সহজ বিষয়ে ‘গণফেল’ ক্ষুব্ধ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

হাবিবুর রহমান রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত অনার্স চতুর্থ বর্ষ পরীক্ষায় সব বিষয়ে ভালো নম্বর পেলেও তুলনামূলক সহজ বিষয় ‘সাংগঠনিক আচরণ’-এ অকৃতকার্য হন। পরে পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করেও লাভ হয়নি। গত বছর অনুষ্ঠিত ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আবারও ওই বিষয়ে পরীক্ষা দেন। কিন্তু এবারও অকৃতকার্য হয়েছেন তিনি। হতাশ ও ক্ষুব্ধ ফাতেমা  বলেন, ‘এটা কোনোভাবেই সম্ভব না। কঠিন সব বিষয়ে আমি প্রথম শ্রেণির নম্বর পেয়েছি। দুর্বল একটা বিষয়ে বারবার ফেল হয় কী করে? আমার রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদও শেষ! চার বছরের অনার্স শেষ করতে আট বছর লাগছে। আমার জীবন অতিষ্ঠ।’

পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী কৃষ্ণ দাশগুপ্ত অকৃতকার্য হয়েছেন মডার্ন ড্রামায়। ফাতেমার মতোই বিষয়টি মানতে পারছেন না তিনি। কৃষ্ণ দাশগুপ্ত বলেন, ‘এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার বিষয় নয়। যেসব বিষয়ে নরমালি ফেল হয় সেখানে সবাই ভালো করেছে। কিন্তু নরমাল একটা বিষয়ে গণহারে ফেল করানো হয়েছে।’ শিক্ষকরা গাফিলতি করায় এমনটা ঘটেছে বলে দাবি তার।

আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’

শুধু ফাতেমা বা কৃষ্ণই নন। অনার্স চতুর্থ বর্ষ পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে দেশের বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে। গত ২০ জুলাই এ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়। ফলাফল পুনর্মূল্যায়ন চেয়ে আন্দোলনের ঘোষণাও তারা দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কঠিন সব বিষয়ে ফলাফল ভালো এলেও খুব সাধারণ বিষয়ে অনেক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছেন। অনেক কলেজে গণহারে অকৃতকার্য হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সাধারণ বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়ায় মশিউর রহমান নামে ঠাকুরগাঁওয়ের একজন শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার খবরও পাওয়া গেছে। গত ২৫ জুলাই রাজধানীর ভাটারা থেকে ওই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি পিছিয়ে শুরু হয় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এতে ৬০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অংশ নেন। পরীক্ষা চলাকালীন দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হলে বিপত্তি দেখা দেয়।

পেছাতে পেছাতে পরীক্ষা শেষ হয় গত বছরের শেষ দিকে। এরপর পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হতেও সময় লাগে ছয় মাসের বেশি। শিক্ষাজীবনের এত দীর্ঘ সময় নষ্ট হওয়ার পরও খুব সাধারণ বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়া গুরুতর অপরাধ হিসেবে দেখছেন শিক্ষার্থীরা। তবে নিজেদের ভুলে এই ঘটনা ঘটেনি বলে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী আত্মবিশ্বাসী। তারা দোষ চাপিয়েছেন পরীক্ষক এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা মূল্যায়ন ব্যবস্থার ওপর। 

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন

দেশের বিভিন্ন কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী বলেছেন, অনেক বিষয়ে তারা পরীক্ষায় মোট যত নম্বরের উত্তর দিয়েছেন তার চেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছেন। আবার যে বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছেন সেই বিষয়ে অনেক ভালো উত্তর দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে খুলনার এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেমে এ মাইনাস পেয়েছি। এই গ্রেড পেতে ৬০-এর বেশি নম্বর পেতে হয়। কিন্তু আমি এই বিষয়ে উত্তর দিয়েছি মাত্র ৫৫ নম্বরের। তাহলে এ মাইনাস পেলাম কী করে? আবার অ্যাকাউন্টিং থিওরিতে আমি ফেল করেছি, অথচ আমি নিশ্চিত এই বিষয়ে আমি এ গ্রেড পাব।’

শুধু খুলনার ওই শিক্ষার্থীই নন, একই ধরনের গরমিলের অভিযোগ রয়েছে আরও। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দেশে করোনা পরিস্থিতির কারণে তাদের উত্তরপত্র মূল্যায়নে গাফিলতি করা হয়েছে। যেসব শিক্ষক উত্তরপত্র দেখেন তারা কোচিং করাতে করাতে খাতা মূল্যায়ন করেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। আবার অনেকে পরীক্ষায় অংশ নিলেও ফলাফলে অনুপস্থিত দেখিয়ে ফেল করানো হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ বলছে, করোনার মধ্যে প্রথমবারের মতো অনলাইনে ভাইভা নেওয়া হয়েছে। সেখানে কাউকে অনুপস্থিত দেখানো হতে পারে। তবে এটা সংশোধনের সুযোগ আছে। করোনার অজুহাতে অনেকেই পাস চাচ্ছেন। এটা সম্ভব নয়।

ঢাকার হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের শিক্ষার্থী আফিয়াত ইসলাম জানান, তাদের কলেজে মডার্ন ড্রামা ও সাহিত্য সমালোচনার মতো বিষয়ে শিক্ষার্থীরা গণহারে অকৃতকার্য হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে সবচেয়ে খারাপ সময় যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এত দুর্বল বিষয়ে এভাবে ফেল মেনে নেওয়া অনেক কঠিন। শিক্ষকদের গাফিলতির কারণে এই ফলাফল।’

খুলনার সরকারি ব্রজলাল কলেজের (বিএল) শিক্ষার্থী দীপেন্দু মণ্ডল বলেন, ‘আমাদের ৪ বছরে কোর্স শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ৬ বছর সময় চলে গেছে জীবন থেকে। তারপর আবার চাকরির বয়স কমে যাচ্ছে। কিন্তু এত কিছুর পরও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্ব না দিয়ে খাতা দেখার কারণে হাজারো শিক্ষার্থীকে এক বিষয়ে ফেল করিয়ে দিয়ে আরও ভয়াবহ বিপদে ফেলে দিয়েছে। আমার বিভাগের ৮০ ভাগ শিক্ষার্থী সাহিত্য সমালোচনা বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে।’

প্রকাশিত ফলাফলের উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আগামী ২৯ জুলাই সকাল ১০টা থেকে ২১ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন করা যাবে। ২২ আগস্ট বিকেল ৪টা পর্যন্ত ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া যাবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে (িি.িহঁ.ধপ.নফ) এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024368762969971