সরকারি হরিচরণ স্কুলের জায়গায় মার্কেট তৈরি করছেন প্রধান শিক্ষক

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার নকিপুর সরকারি হরিচরণ পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে স্কুলের সীমানায় মার্কেট নির্মাণ করছেন তিনি। এছাড়া শিক্ষার্থীদের সাথে অসদাচরণ, মারধর, অবৈধভাবে টাকা আদায় ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে এ প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে পাঠানো এক চিঠিতে লিখিতভাবে অভিযোগগুলো জানানো হয়েছে। একইসাথে এসব অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

অভিযোগে জানা যায়,  প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান বিবিধহির্ভূতভাবে বিদ্যালয় সীমানার উত্তর-পশ্চিম পার্শ্বে সীমানা প্রাচীরের মধ্যে সংরক্ষিত একটি জায়গা জেলা পরিষদে প্রভাব খাটিয়ে নিজের নামে ইজারা নেন। উপজেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মার্কেট ভবন নির্মাণ করছেন। যদিও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে স্কুলের সীমানায় মার্কেট নির্মাণ না করার। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষা অধিদপ্তরের জারি করা এক আদেশে, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে বা দেয়ালঘেঁষে মার্কেট তৈরি বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। জানা গেছে, ওই জায়গাটি স্থানীয় কয়েকজনের নামে বরাদ্দ ছিল। 

অভিযোগে আরও জানা যায়, শ্যামনগর সদর ইউনিয়নের হায়বাতপুর মৌজায় দিগম্বরের মাঠে বিদ্যালয়ের নামে ০ দশমিক ৬৬ একর সম্পত্তি আছে যার আয় প্রধান শিক্ষক প্রতি বছরই আত্মসাৎ করেতেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে ওই জমি থেকে ভেকু মেশিনের সাহায্যে প্রায় দেড় ফুট গভীর করে মাটি কেটে বিক্রয় করেন। যেটাকা সম্পূর্ণ টাকা নিজে আত্মসাৎ করেছেন। 

অভিযোগ আছে, বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল শাখা থেকে সম্মানীর নামে ৫৩ হাজার টাকার বিল ভাউচার তৈরি করেন তিনি। পরে, সোনালী ব্যাংক থেকে সে টাকা তুলে আত্মসাৎ করেন প্রধান শিক্ষক। 

অভিযোগে আরও বলা হয়, বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের ৩য় তলার একটি শ্রেণিকক্ষ থেকে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে একটি সরকারি প্রজেক্টর চুরি হয়। রুমের জানালা, দরজা, তালা সব কিছুই অক্ষত থাকা অবস্থায় চুরির বিষয়টি তাকে জানানো হয়। কিন্তু প্রধান শিক্ষক নীরব ভূমিকা পালন করেন। এ ঘটনায় কোন সাধারণ ডায়েরি পর্যন্ত করা হয়নি বলে অভিযোগে জানানো হয়। 

অভিযোগে বলা হয়, প্রতি বছরের মত চলতি বছরেও ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের কাছ থেকে কোন রশিদ ছাড়াই মাথাপিছু ১৫০টাকা করে আনুমানিক ২৫ হাজার টাকা আদায় করেছেন। যার ভিডিও ইতোমধ্যে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় সব অভিভাবক ও ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। 

অভিযোগে দাবি করা হয়, প্রধান শিক্ষকের এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ড যদি অব্যহত থাকে তাহলে এলাকায় শান্তি বিনষ্ট হবে এবং পাশাপাশি বিদ্যালয়টি ধ্বংস স্তুপে পরিণত হবে। বর্তমান প্রধান শিক্ষক ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন ফান্ডে আদায় করা সব টাকা ও বিভিন্ন সময়ে সরকারিভাবে বরাদ্দ করা অনুদানের টাকা ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে সম্পূর্ণ আত্মসাৎ করেছেন। এমনকি বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রাপ্য টাকা না দিয়ে তৎকালিন ম্যানেজিং কমিটিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিদ্যালয়ের কয়েক লাখ টাকা ঋণ দেখানো হয়। তৎকালিন সভাপতি আর্থিক দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে তাকে একাধিক বার শোকজ কলেও তিনি কোন জবাব দিতে পারেননি প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান। অভিযোগে বলা হয়, সব ভাউচার তলব করে যাচাই বাছাই করলেই লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া যাবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, যে মার্কেট নিয়ে অভিযোগ উঠেছে তা আগে থেকেই ছিল। আমি শুধু একটু বাড়িয়েছি। শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অমান্য করে কেন মার্কেট বাড়াচ্ছেন-প্রশ্ন করা হলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।  

অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, সব খরচের বিল ভাউচার আছে। 

এছাড়া স্কুলের প্রযেক্ট চুরির বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, চুরির বিষয়টি গোপন করা হয়েছে বলে যে অভিযোগ তা সত্য নয়। আমি থানায় ডায়েরি করেছি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ - dainik shiksha কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030958652496338