল ঘুরে এই অভিজ্ঞতাই পাওয়া গেলো।

শিল্প কারখানার শ্রমিক ও আলু চাষের কৃষক হিসেবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুন্সীগঞ্জে এসে  বসত গড়েছেন লাখো মানুষ। একটা সময় তারা সন্তানদের স্কুলে পাঠাতো না। তার চেয়ে ছেলে বা মেয়েটিকে কাজে দেওয়াই লাভজনক মনে করতো।

ওই মানসিকতার বিপুল পরিবর্তন এনেছে উপবৃত্তি। মুন্সীগঞ্জ সদরের উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোসাম্মাৎ নাসিমা খানম বলছিলেন- ‘এটা মূলত একটা শিল্প এলাকা। এখানে এ ছাড়া প্রচুর আলু চাষ হয়। ফলে বাইরে থেকে অনেক শ্রমিক ও কৃষক আসে। তাদের পরিবারগুলো থেকে আগে শিশুরা বিদ্যালয়ে আসতে কম আগ্রহ পেতো। এখন আমরা জরিপ করে দেখতে পাই, এসব পরিবারের সব শিশু বিদ্যালয়ে আসছে। এর কারণ অবশ্যই উপবৃত্তি।’

এরকমই একটি পরিবার আক্কাস আলীর পরিবার। তার আদি বাড়ি যশোর। তিনি এখানে একটি কারখানায় চাকরি করেন। একমাত্র সন্তান আয়েশা সিদ্দিকী বাক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী। এই মেয়েকে স্কুলে দেওয়ার কথা তিনি ভাবতেও পারতেন না। কিন্তু সরকার থেকে উপবৃত্তি পাওয়ায় আক্কাস এখন তার মেয়েকে স্কুলে পাঠাচ্ছেন।

আয়েশার মা সুলতানা বলছিলেন, ‘আগে তো মাইয়াডারে স্কুলে পাঠানির কথা ভাবতাম না। আমাগো সেই সামর্থও ছিলো না। কিন্তু এহন সরকার আরও অনেক সুবিধা দিচ্ছে আমার প্রতিবন্ধী মাইয়ারে। আর স্কুলেও এহন উপবৃত্তি দিতেছে। সরকাররে আমার ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নাই। নগদ-রেও অনেক ধন্যবাদ।’

আয়েশার মতো উপকারভোগীরা উপবৃত্তি কার‌্যক্রম ঠিকঠাক চালিয়ে নেওয়ার জন্য নগদ-কে ধন্যবাদ দিচ্ছেন। নগদ ২০২১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে উপবৃত্তি বিতরণ করছে। তারা ব্যাপারটা শুধু যে পুরোপুরি ডিজিটাল করেছে, তাই নয়। এখন উপবৃত্তি না পাওয়ার অভিযোগ নেই বললেই চলে।

এ কারণেই নগদ নিয়ে বলতে গিয়ে মোসাম্মাৎ নাসিমা খানম বলছিলেন, ‘মোবাইল সেবা ‘নগদ’ এই সেবাটা দিচ্ছে। তারা খুব ভালোভাবে কাজটা করছে। আমার এই উপজেলায় খুব স্বচ্ছতার সঙ্গে উপবৃত্তি বিতরণ হচ্ছে। অনিয়ম দেখছি না। এখানে শিশুরা খুব ভালোভাবে টাকা পাচ্ছে। ফলে আমি নগদ-কে ধন্যবাদ দেবো। আশা করবো, এভাবেই তারা দেশের শিক্ষার জন্য কাজ করে যাবে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে - dainik shiksha চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ - dainik shiksha সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন - dainik shiksha রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? - dainik shiksha বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে - dainik shiksha ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি - dainik shiksha প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025548934936523