সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান রাষ্ট্রের সম্পদ ছিলেন

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সততা, সত্যনিষ্ঠতা ও মানবিকতার কারণে সংবিধান ও আইন আদালত বিশেষজ্ঞ সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান মানুষের মাঝে চিরদিন বেঁচে থাকবেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নানান অজানা তথ্য তার অনুসন্ধানের মাধ্যমে উঠে এসেছে। তিনি রাষ্ট্রের সম্পদ ছিলেন। নিখুঁত ও তথ্যভিত্তিক লেখনীর কারণে সবার কাছে প্রিয় মানুষ হয়ে উঠেছিলেন মিজানুর রহমান। তার চলে যাওয়া দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে কাঁদিয়েছে।

মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের স্মরণসভায় তার সহকর্মী ও সুহৃদ-বন্ধুরা এসব কথা বলেন।

মিজানুর রহমান খান দৈনিক শিক্ষাডটকমের সম্পাদক ও শিক্ষা বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইরাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান খান এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক সমকালের সিনিয়র রিপোর্টার মসিউর রহমান খানের জ্যেষ্ঠ সহোদর।

 

ডিআরইউর সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু বলেন, সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান ৮০-র দশকে সাংবাদিকতায় আসেন। পড়াশোনার পাশাপাশি এ পেশায় জড়িত হয়েছিলেন তিনি। সুশাসনের জন্য কলম চালিয়ে গেছেন তিনি। আইন-আদালত, সংবিধান জ্ঞানসহ গণতন্ত্র নিয়ে নিজের ধারালো কলম চালিয়ে গেছেন মিজানুর রহমান।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ শাহেদ চৌধুরী বলেন, মিজানুর রহমান সাংবাদিকের বাইরেও একজন ভালোমনের মানুষ ছিলেন। অসহায় মানুষের জন্য তিনি উদার ছিলেন। তিনি যখন অসুস্থ ছিলেন হাসপাতালে তখন অনেক অচেনা মানুষ ভিড় করছিলেন। চিকিৎসকরা তা দেখে বিরক্ত হতেন। বিভিন্ন সময়ে মিজানুর রহমান আর্থিক ও নানাভাবে যাদের সহযোগিতা করেছিলেন, তারা হাসপাতালে এসে ভিড় জমাতেন।

তিনি আরও বলেন, মিজানুর রহমান প্রচলিত আইনের ধারা বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছিলেন এটি দিয়ে যুদ্ধাপরাধীর বিচার কাজ সম্ভব হবে। এরপর যুদ্ধাপরাধীর বিচার কাজ শুরু হয়।

বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ মো. মাজাহারুল হান্নান বলেন, সততা, নীতিবোধ ও মানবতা নিয়ে জীবন-যাপন করেন তাদের মধ্যে একজন নির্ভীক ও সাহসী সাংবাদিক মিজানুর রহমান।

ক্রাইম রিপোর্টাস এসোসিয়েশনের সভাপতি মিজান মালিক বলেন, মিজানুর রহমান খান সংবিধান, আইন ও সংসদ বিষয়ে অনেক পারদর্শী ছিলেন। এ বিষয়ে অনেক তিনি অনেক জ্ঞানার্জন করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে গোপন দলিল নিয়ে তিনি যে কাজ করেছেন সাংবাদিকদের মধ্যে তা আর কেউ করেনি। তিনি সাদাকে সাদা ও কালোকে কালো বলতেন। তাকে হারিয়ে এখন আমরা বুঝতে পারছি অনেক বড় সম্পদ আমরা হারিয়ে ফেলেছি।

মিজানুরের সহকর্মী এ কে জাকারিয়া বলেন, তিনি অনেক দিন অসুস্থ ছিলেন। অনেক মানুষ আমাকে ফোন করে মিজান ভাইয়ের খবর জানতে চাইতেন। তার মতো আরেকজন অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।

ডিআরইউর সাবেক সভাপতি শফিকুল করি সাবু বলেন, দলমত নির্বিশেষে তিনি সকলের কাছে প্রিয় ছিলেন। ভালো সাংবাদিক হওয়ার জন্য মিজানের আদর্শ অনুসরণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নথি পড়া সম্ভব ছিল না, তার লেখনীর মাধ্যমে আমরা তা পড়ার সুযোগ পেয়েছি।

সম্পাদকীয় বিভাগে কাজ থাকলেও সেখানে সীমাবদ্ধ ছিলেন না, রিপোর্টিং করা, ছবি তোলা নিয়ে তার বেশ আগ্রহ ছিল। কোনো বিশেষ রায় হলেই তার ওপরে বিশ্লেষণধর্মী লেখা প্রকাশ হতো। তিনি হাত খুলে লিখতেন, মন খুলে কথা বলতেন। একজন সাংবাদিককে এমন হওয়া উচিৎ। সহকর্মী সবার সঙ্গে তার ছিল ব্যাপক আন্তরিকতা।

সহকর্মী সোহরাব হোসেন বলেন, সত্য বলার জন্য মিজানুর রহমান খানকে একাধিকবার আদালতের সম্মুখীন হতে হয়েছে। আমরা এমন একটি পরিবেশে রয়েছি যেখানে সত্য বলা কঠিন। তিনি কখনও অন্যায়কে প্রশয় দেয়নি। তিনি যা দিয়ে গেছেন তা আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া। একজন মানুষ ২৪ ঘণ্টা সাংবাদিকতা করতেন। আমরা তার যথাযথ মর্যাদা দিতে পারিনি।

তিনি আরও বলেন, মিজানুর রহমান একজন সাংবাদিক ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন দেশের সম্পদ, সুপ্রিম কোর্টের আদালত পাড়ায় তিনি ছিলেন ব্যাপক জনপ্রিয় একজন ব্যক্তি। আইন-আদালতের বিষয়গুলোকে নিয়ে তার বিশ্লেষণধর্মী লেখনী সবাইকে তাক লাগিয়ে দিত। তার লেখা প্রকাশ হলে সেদিন সেই পত্রিকা শেষ হয়ে যেত। বিচারক, আইনজীবীসহ সবাই তার লেখা পড়তে আগ্রহী ছিলেন। অনেক সময় বিচারকরা বিচারকাজে মিজানুর রহমানের খোলা উদ্ধৃতি দিতেন। তিনি একমাত্র সাংবাদিক যিনি লেখার কারণে উচ্চ আদালতে দণ্ডিত হয়েছিলেন। মিনিটে তিনটা জামিন দেয়ার বিচারকের সমালোচনা করে লেখার কারণে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছিলেন আদালত। 

সহকর্মী সাজ্জাদ শরিফ বলেন, মিজানুর রহমান ছিলেন একজন ক্ষ্যাপাটে সাংবাদিক। প্রতিটি বিষয়ের মধ্যে তিনি বিচরণ করেছেন। তিনি মারা যাওয়ার পরে যেভাবে সকল স্তরের মানুষের মধ্যে প্রভাব পড়েছে তা বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিরল। সেটি সম্ভব হয়েছে তার সততা, একাগ্রতা ও একনিষ্ঠতার কারণে।

প্রথম আলোর সাবেক প্রধান প্রতিবেদন শরিফুজ্জামান পিন্টু বলেন, অনেকেই আপাদমস্তক সাংবাদিক কিন্তু মিজানুর রহমান ২৪ ঘন্টা সাংবাদিক। তিনি ছিলেন, সব্যসাচী সাংবাদিক। সাংবাদিকতার যে কোনো বিষয়েই ছিলো তার অগাধ পাণ্ডিত্য।  

ডিআরইউর সভাপতি মুরসালিন নোমানীর সভাপতিত্বে ও মসিউর রহমান খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাবেক সভাপতি ইলিয়াস হোসেন খান, সাইফুল ইসলাম, ইলিয়াস খান, রফিকুল ইসলাম আজাদ, সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, নারী বিষয়ক সম্পাদক রীতি নাহার, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাইদুর রহমান রুবেল, ল রিপোর্টাস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়াসিন প্রমুখ।

প্রায় দেড় মাস করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সঙ্গে লড়াই করে গত ১১ জানুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সংবিধান ও আইন আদালত বিশেষজ্ঞ সংবাদিক মিজানুর রহমান খান ।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির - dainik shiksha বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ - dainik shiksha ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029740333557129