জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হলো গণতন্ত্র ও ন্যয়বিচারের ভিত্তি। স্বাধীন সংবাদমাধ্যম বস্তুনিষ্ঠ তথ্য উপস্থাপন করে আমাদের মতামত গঠনে এবং ক্ষমতায় থেকে সত্য বলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
কিন্তু সাংবাদিকের কণ্ঠরোধে দেশে দেশে আইন প্রণয়ন হচ্ছে। বিশ্বের প্রতি প্রান্তে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা আজ আক্রান্ত।
বুধবার (৩ মে) বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে এক বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, তিন দশক ধরে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের কার্যক্রমের কথা স্মরণ করে আসছে। এই দিবসটি একটি সহজ সত্যকে তুলে ধরে যা হলো - আমাদের সার্বিক স্বাধীনতা নির্ভর করে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা মানবাধিকারেরই প্রাণশক্তি।
গুতেরেস বলেছেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে সত্য হুমকির সম্মুখীন এবংবিদ্বেষপ্রসূত বক্তব্য সত্য ও অলীক কাহিনীর মধ্যেকার ফারাক, বিজ্ঞান ও ষড়যন্ত্রের মধ্যেকার ফারককে ম্লান করে দিচ্ছে। ক্রমান্বয়ে গুটি কয়েক মানুষের হাতে সংবাদমাধ্যম শিল্পের নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে। বহু স্বাধীন সংবাদ সংস্থা আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে এবং পড়ছে। সাংবাদিকের কণ্ঠরোধে দেশে দেশে আইন প্রণয়ন হচ্ছে। এতে সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধের সুযোগ যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা আরও বেশি হুমকিতে পড়ছে।
তিনি বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ইন্টারনেটে এবং প্রাত্যাহিক জীবনে সরাসরি আক্রমণের শিকার হচ্ছেন সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম কর্মীরা। হয়রানি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, আটক ও কারাবন্দী হওয়া যেন তাদের জীবনের নিয়মিত ঘটনা হয়ে উঠছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, বিশ্বে ২০২২ সালে অন্তত ৬৭ জন সংবাদমাধ্যমকর্মী নিহত হয়েছেন। আগের বছরের তুলনায় এই সংখ্যা অবিশ্বাস্যভাবে ৫০ শতাংশ বেশি। নারী সাংবাদিকদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অনলাইনে সহিংসতার শিকার হয়েছেন এবং এক-চতুর্থাংশকে সরাসরি হুমকি দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সংবাদমাধ্যমকর্মীদের সুরক্ষায় এবং তাদের ওপর হওয়া অন্যায়ের দায়মুক্তির প্রবণতার ইতি টানতে ১০ বছর আগে জাতিসংঘ প্ল্যান অব অ্যাকশন অন দ্য সেফটি অব জার্নালিস্ট বা সাংবাদিকদের নিরাপত্তায় কর্মপরিল্পনা প্রণয়ন করে। আজ এবং প্রতিটা বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম স্বাধীনতা দিবসে সারা বিশ্বকে অবশ্যই একসুরে কথা বলতে হবে। হুমকি ও আক্রমণ বন্ধ করো। পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সাংবাদিকদের আটক ও কারাবন্দী করা বন্ধ করো। মিথ্যা ও গুজব রুখে দাও। সত্য ও সত্য বলা মানুষগুলোকে আক্রমণ করা বন্ধ কর। সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো সাংবাদিকের পাশে সারা বিশ্ব দাঁড়িয়ে আছে।