সরকারি স্কুলে ৮ জন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ১

গাইবান্ধা প্রতিনিধি |

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার তেকানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী আছে মোট আটজন। আর শিক্ষক আছেন মাত্র একজন। তিনিই প্রধান শিক্ষক। ক্লাস নেয়ার পাশাপাশি সামলান প্রশাসনিক কাজ। পড়াশোনা না হওয়ায় গ্রামের শিশুরা ভর্তি হচ্ছে অন্য বিদ্যালয়ে। চার বছর ধরে এ অবস্থা চলছে।

জেলা শহর থেকে প্রায় ৩৮ কিলোমিটার দূরে কিশোরগাড়ি ইউনিয়নের তেকানি গ্রাম। গ্রামের তিন দিকে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা। তেকানি বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে করতোয়া নদী। নদী পার হয়ে বিদ্যালয়ে যেতে হয়।

২ জানুয়ারি সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের ভবনটি পাকা। সেখানে চারটি কক্ষ আছে। ভবনে ঢুকে দেখা গেল, বেঞ্চসহ সব আসবাব আছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা নেই। ক্লাসও হচ্ছিল না সেদিন। তবে কার্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম ছিলেন। বিদ্যালয়ের একটি কক্ষ তালাবদ্ধ। শ্রেণিকক্ষের সামনে বিশাল মাঠ। দুই দিকে শীতকালীন ফসলের মাঠ। অন্যদিকে বসতবাড়ি ও লোকালয়। ভবনের সামনে পতাকা উড়ছে। শিক্ষার্থী নেই। তাই একটি শ্রেণিকক্ষ তালাবদ্ধ।

প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে এক একর জমিতে বিদ্যালয়টি গড়ে ওঠে। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে এটি সরকারি হয়। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে এ বিদ্যালয়ে আটজন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে শিশু শ্রেণিতে পাঁচজন, প্রথম শ্রেণিতে দুজন ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে একজন। তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থীও নেই। গত বছর বিদ্যালয়টিতে চারজন শিক্ষার্থী ছিল। তিনি এখানে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে যোগদান করেন। তখনো বিদ্যালয়ে ১০ জনের বেশি শিক্ষার্থী ছিল না।

প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, শিক্ষক না থাকায় ছাত্রছাত্রী নেই। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে সরকার সারা দেশে শিক্ষক নিয়োগ দেয়। সে সময় এ বিদ্যালয়ের শিক্ষকের জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু কোনো শিক্ষক দেওয়া হয়নি। কয়েক মাস আগে সারা দেশে আবারও নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এবারও শিক্ষক চেয়ে আবেদন জানানো হয়েছে।

এলাকাবাসী জানান, বিদ্যালয়টি বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তখন আশপাশের লোকজনই এখানে শিক্ষকতা করতেন। সরকারি হওয়ার পর আগের শিক্ষকেরা পর্যায়ক্রমে অবসরে যান। তখন করতোয়া পার হয়ে অন্য শিক্ষকেরা এখানে আসতে চান না। এলেও বদলি নিয়ে চলে যান। ফলে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক নেই। আর শিক্ষক না থাকলে পড়াশোনা কীভাবে হবে? তাই তারা ছেলেমেয়েদের এ বিদ্যালয়ে দেন না। অথচ এখানে আগে ২০০-২৫০ শিক্ষার্থী ছিল।

তেকানি গ্রামের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছাব্বির মিয়া জানায়, তার বাড়ি বিদ্যালয়ের পাশেই। কিন্তু এখানে শিক্ষক নেই। তাই সে অন্য বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে।

তেকানি গ্রামের শেফালি বেগম জানান, তিনি তার মেয়েকে এ বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণিতে ভর্তি করেছিলেন। এবার সে তৃতীয় শ্রেণিতে উঠেছে। কিন্তু এখানে ওই শ্রেণিতে অন্য কোনো ছাত্রছাত্রী নেই। তার মেয়েকে তো আর একা ওই ক্লাসে পড়বে না। তাই মেয়েকে অন্য একটি বিদ্যালয়ে দিয়েছেন। 

এ বিষয়ে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবদুল আজিজ বলেন, চলতি নিয়োগে তাদের শিক্ষক দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। অন্তত তিনজন শিক্ষক হলেও বিদ্যালয়টি চলতে পারে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হারুন-অর-রশিদ বলেন, সম্প্রতি জেলায় শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষক দেয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে - dainik shiksha চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ - dainik shiksha সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন - dainik shiksha রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? - dainik shiksha বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে - dainik shiksha ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি - dainik shiksha প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023810863494873