দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সর্বজনীন পেনশন কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার। চার পেশার মানুষ এতে সুবিধা নিতে পারবেন। বাংলাদেশে অর্থসংক্রান্ত যেকোনো উদ্যোগে কর্মকর্তাদের অনিয়মের ঘটনা নিয়মিত। তবে সর্বজনীন পেনশনের বিধিমালায় পেনশনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনিয়মে কঠোর বার্তা দিয়েছে সরকার। বিধি অনুযায়ী, পেনশন কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত কোনো কর্মকর্তা যদি আইন বা বিধি লঙ্ঘন করে কোনো দুর্নীতি করলে আদালতের মাধ্যমে তার সম্পত্তি বা ব্যাংক হিসাব বাজেয়াপ্ত করতে পারবে।
বিধির ৯ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, সর্বজনীন পেনশন স্কিম বা এই স্কিমের আওতাধীন কোনো কার্যক্রম, স্কিম অথবা প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা কমর্চারী এই আইন বিধি বা প্রবিধানের কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে আদালতের মাধ্যমে ওই ব্যক্তি বা কর্মচারীর সম্পত্তি বা এক বা একাধিক ব্যাংক হিসাব ক্রোক করতে পারবে।
বাংলাদেশের মানুষের জন্য চার ধরনের পেনশন স্কিমের বিধান রেখে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা জারি করেছে সরকার।
গত রবিবার অর্থ বিভাগ থেকে জারি হওয়া এই বিধিমালায় ‘প্রবাস’, ‘প্রগতি’, ‘সুরক্ষা’ ও ‘সমতা’ নামে পেনশন স্কিম চালুর কথা বলা হয়েছে। এসব স্কিমের চাঁদার কিস্তি পছন্দ অনুযায়ী মাসিক, ত্রৈমাসিক বা বার্ষিক ভিত্তিতে পরিশোধ করা যাবে। চাঁদা দেওয়ার সময়ের ভিত্তিতে চারটি স্কিমের জন্যই মাসিক চাঁদার এবং পেনশনের পরিমাণ আলাদাভাবে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
পেনশন স্কিমে অংশ নিতে বাংলাদেশি নাগরিকদের অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকরাও এই স্কিমে অংশ নিতে পারবেন। যেসব প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তারা পাসপোর্টের তথ্য দিয়ে পেনশন স্কিমে নিবন্ধনের আবেদন করতে পারবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল বৃহস্পতিবার সর্বজনীন পেনশন স্কিম কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, এসব স্কিমের বিপরীতে নির্ধারিত পরিমাণ চাঁদা দিলে মাসিক পেনশন পাওয়ার প্রাপ্যতা অর্জিত হবে।
জেনে আসা যাক বিধিমালা অনুযায়ী পেনশন গ্রহণকারী যেসব কর্তৃপক্ষ থাকবেন, তাদের দায়িত্ব ও কাজ কী হবে : বিধির ৭ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, সর্বজনীন পেনশনপদ্ধতি চালু, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ; সর্বজনীন পেনশনপদ্ধতির আওতায় এর চাঁদাদাতাদের স্বার্থ সংরক্ষণ; সর্বজনীন পেনশন স্কিম গ্রহণ, স্কিমে প্রবেশ যোগ্যতা ও শর্ত নির্ধারণ, অনুমোদন, স্কিম পরিচালনা, তত্ত্বাবধান এবং পেনশন তহবিলের পুঞ্জীভূত জমার বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা; পেনশন স্কিমে চাঁদাদাতাদের জমাকৃত অর্থের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ; চাঁদাদাতাদের অভিযোগ নিষ্পত্তি ও প্রতিকার প্রদান নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সরকারের অনুমোদনক্রমে প্রবিধান প্রণয়ন।
বিধিতে আরও বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ স্বয়ং অথবা অপর কোনো কার্যালয় বা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে কর্তৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা, বাস্তবায়ন বা এ বিষয়ে কোনো গবেষণার নিমিত্ত তথ্য সংগ্রহ বা গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা; জনসাধারণের মধ্যে সবর্জনীন পেনশনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য, অবসরকালীন নিরাপত্তা ও পেনশন সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রদান ও বহুল প্রচারের মাধ্যমে পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ; সবর্জনীন পেনশন স্কিমের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ; সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে ফি বা অন্যান্য চার্জ নির্ধারণ; নির্ধারিত স্থান ও সময়ে, হিসাব সংরক্ষণ বহি ও অন্যান্য দালিলিক কাগজপত্র প্রকাশ; সর্বজনীন পেনশন বা পেনশন তহবিল বা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ে কোনো অভিযোগ বা বিরোধ নিষ্পত্তি বা অনিয়ম সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, প্রয়োজনীয় অন্যান্য কার্যাবলি সম্পাদন।