সাঁতারের পোষাক পরে ছবি দিয়ে সেই বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যঙ্গ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রাক্তন শিক্ষিকার অভিযোগ, সাঁতারের পোষাক পরা একটি ছবি তার সামাজিক মাধ্যমে ছিল। সেটি দেখে এক ছাত্রর পরিবার অভিযোগ করায় তাকে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হয়।

বিষয়টি বেশ কিছুদিন আগের হলেও অতি সম্প্রতি তা সামনে এসেছে একটি সংবাদমাধ্যমে। তার পরে তা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে জোরেশোরে প্রতিবাদ হচ্ছে।

প্রতিবাদের ধরণ হিসাবে অনেক নারী সাঁতারের পোশাক পরে ছবি পোস্ট করছেন। আবার 'পোশাক আমার স্বাধীনতা' এই জাতীয় পোস্টও করছেন অনেকে।

সাঁতারের পোশাক পরে কীসের প্রতিবাদ করছেন এই নারীরা

সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকা একটিমাত্র সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার পরে আর কারও সঙ্গে কথা বলতে চাইছেন না বিষয়টিতে আদালতে আছে বলে। আর সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয় কোনও মন্তব্যই করেনি এখনও পর্যন্ত।

ওই অপসারিত শিক্ষিকা একটি দৈনিককে যা বলেছেন, তা হল, ব্যক্তিগত ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে তিনি সাঁতারের পোশাক পরা একটি ছবি দিয়েছিলেন। সেটি কোনোভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র দেখতে পায়। ওই ছাত্রের অভিভাবকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযোগ জানান ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে।

ওই শিক্ষিকা জানাচ্ছেন ওই অ্যাকাউন্টটি তার 'প্রাইভেট' করা আছে, তাই সেখানে যে কেউ তার ছবি দেখতে পারে না। তার দাবী যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার অনুমতি না নিয়ে ওই ছবির প্রিন্ট আউট নেয় এবং তার সামনেই শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সদস্যদের দেখানো হয় সেটি।

কেন সাঁতারের পোশাক পরে এই প্রতিবাদ?

ফেসবুকে নিজের সাঁতারের পোশাক পরা ছবি পোস্ট করেছেন অদিতি রায়। 'টেক দ্যাট জেভিয়ার্স' হ্যাশট্যাগ দিয়ে তিনি ছবিটি পোস্ট করেছেন।

তিনি জানাচ্ছিলেন, "সমুদ্রে স্নান করার ছবি ওটা, আর সেখানে ওই পোষাকেই নামা উচিত বলে মনে হয়। আর ছবিটা দিয়ে আমি আমার প্রতিবাদটা জানালাম।"

তিনি বলছিলেন,"যা ঘটেছে সেন্ট জেভিয়ার্সে, তা একটা ঘৃণ্য ঘটনা। একজন শিক্ষিকা তার ব্যক্তিগত জীবনে কী করছেন, সেটা তো তার ব্যক্তিগত পরিসর। সেখানে ঢুকে পরে কোনও ছাত্র যদি শিক্ষিকার ছবি দেখে উত্তেজিত হয়, তাহলে দোষটা তো সেই ছাত্রের। এইসব ছাত্ররা বড় হয়ে তার বান্ধবী বা স্ত্রীকে নির্দেশ দিতে থাকবে যে কী পরতে হবে।"

"ছোট পোশাক পরা মেয়েদের দেখলে এধরণের ছেলেদের মনেই ধর্ষণের ইচ্ছা জাগে," মন্তব্য অদিতি রায়ের।

'কেউ কেন আমাকে ডিক্টেট করবে যে আমার কোনটা করা উচিত'?

মা-মেয়ে দুজনেই সাঁতারের পোশাক পরে ছবি পোস্ট করেছেন সুজাতা ঘোষও।

"আমি মা, সংসার করি, আবার ব্যবসাও করি। সম্পূর্ণ স্বাধীন আমি। তাই আমাকে কেউ ডিক্টেট কেন করবে যে আমার কোনটা করা উচিত আর কোনটা অনুচিত! আমি যেমন কোনও নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে সুইম স্যুট পরে যাব না, আবার তেমনই সাঁতার কাটতে গিয়ে আপাদমস্তক মুড়িয়ে স্নান করতে নামব না," বলছিলেন মিসেস ঘোষ।

তার কথায়, "সেন্ট জেভিয়ার্সে একজন শিক্ষিকার স্বাধীনতায় যেভাবে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে, তার জন্য ওই ছাত্রটি যতটা দায়ী, তার বাবামাও ততটাই দায়ী। তারা নিজের সন্তানকে এটা শেখাননি যে শিক্ষিকাকে কীভাবে সম্মান জানাতে হয়। আবার কর্তৃপক্ষও ছাত্রটিকে শেখায়নি যে সে কতবড় অন্যায় করেছে।"

এরজন্য যা যা প্রতিবাদ হবে, সেখানে সক্রিয়ভাবেই হাজির থাকবেন বলে জানাচ্ছিলেন সুজাতা ঘোষ।

'শিক্ষিকার ছবিতে কেন গোপনে নজর রাখবে ছাত্রটি'

অনেকে যেমন নিজে সাঁতারের পোশাক পরে ছবি দিচ্ছেন, তেমন আবার অনলাইনে চিঠি লিখেও প্রতিবাদ করছেন।

অনুরাধা রায়চৌধুরীর মতো কেউ কেউ আবার 'টেক দ্যাট জেভিয়ার্স' হ্যাশট্যাগ দিয়ে লিখিত প্রতিবাদও জানাচ্ছেন।

তিনি বলছিলেন, "আমরা আসলে ছেলেদের সংবেদনশীল হওয়ার শিক্ষাটা দিই না। যতি শিক্ষা আমরা মেয়েদের দিই যে তুমি এটা করবে, এটা করবে না। অথচ ছেলেদের এটা বোঝাই না তুমি কোনটা করবে না। ওই ছাত্রের বাবা মায়ের এটা তাকে বোঝানো উচিত ছিল যে পড়াশোনার বিষয়ের বাইরে গোপনে কোনও শিক্ষিকার ছবি দেখাটা অনুচিত। আর তার ভিত্তিতে শিক্ষিকাকে জাজ করো না এটা বলা উচিত ছিল তাদের।"

তার প্রতিবাদ সেন্ট জেভিয়ার্স কর্তৃপক্ষের অবস্থান নিয়েও।

"পড়ানোর বাইরে কোন শিক্ষিকা কী করছেন, সেটা দেখার দায়িত্ব ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কে দিল?" প্রশ্ন মিসেস রায়চৌধুরীর।

শুধু যে নারীরাই প্রতিবাদ করছেন ঘটনাটির, তা নয়।

সেন্ট জেভিয়ার্সের প্রাক্তনীরাও স্তম্ভিত

অনেক পুরুষকেও দেখা যাচ্ছে ঘটনাটি নিয়ে ফেসবুক, টুইটারে লিখতে। আবার প্রতিবাদ আসছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রাক্তনীদের কাছ থেকেও।

সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয় নতুন হয়েছে।

কিন্তু একই পরিচালন কর্তৃপক্ষের অধীনে যে সেন্ট জেভিয়ার্স স্বয়ংশাসিত কলেজ আছে, সেখানে পড়াশোনা করেছেন অর্য্যানী ব্যানার্জী।

"সেন্ট জেভিয়ার্সের প্রাক্তনী হয়ে আমরা ভাবতেই পারি না যে এরকম একটা ঘটনা হবে। অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। নীতিপুলিশগিরি করা সমাজের কোনও স্তরে, কোনও সময়েই মেনে নেওয়া যায় না। একজন শিক্ষিকার ব্যক্তিগত জীবনের কোনও একটা ছবি দেখে তা নিয়ে অভিযোগ জমা পরছে, এটা ভাবাই যায় না। অন্তত আমাদের সময়ে এরকম তো ছিল না কলেজটা," বলছিলেন মিজ ব্যানার্জী।

সূত্র : বিবিসি বাংলা


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026819705963135