সর্বজনীন পেনশন ‘প্রত্যয়’ স্কিম বাতিলের দাবিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতিতে স্থবির হয়ে পড়েছে সারা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তিকরণ নিয়ে চলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করা হয়েছে। একই সঙ্গে ‘প্রত্যয়’ স্কিম চালু করার ক্ষেত্রে যেসব বিষয় নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে, সেগুলো দূর করতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ব্যাখ্যাসংবলিত আনুষ্ঠানিক বক্তব্য প্রদান এবং অধিকতর স্পষ্টীকরণ জারি হয়েছে। সেইসঙ্গে গত ১ জুলাই থেকেই প্রত্যয় স্কিম যাত্রা শুরু হয়েছে। অন্যদের পাশাপাশি স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত এবং তার অঙ্গসংগঠন প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সর্বজনীন পেনশনের এই ‘প্রত্যয়’ স্কিম প্রবর্তন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের পক্ষে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা স্পষ্টীকরণ বিবৃতিতে বলা হয়, ৩০ জুন ২০২৪ পর্যন্ত যেসব শিক্ষক/কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরিরত আছেন তারা পূর্বের ন্যায় সকল পেনশন সুবিধাপ্রাপ্য হবেন। তবে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনে ৬০ বছর বয়স থেকে পেনশনপ্রাপ্তির উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ৬৫ বছর থেকে অবসরে যাবেন বিধায় ৬৫ বছর থেকেই তারা আজীবন পেনশনপ্রাপ্ত হবেন, তা নিশ্চিত করতে সরকার আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন করবে বলেও স্পষ্ট করেছে। একই সঙ্গে জানানো হয়েছে, লাম্পগ্রান্ট, পিআরএল ও প্রভিডেন্ট ফান্ড বর্তমান ব্যবস্থায় বহাল থাকবে।
আরো পড়ুন: প্রত্যয় স্কিম নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করলেন শিক্ষকরা
এতে উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে ৪০৩টি স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৯০টির মতো প্রতিষ্ঠানে পেনশন ব্যবস্থা চালু আছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড (সিপিএফ)-এর আওতাধীন। সিপিএফ সুবিধার আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মচারীরা এককালীন আনুতোষিকপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন, কোনো পেনশন পান না। তা ছাড়া সরকারি, স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ছাড়া দেশের বিপুলসংখ্যক জনসাধারণ একটি সুগঠিত পেনশনের আওতাবহির্ভূত থাকায় সরকার সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমের মাধ্যমে একটি সুগঠিত পেনশন কাঠামো গড়ে তোলার জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমের প্রবর্তন করেছে। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩-এর ১৪(২) ধারা অনুযায়ী দেশের সকল মানুষের জন্য পেনশন স্কিম প্রবর্তনের সুযোগ তৈরি করা হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে ১ জুলাই ২০২৪ বা তৎপরবর্তী সময়ে যোগদানকারী সব কর্মচারী বাধ্যতামূলকভাবে প্রত্যয় স্কিমের আওতাভুক্ত হবেন। অর্থমন্ত্রী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, ১ জুলাই ২০২৫ বা তৎপরবর্তী সময়ে যোগদানকারী সরকারি কর্মচারীরাও সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আসবেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের স্পষ্টীকরণ বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, বর্তমানে সরকারি পেনশনে আনফান্ডেড ডিফাইনড বেনিফিট সিস্টেমের পেনশন ব্যবস্থা প্রচলিত আছে। ফলে, পেনশনের যাবতীয় ব্যয় প্রয়োজন অনুযায়ী প্রদত্ত বাজেট বরাদ্দ থেকে মেটানো হয়। ১ জুলাই ২০২৪ তারিখ থেকে সেখানে ফান্ডেড ডিফাইনড কন্ট্রিবিউটরি সিস্টেমের পেনশন ব্যবস্থা চালু হবে বিধায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বেতন থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণে মাসিক জমার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রত্যয় স্কিমে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীর প্রাপ্ত মূল বেতনের ১০% বা সর্বোচ্চ ৫ (পাঁচ) হাজার টাকা যাহা কম হয় তাহা কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বেতন থেকে কেটে রাখা হবে এবং তার সমপরিমাণ অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা প্রদান করবে। অতঃপর উভয় অর্থ ওই কর্মকর্তা/কর্মচারীর কর্পাস অ্যাকাউন্টে জমা হবে।