সহকারী অধ্যাপকই আমার জন্য অনেক ভারী পদ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

গতকাল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমার চাকুরিচ্যূতি চেয়ে যে স্মারকলিপি দিয়েছেন সেখানে অনেক কিছুর মধ্যে প্রায় বিশ বছর ধরে কেন আমি "সহকারী অধ্যাপক" সে প্রশ্নটি আমার পছন্দ হয়েছে। এই প্রশ্নটা যে তাদের মাথায় এসেছে সে কারণে তাদের ধন্যবাদ প্রাপ্য। একই প্রশ্ন আমার বাবা-কন্যাসহ পরিবারের অনেকের সাথে আমার বন্ধু-বান্ধব-সহকর্মীদের মধ্যে আছে বলে অনুমান করি। ভেবেছিলাম, এই প্রশ্নের উত্তর অবসরে যাওয়ার আগে দেব না। কিন্তু এখন একটা কৌতুককর পরিস্থিতিতে উত্তরটা দিচ্ছি। অন্য বিষয়গুলো নিয়েও নিশ্চয়ই কথা হবে।

অনেকেই জানেন, অনেকে হয়তো জানেন না, বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষককে পদোন্নতি দেওয়া হয় না, শিক্ষকরা পদোন্নতি নেন।

যখন কোনো শিক্ষক নিজে নিশ্চিত হন তিনি পদোন্নতি নেওয়ার যোগ্য হয়েছেন তখন তিনি তার সেই যোগ্যতার কথা বিশ্ববিদ্যালয়কে জানান। যোগ্যতা বলতে, জ্ঞানের সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান। বিশ্ববিদ্যালয় যা বুঝতে চায়, সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের মৌলিক গবেষণাকর্মের উপস্থাপনা বা লেখালেখি দেখে। গবেষণা নিবন্ধ আর বই-পুস্তক হচ্ছে তার এই মৌলিক জ্ঞানের স্মারক। চাকুরির মেয়াদ এখানে খুব বড় বিবেচ্য নয়।

 অল্প দিনের ভেতরেই সেই "দাবিপত্র" বিষয়ে বিভাগ পর্যায়ে কিছু আনুষ্ঠানিক যাচাই-বাছাই হয়। যা সহকর্মীরাই করেন। তারপর তাকে ডাকা হয় একটা নির্বাচনী বোর্ডে। সেখানে পদোন্নতি দাবি করা শিক্ষকের জ্ঞান-জগতে অবদান সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়। বোর্ড সন্তুষ্ট হলে পদোন্নতি হয়ে যায়। অসত্য কিছু উপস্থাপন না করলে বা বড় কোনো উলটাপালটা না থাকলে কারও পদোন্নতি আটকে যাওয়ার নজির নাই।

আমি আমার বিভাগের সম্ভবত সবচে বয়স্ক জন। বিভাগের সভাপতির কাজও করেছি। আমার সভাপতিত্বের সময়েই আমার বিভাগে সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদে যারা পদোন্নতি চেয়েছেন, সব্বাই পদোন্নতি পেয়েছেন। কিন্তু আমি সহকারী অধ্যাপকের পর কোনো সময়ই পদোন্নতি চাইনি। চাইনি কারণ-

আমি সব সময় সচেতন থেকেছি, পদোন্নতি নেওয়ার মতো জ্ঞানক্ষেত্রে আমার অবদান রয়েছে কি না সে বিষয়ে। আমি নিজেই বুঝেছি, আমি এমন কিছুই করতে পারিনি যার জন্য আমি পদোন্নতি নিতে পারি। যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা নিয়ে আমি পড়ালেখা করি নিত্য, নিত্য চেষ্টা করি আমার অবদান রাখতে, চেষ্টা করি লিখতে, কিন্তু বুঝতে পারি, যে মানের কাজ হলে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের একজন "সহযোগী অধ্যাপক" হিসেব নিজের পরিচয় দেওয়া যায় আমি তেমন কিছুই এখনও করতে পারি নি।

আমার নিজস্ব বিশ্বাস, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদোন্নতি পাওয়াটা খুব কঠিন। কারণ, এখানে বিবেকের কাছে পরিষ্কার হওয়ার দায় আছে। নিজের যোগ্যতার ঘোষণা এখানে নিজেকেই দিতে হয়। আমি খুব কুণ্ঠাবোধ করি নিজের যোগ্যতার ঘোষণা দিতে। আমি যদি আগামীকাল বোধ করি, আমি পরবর্তী পদের যোগ্য তাহলে কালই আমি তা বিশ্ববিদ্যালয়কে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেব। কিন্তু আজকে পর্যন্ত আমি সহকারী অধ্যাপকের বেশি হওয়ার যোগ্য নই।

যদি আমার অবসর গ্রহণকাল পর্যন্ত আমি জ্ঞানক্ষেত্রে আমার কাঙ্ক্ষিত অবদান রাখতে না পারি তাহলে আমি সহকারী অধ্যাপক হিসেবেই অবসরে যাব। আমার এই অক্ষমতার জন্য আমি বিনীত থাকি কিন্তু আমি যার যোগ্য নিজেকে মনে করি না, তা নিতে আমার বিবেক আমাকে বাধা দেয়। কেবল সামাজে বলার জন্য কিংবা বেতন বেশি পাওয়ার চিন্তায় পদোন্নতি আমি চাইনি। চাই না। খুব বোকা বোকা কথা হলেও এটাই আমি। সহকারী অধ্যাপকই আমার জন্য অনেক ভারী পদ।

এআর রাজি এর ফেসবুক থেকে


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0064718723297119