সাংবাদিকদের পেনশনের ব্যবস্থা থাকা উচিত

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

'লাল গোলাপ'খ্যাত বর্ষীয়ান সাংবাদিক শফিক রেহমান ৯০তম জন্মদিনে বলেছেন, “সাংবাদিকদের পেনশনের ব্যবস্থা থাকা উচিত। তারা চাকরিজীবন শেষ করে যেন কিছু টাকা একসঙ্গে পান, তার ব্যবস্থা থাকতে হবে। এটা নিয়ে সবার কথা বলা উচিত।”

নানা অভিজ্ঞতা আর বাঁকবদলের মধ্যদিয়ে জীবনের ৯০ বছর উদযাপন করছেন দেশের বর্ষীয়ান সাংবাদিক শফিক রেহমান।

বিশেষ এই দিনে একান্ত আলাপে তিনি বললেন, দীর্ঘ এই জীবনে তার কোনো আক্ষেপ নেই।

শফিকে রেহমানের ভাষ্য, “কিশোর বয়সে যে ছেলেটি ক্রিকেট খেলা পারত না বলে স্কোর লেখায় বসিয়ে দেওয়া হতো, ফুটবল খেলার মাঠেও বন্ধুদের কাছে গুরুত্ব পেত না, সেই ছেলেটিই আমি। এই জীবনে ভালোবাসার কথা বলতে পেরেছি। ভালোবাসা দিবসকে ছড়িয়ে দিয়েছি। গিটার বাজাতে পারি। এটা তো কম কিছু নয়।”

শফিক রেহমান সাপ্তাহিক যায়যায়দিন এবং পরে দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। 'মৌচাকে ঢিল' নামে একটি পাক্ষিক পত্রিকা সম্পাদনা করেও আলোচিত হয়েছেন।

তবে টেলিভিশনে 'লাল গোলাপ' নামে একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করে তুমুল জনপ্রিয়তা পান। লেখক, সম্পাদক, টেলিভিশন অনুষ্ঠান উপস্থাপক এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি।

একদিন এই দেশে ভালোবাসা দিবস আরও বড় পরিসরে উদযাপিত হবে আশা প্রকাশ করে শফিক রেহমান বলেন, “আমি চাই সবাই প্রেম করুক, বিচ্ছেদ আমার ভালো লাগে না। ভালোবাসা দিবসে রাষ্ট্রীয় ছুটি ঘোষণা হোক।”

নিজের ভালোবাসার কথাও উঠে আসে গল্পে-আলাপে।

শফিক রেহমান বলেন, “আমার স্ত্রী সব সময় আমার পাশে ছিল বলেই আমি এত কিছু করতে পেরেছি। সেও অনেক গুণি, সব সময় আমাকে সাপোর্ট করে গেছে।”

ভালোবাসা দিবস আরেকটি কারণেও বিশেষ উল্লেখ তিনি বলেন, “এই দিনে মধুবালার জন্মদিনও।”

এই কথা বলেই আকাশের দিকে ‘উড়ন্ত চুমু’ ছুঁড়ে দেন শফিক রেহমান।

“অভিনেত্রী মধুবালা ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দের ভালোবাসা দিবসে অর্থাৎ ১৪ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে জন্মেছিলেন। অল্প বয়সে মারা যান। আমি তাকে খুব পছন্দ করতাম, এখনো করি। দিলীপ কুমারও তাকে পছন্দ করত।”

দেশের সাংবাদিকদের অনিশ্চিত জীবন নিয়ে ভাবারও পরামর্শ দেন তিনি।

তরুণ সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, “সবাইকে বুড়ো হতে হবে। আমি এই বয়সে এসে খুব উপলব্ধি করছি, সাংবাদিকদের পেনশনের ব্যবস্থা থাকা উচিত। তারা চাকরিজীবন শেষ করে যেন কিছু টাকা একসঙ্গে পান, তার ব্যবস্থা থাকতে হবে। এটা নিয়ে সবার কথা বলা উচিত। এটা অনেক বেশি জরুরি।”

শুধু সাংবাদিকতায় সীমাবদ্ধ না থেকে বহুমুখি গুণের চর্চারও পরামর্শ দেন বয়োজ্যেষ্ঠ এই সাংবাদিক।

“লেখালেখি করেও টাকা উপার্জন করা সম্ভব, আমি করেছি। সাংবাদিকতার পাশাপাশি সাহিত্যচর্চা করতে হবে, সৃজনশীল লেখালেখি করতে হবে। অন্য কাজে দক্ষতা থাকারও দরকার আছে। আমি গিটার বাজাতে পারি। যদি সাংবাদিক না হতাম, তাহলে গিটার শিখিয়েও চলতে পারব, এমন একটা ভাবনাও এক সময় কাজ করত। আমি কিন্তু একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টও। একাধিক দক্ষতা থাকলে তখন একটা না হলে আরেকটায় সফল হওয়ার সুযোগ বেড়ে যায়।”

প্রতিনিয়ত নিজেকে বদলাতে হবে, পাল্টাতে হবে বলেও মনে করে শফিক রেহমান।

গল্পে গল্পে নিজের নাম কেন 'রেহমান' হলো তার কথাও বলেন তিনি, “আমার নামটা তো অনেক বেশি কমন। শফিক নামে অনেকেই আছেন। লেখালেখি করেন এমন অনেকেও আছেন। তখন মনে হলো আমার নামটা আলাদা করতে হবে। ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে আমি শফিক রহমান না লিখে শফিক রেহমান লেখা শুরু করলাম।”

সোমবার সকাল থেকেই ইস্কাটনের বাসায় শফিক রেহমানকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে আসেন অনেকে।

বেলা ১২টার দিকে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী শুভেচ্ছা জানানোর পর বলেন, “শফিক রেহমান একটি ধ্রুপদী চরিত্র। বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ তিনি।

“এমন জ্ঞানদীপ্ত মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। ৯০ বছর বয়স হলেও ২০ বছরের তারুণ্যের উদ্দীপনা তার মাঝে এখনো বিরাজমান। লেখালেখি, সাংবাদিকতা এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে তিনি অনেক নতুনত্ব নিয়ে এসেছেন। এই মানুষগুলো আমাদেরকে আলোকিত করে বলেই আমরা স্বাধীনতা রক্ষার জন্য, দেশের জন্য কাজ করার প্রেরণা পাই।”

গত ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথানের পর ছয় বছরের প্রবাসজীবন থেকে ১৮ অগাস্ট দেশে ফেরেন শফিক রেহমান।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে ‘অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্রের’ মামলায় ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের অগাস্টে তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল।

ওই মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে পাঁচ মাস কারাগারেও থাকতে হয়েছিল শফিক রেহমানকে। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তরাজ্যে চলে যান তিনি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ বছরের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে কমিটি - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ বছরের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে কমিটি স্কুলে ভর্তির আবেদন করবেন যেভাবে - dainik shiksha স্কুলে ভর্তির আবেদন করবেন যেভাবে এইচএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের ফল বৃহস্পতিবার, জানবেন যেভাবে - dainik shiksha এইচএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের ফল বৃহস্পতিবার, জানবেন যেভাবে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা শুরু ২ জানুয়ারি - dainik shiksha অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা শুরু ২ জানুয়ারি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে গণঅভ্যুত্থানে আহতদের তোপের মুখে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা - dainik shiksha গণঅভ্যুত্থানে আহতদের তোপের মুখে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা দপ্তরসহ সাবেক শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রীকে চালাতেন পিয়ন! - dainik shiksha দপ্তরসহ সাবেক শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রীকে চালাতেন পিয়ন! ৬১০ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর শিক্ষা অধিদপ্তরে নিয়োগ চূড়ান্ত! - dainik shiksha ৬১০ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর শিক্ষা অধিদপ্তরে নিয়োগ চূড়ান্ত! গণভবন, ভিকারুননিসার বোন ও আইডিয়ালের কলোনি কোটা বাতিল - dainik shiksha গণভবন, ভিকারুননিসার বোন ও আইডিয়ালের কলোনি কোটা বাতিল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে ভাসানী, শেরেবাংলা-সোহরাওয়ার্দীকেও জাতির পিতা করার পরামর্শ - dainik shiksha ভাসানী, শেরেবাংলা-সোহরাওয়ার্দীকেও জাতির পিতা করার পরামর্শ সমন্বয়কদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই, সাবধান: সারজিস - dainik shiksha সমন্বয়কদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই, সাবধান: সারজিস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024271011352539