সাংসদ আব্দুল মান্নানের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাবে আবেগ আপ্লুত প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানের মৃত্যুতে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন আওয়ামী লীগ সভাপতি সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার (১৯ জানুয়ারি) বিকেলে একাদশ সংসদের ৬ষ্ঠ অধিবেশনে বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ নেতা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন।

তিনি বলেন, আমার হাতে গড়া ছাত্রনেতারা যারা সামনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেবে, আওয়ামী লীগকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, ভবিষ্যতে আমরা যখন থাকবো না, এরাই আওয়ামী লীগকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমার কষ্ট হয় যখন আমার চোখের সামনে ওরা চলে যায় যা সত্যিই খুব দুঃখজনক।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মনে একটা কষ্ট নিয়ে আজ দাঁড়াতে হলো। পরপর তিনজন সংসদ সদস্য আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। আমি ১৯৮১ সালে ফিরে আসার পর মান্নানকে ছাত্রনেতা হিসেবে পেয়েছিলাম। ১৯৮৩ সালে তাকে ছাত্রলীগের সভাপতি করি। ছাত্রলীগের সভাপতি করার একটা ঘটনা আছে। যাদের ছাত্রলীগের সভাপতি করা হত আমি তাদের ইন্টারভিউ নিতাম, একা একা।

সংসদ নেতা বলেন, অনেকের ইন্টারভিউ নিতে গিয়ে যখন মান্নানকে বলছি যদি তোমাকে আমি না বানাই, তাহলে তুমি কী করবে? অনেকে হাউমাউ করে কেঁদে দিত। কিন্তু একটি ছেলেকে পেয়েছিলাম সে বলে দিয়েছিল না বানালে কিছু করার নেই, আমি আপনার সঙ্গে রাজনীতি করে যাব। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম তাকেই বানাবো। ওই সময়টা ছাত্রলীগের খুব খারাপ সময় ছিলো। অনেকেই ছাত্রলীগ ছেড়ে চলে গিয়েছিল ১৯৮২ সালে। সে কারণে ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করার খুব দরকার ছিল এবং তার সেই সাংগঠনিক দক্ষতা ছিল। সে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিল।

তিনি বলেন, পরবর্তীতে তাকে আওয়ামী লীগে নিয়ে আসি, আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক ছিল। বগুড়ার মত জায়গায় ওকে নমিনেশন দিলাম। খুব কঠিন জায়গা ছিল, এলাকাটা দুর্গম এবং রাস্তাঘাট ছিল না। খুবই অনুন্নত একটি জায়গা। সেখানে তাকে যখন নমিনেশন দিলাম, মান্নান সেখানে থেকে জিতে আসলো, পর পর তিনবার সেখান থেকে সংসদ সদস্য।

স্মৃতিচারণ করে সংসদ নেতা বলেন, ঠিক মৃত্যুর দুইদিন আগে আমার সঙ্গে অনেক কথা বলল। আমাদের সেন্ট্রাল কমিটিতে নানক আসছে, ও আসতে পারেনি। বোধহয় মনে একটু দুঃখ ছিল। আমি বললাম আমি তো তোমাদের কাউকে ফেলে দেইনি। তুমি আওয়ামী লীগে ছিলে এবং তোমাকে আমি নমিনেশন দিয়েছি, সংসদ সদস্য হয়েছ। কথা বলার সময় দেখলাম তার শরীরটা একটু খারাপ। আমি ওকে বললাম তোমার শরীর মনে হয় ভালো না, তুমি একটু ভালোভাবে চিকিৎসা করো । ঠিক তারপরই হাসপাতালে ভর্তি ।

তিনি বলেন, হাসপাতালে ভর্তির পর আমি প্রতিদিন একবার ডাক্তার সৌরভের সঙ্গে কথা বলতাম, যেদিন মারা গেল তার আগের দিন রাত ৯টার সময় ডাক্তার সৌরভের সঙ্গে কথা বললাম। প্রতিদিন সৌরভের সঙ্গে কথা বলে ওর স্বাস্থ্যের খোঁজ খবর নিতাম। ওইদিনই ডাক্তার বললেন আপা ওর শরীরের অবস্থা ভালো না। ওকে আমরা কিছু করতে পারবো বলে মনে হয় না। শরীরটা খুবই খারাপ। এমন অবস্থা ছিল যে, আমি বলেছিলাম ওকে যদি বাইরে পাঠানো যায়, ডাক্তার বলল যে বাইরে পাঠানোর অবস্থা নাই। পরদিন সকাল বেলায় মৃত্যুর খবর। এটি সব থেকে দুঃখজনক।

তিনি আরও বলেন, ছাত্রজীবন থেকে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, এরশাদ বিরোধী আন্দোলন, জিয়া বিরোধী আন্দোলন ও খালেদা জিয়া বিরোধী আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে। বিভিন্ন সময়ে বহু ছাত্রনেতা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। একটা বৈরী পরিবেশে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যে আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি এবং ধারাবাহিকভাবে সরকার পরিচালনা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী সরকার আছে বলেই বাংলাদেশের উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু এই সমস্ত ছাত্র নেতারা দুঃসময়ে বিশেষ করে পঁচাত্তরের পর বিরাট অবদান রেখে গেছেন। ‌ অনেক কাজ করে গেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটা ক্ষেত্রে মান্নান অত্যন্ত দক্ষ ছিল, মেধাবী ছিল। যখন দলের প্রচার সম্পাদক ছিল, তখন প্রতিটি লিফলেট থেকে শুরু করে বিবৃতি লেখা আমি নিজে বসে থেকে ওকে দিয়ে লেখাতাম। যখন যে কাজ দিয়েছি প্রত্যেকটা দক্ষতার সাথে করেছে। ‌ আমার হাতে গড়া ছাত্রনেতারা এরাই আগামীতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেবে। ভবিষ্যতে আমরা যখন থাকবো না। আমার চোখের সামনে ওরা চলে যায়, সেটা সত্যিই খুব দুঃখজনক। ইউনুস মারা গেল, মান্নানের মৃত্যু, বাগেরহাটের মোজাম্মেল হক সাহেবের মৃত্যু। বাপ্পা মারা গেল। এটা আসলে দলের জন্য তো বটেই দেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035009384155273