সহকর্মীকে ‘কুত্তা’ সম্বোধন, উপাচার্য বললেন এটা তাদের বিষয়

দৈনিক শিক্ষাডটকম, কুবি |

দৈনিক শিক্ষাডটকম, কুবি : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসানকে ‘কুত্তা’ বলে সম্বোধন করার অভিযোগ উঠেছে একই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান কাজী এম. আনিছুল ইসলামের বিরুদ্ধে। গত ৩০ জানুয়ারি বিভাগীয় প্লানিং কমিটির মিটিংয়ে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আরেক সহকর্মী মাহমুদুল হাসানকে উদ্দেশ্য করে এই শব্দ ব্যবহার করার কথা স্বীকার করেন তিনি।  

এদিকে নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মাদ আইনুল হকের সাথেও অশিক্ষকসুলভ আচরণের অভিযোগ রয়েছে আনিছুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কুবির এক শিক্ষিকার স্বামীকে সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে কন্ডিশন মার্ক কমিয়ে নতুন বিধিমালা যুক্ত করার প্রস্তাব করেন বিভাগীয় প্রধান কাজী এম. আনিছুল ইসলাম। তবে সেই বিধিমালা যুক্ত করার বিষয়ে আপত্তি জানায় তার সহকর্মীরা। এ সময় আনিছুল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে পোস্ট করা নিয়েও প্রশ্ন করেন সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসানকে।

উত্তরে এম. আনিছুল ইসলামকে উদ্দেশ্য করে মাহমুদুল হাসান কাজী বলেন, আমিতো কারও নাম উল্লেখ করে স্ট্যাটাস দেইনি। তাহলে আপনি কীভাবে নিশ্চিত হলেন যে আমি আপনাকে উদ্দেশ্য করে এই স্ট্যাটাস দিয়েছি। তার মানে আপনি কুত্তা নিয়ে যে স্ট্যাটাস দিয়েছেন সেটি আমাকেই বলেছেন? এসময় আনিছুল মাহমুদুল হাসানকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘হ্যাঁ আমি তোকেই বলেছি, কি করতে পারিস কর।’

এর আগে ২৯ জানুয়ারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের টাইমলাইনে মাহমুদুল হাসান লিখেন, ‘একজন মানুষ নৈতিক কিনা সেটা প্রকাশ পায় তার কর্মে। অন্য মানুষ যদি কাউকে নীতিবান বলে তাহলে তাকে নীতিবান হিসেবে ধরা যায়। নিজেই নিজেকে নীতিবান ঘোষণা করে নীতিবান হওয়া যায় না। আবার ফেসবুকে নীতিবান মানুষ বাস্তবে চরম নীতিহীন হতে পারে।’

একইদিনে ফিরতি স্ট্যাটাসে কাজী এম. আনিছুল ইসলাম নিজের ফেসবুকে ওয়ালে মাহমুদুল হাসানের স্ট্যাটাসকে ব্যঙ্গ করে লিখেন, ‘কুত্তার স্বভাব ঘেউ ঘেউ করা। কী বাজারে, কী ফেসবুকে।’

এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভাগের আরেক সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুল হক ভূঁইয়া লিখেন, ‘একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন আগে শিক্ষক পেটানোর ঘটনায় কোনো বিচার হয় নাই। আজ একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক তার সহকর্মীকে ‘কুত্তা’ গালি দিয়ে আবার তাকেই বলেছেন ‘কী করতে পারবি কর’। এর আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র শিক্ষকের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে ‘আমাকে জুতা দিয়ে মারেন’ বলে ক্ষমা চেয়ে পার পেয়েছিলেন। এই একই শিক্ষক দিন দুয়েক আগে সহকর্মী পেটানো শিক্ষককে 'পরমাত্মীয়' উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্টও দিয়েছিলেন।’

ঘটনার বিস্তারিত জানতে চাইলে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুল হক ভূঁইয়া মোবাইলে বলেন, একজন শিক্ষক কখনও তার সহকর্মীকে এইভাবে সম্বোধন করতে পারেন না। এটার ভিন্ন একটা কারণ আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী আমি বিভাগের প্রধান থাকাকালীন তার আত্মীয়কে নিয়োগ দিতে আমার কাছে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়েছিল। আমি তখন সেটি নাকচ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু বর্তমান বিভাগীয় প্রধান কাজী আনিছুল ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য হাছিলে প্রক্টরের এই অবৈধ নিয়োগকে বৈধতা দিতে অ্যাকাডেমিক প্ল্যানিং কমিটিতে নিয়োগে শর্ত শিথিল করার চেষ্টা করেন। সেটি নিয়ে বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকরা রাজি না হওয়ায় পরবর্তীতে তাদের সাথে এমন আচরণ করেন।

তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষককে এমনভাবে ক্ষমতায়িত করা হয়েছে তারা শিক্ষকদের সাথে হরহামেশাই ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে আসছে। আইন বিভাগের ঘটনা, নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকের সাথে ঘটনার মতো কোনো ঘটনারই ক্যাম্পাসে বিচার হয় না। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে কয়েকজন শিক্ষকদের বেপরোয়া আচরণ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

যদিও প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী দাবি করেন, এই ধরনের সুপারিশ করার প্রশ্নই আসে না। কেউ যদি এটা প্রমাণ করতে পারে তাহলে আমি কালকেই বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে যাব।

এসব ঘটনায় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আরেক সহকারী অধ্যাপক অর্ণব বিশ্বাসের সাথে কথা বললে তিনি জানান, এই ঘটনাটি একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে ঘটেছিল। একাডেমিক একটি মিটিংয়ে উনি (মাহমুদুল হাসান) বলেছেন আপনি কি ওই গালিটি আমাকে সম্বোধন করে বলেছেন। তখন কাজী আনিস স্যার বলেন, ‘হ্যা, আমি এটি আপনাকে উদ্দেশ্য করেই দিয়েছি।’ এর পরবর্তীতে মিটিং এ নানা কথাবার্তা হয়েছে। একপর্যায়ে তিনি (কাজী আনিছ) বলেন কী করতে পারবেন করেন।

কুত্তা বলার বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী মাহমুদুল হাসান জানান, অ্যাকাডেমিক প্লানিং কমিটির মিটিংয়ে আমরা একটা বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্তে আসতে পারতেছিলাম না। এসময় তিনি (কাজী আনিছ) আমার ফেসবুক পোস্ট নিয়ে কথা তোলেন। তখন উনাকে আমি প্রশ্ন করি আপনি কীভাবে নিশ্চিত হলেন যে, এটা আমি আপনাকে নিয়ে বলেছি। তাহলে আপনি গতকাল ফেসবুকে কুত্তা বলে যে গালি দিয়েছেন সেটা কি আমাকে দিয়েছেন? তখন তিনি বলেন, ‘হ্যা। তোকেই আমি কুকুর বলেছি কি করতে পারবি কর৷’ বিষয়টি নিয়ে আমি মর্মাহত। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকদের বিষয়টি জানিয়েছি। শিক্ষকরা বসে হয়ত একটি সিদ্ধান্তে আসবেন।

এদিকে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আইনুল হকের সাথেও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের অভিযোগ উঠেছে কাজী এম. আনিছুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আইনুল হক জানান, ‘আমার সাথে কাজী আনিছ যা করেছে তা শিক্ষকসুলভ আচরণ নয়। এটি কোনো ভুল ছিল না, এটি অপরাধ। অপরাধের কোনো ক্ষমা হয় না। আমাকে অপদস্থ করার জন্যই সে আমার সাথে এমন বাজে আচরণ করেছিল। বিষয়টি নিয়ে আমি এখনও বিব্রত।’

অভিযোগের বিষয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী এম. আনিছুল ইসলাম বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে সহকর্মী অভিযোগ দিয়েছেন সেটা ভিত্তিহীন। আমি আমার কোন সহকর্মীকে কখনো ‘কুত্তা’ বলে গালি দেইনি।

কথা বলতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, এ ধরনের কোনো অভিযোগ লিখিতভাবে আসেনি। কিন্তু একজন সহকর্মীর প্রতি এ ধরনের আচরণ যদি সত্যি হয় সেটি অনুচিত। এটি শিক্ষকসূলভ আচরণ না। লিখিত অভিযোগ দিলে তখন তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তবে এসব বিষয়ে প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিবে কি-না জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড এ এফ এম আব্দুল মঈন বিষয়টিকে শিক্ষকদের একান্ত আলাপ উল্লেখ করে জানান, এই সমস্ত বিষয়ে আপনি কেন আমাকে প্রশ্ন করেন? এটা তাদের নিজেদের বিষয়। এটা সংবাদের বিষয়বস্তু নয়। দুইজন শিক্ষকের মধ্যে কি ধরনের কথা কাটাকাটি হয়েছে সে বিষয়ে সাংবাদিকের দেখার বিষয় নয়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
আইনের মারপ্যাঁচে অনিশ্চিত ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন - dainik shiksha আইনের মারপ্যাঁচে অনিশ্চিত ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন ‘ঢাবির ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হচ্ছে শিগগিরই’ - dainik shiksha ‘ঢাবির ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হচ্ছে শিগগিরই’ হাই-টেক পার্কের নাম হবে জেলার নামে: উপদেষ্টা নাহিদ - dainik shiksha হাই-টেক পার্কের নাম হবে জেলার নামে: উপদেষ্টা নাহিদ দীপু মনির নামে আরেক মামলা, আসামি ৬০০ - dainik shiksha দীপু মনির নামে আরেক মামলা, আসামি ৬০০ স্কুল-কলেজে বিশৃঙ্খলা : কোথাও জবরদস্তি কোথাও পালিয়ে থাকা - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বিশৃঙ্খলা : কোথাও জবরদস্তি কোথাও পালিয়ে থাকা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.004662036895752