সহায়ক বইয়ের প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে

প্রফেসর দীপক কুমার নাগ |

ইংরেজিতে একটি স্বতঃসিদ্ধ কথা রয়েছে ‘The more you read the more you learn.’ অর্থাৎ যত পড়বে তত শিখবে। অথবা বলা যায়, ‘Practice makes a man perfect.’
উপরোক্ত কথাগুলোতে সর্বত্রই বেশি পড়াশুনা ও বিষয়ের ওপর অনুশীলন করার কথা বলা হয়েছে। আর এ পড়াশুনা ও অনুশীলনের জন্য সর্বাধিক প্রয়োজন পুস্তকের। এক্ষেত্রে অপর্যাপ্ত তত্ত্ব ও তথ্য দিয়ে নির্দিষ্ট একটি বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিয়ে তাদের কাছ থেকে ভালো ফলের আশা করা বাতুলতা বৈ অন্য কিছু নয়! এজন্য প্রয়োজন একাধিক সহায়ক  বইয়ের।

যতদূর জানি, বাজারে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন বিষয়ের একাধিক পুস্তক রয়েছে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় বিগত দিনের ভালো ফলাফল করার পেছনে একাধিক সহায়ক  বইয়ের যে অবদান রয়েছে, তা অনস্বীকার্য। এবার দৃষ্টি দেওয়া যাক এসএসসি ও এইচএসসি’র বোর্ড পরীক্ষার প্রশ্নের দিকে। এসএসসি ও এইচএসসি চূড়ান্ত পরীক্ষায় বোর্ড কর্তৃক প্রণীত প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য যে সমস্ত প্রশ্নাবলি দেওয়া হয়ে থাকে, তা কি ঐ নির্দিষ্ট করা বইতে আছে? বিজ্ঞান বিভাগের Physics, Chemistry, Biology I Math-এ প্রতিটি বিষয়ের প্রায় দশ থেকে বারোটি সহায়ক বই রয়েছে। ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগের প্রতিটি বিষয়ের ওপর অনুরূপ সহায়ক  বই রয়েছে, যা অনুশীলন করে শিক্ষার্থীরা জ্ঞানের কলেবর বৃদ্ধিসহ কাক্সিক্ষত ফল লাভে সমর্থ হচ্ছে। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের অন্তর্গত হিসাববিজ্ঞান একটি গুরুত্বপূর্ণ Subject । যে বিষয়ের ওপর অগাধ জ্ঞান লাভের জন্য প্রচুর পরিমাণে অঙ্কের অনুশীলন অবশ্যই করতে হয়। কেননা এ বিষয়ের অঙ্কগুলো স্বতন্ত্র ধরণের, যার একটার সঙ্গে আরেকটার কোনো মিল নেই। এ বিষয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় আর্থিক বিবরণী । একটি নির্দিষ্ট করা বইতে উক্ত অধ্যায়ে মাত্র ৩টি উদাহরণ এবং ৩টি সমস্যার (পৃষ্ঠা সীমাবদ্ধ থাকায়) অঙ্ক দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এমন গুটিকয়েক অঙ্ক দিয়ে প্রতি অধ্যায়ের বিষয়বস্তু সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করা একেবারেই সম্ভব নয়। একই অবস্থা বিজ্ঞান ও মানবিক বিভাগের বিভিন্ন বিষয়ে বিরাজমান।

এমতাবস্থায় শিক্ষকদের এ বিষয়গুলো পড়াতে গিয়ে সহায়ক বইয়ের সহায়তা নেওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। তাছাড়া সংক্ষিপ্ত কলেবরের বই থেকে পড়ালে শিক্ষার্থীদের বিষয় সম্পর্কেও কোনো কিছু বোঝানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। একটি নির্দিষ্ট বইতে নির্দিষ্ট সংখ্যক পৃষ্ঠা বেঁধে দেওয়ায় Practice করার মতো অঙ্ক একেবারেই দেওয়া সম্ভব হয়নি।

এবার আসা যাক উচ্চ শিক্ষার ভর্তির ক্ষেত্রে। মেডিক্যাল, বুয়েট এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীকে মেধা যাচাইয়ের জন্য যে সমস্ত প্রশ্ন দেওয়া হয়ে থাকে তার উত্তর কখনোই একটি বই থেকে পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে একাধিক সহায়ক বইয়ের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। মেডিক্যালে ভর্তিচ্ছু একজন শিক্ষার্থীকে দেখেছি যে, বিগত পরীক্ষার বিভিন্ন বছরের প্রশ্নের সমাধান করতে গিয়ে Biology বিষয়ের ওপর তাকে ১৩টি বই থেকে সমাধান খুঁজে বের করতে হয়েছে।
আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে শিক্ষাবিস্তারের জন্য প্রতি বিষয়ের ওপর একাধিক বই রয়েছে। আমার সংগ্রহশালায় উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে হিসাববিজ্ঞানের ওপর দেশি ও বিদেশি বই মিলে প্রায় ১৫টি বই রয়েছে। তাহলে বাস্তবতার নিরিখে একথা বলা যায় যে, শিক্ষাবিস্তারে ও পর্যাপ্ত জ্ঞান লাভের জন্য নির্ধারিত একটি বই কোনোভাবেই যথেষ্ট নয়। মাত্র একটি বই দিয়ে জ্ঞানার্জনের পরিধিকে সীমাবদ্ধ করে রাখলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য কখনোই শুভ ফল বয়ে আনবে না। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, সহায়ক বইটি অবশ্যই নির্ভুল, মানসম্মত, তত্ত্ব ও তথ্যসংবলিত হতে হবে।

‘প্রথম আলো’ পত্রিকার তথ্য মতে, সারা দেশে যেখানে মাত্র ৪৬ শতাংশ শিক্ষক সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরিতে সক্ষম সেখানে সহায়ক বই ব্যতীত শতভাগ শিক্ষার্থীকে যথার্থ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা কীভাবে সম্ভব? সীমাবদ্ধ জ্ঞানের দ্বারা দুর্বল শিক্ষার্থীরা যখন উচ্চ শিক্ষা অর্জনে আগ্রহী হবে তখন তারা তাদের বিদ্যার দরিদ্রতা, জানার অপ্রতুলতা অনুভব করবে এবং কাক্সিক্ষত সাফল্য অর্জনে ব্যর্থ হবে। ভাবী প্রজন্মের এ ব্যর্থতা আমাদের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দিবে।

মানসম্মত শিক্ষা ও জ্ঞানার্জনের জন্য যে বইতে তত্ত্ব ও তথ্যের অপ্রতুলতা, সৃজনশীল সম্পর্কে স্বল্প ধারণা রয়েছে, সহায়ক  বই ব্যতীত কীভাবে তারা তাদের দুর্বলতা কাটিয়ে পরীক্ষা প্রস্তুতিতে আত্মবিশ্বাস অর্জন করে ভালো ফলাফল করতে সক্ষম হবে? এ ব্যাপারে উচ্চ পর্যায়ের সম¥ানিত নীতিনির্ধারক ব্যক্তিবর্গের প্রতি গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টির ক্ষেত্রে সুবিবেচনা করার জন্য অনুরোধ রাখছি এবং প্রজন্মের শিক্ষাব্যবস্থাকে সংকুচিত না করে বরং তা প্রসারের জন্য একাধিক সহায়ক  বই পাঠে উৎসাহিত করার প্রত্যাশা করছি।
লেখাটি একান্তই আমার ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনার বহিঃপ্রকাশ। এখানে একটি কথা জোর দিয়ে বলা যায়, একাধিক সহায়ক বই থাকলে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী অবশ্যই তা পড়বে; এতে ক্ষতির কিছু নেই বরং লাভই।

প্রফেসর দীপক কুমার নাগ : প্রাক্তন পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এবং অধ্যক্ষ, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ঢাকা।

[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় - dainik shiksha অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত হিটস্ট্রোকে সাতক্ষীরায় শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে সাতক্ষীরায় শিক্ষকের মৃত্যু হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় - dainik shiksha হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ করতে শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশ - dainik shiksha চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ করতে শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশ শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ - dainik shiksha শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি - dainik shiksha সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027749538421631