সাতকানিয়ার অধিকাংশ মাদ্রাসায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাস হচ্ছেনা

এরফান উদ্দিন, সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম |

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার অধিংকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া পদ্ধতিতে ক্লাস হচ্ছে না। দক্ষ শিক্ষক না থাকা, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতা এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের দায়বদ্ধতা না থাকায়ই মূল কারণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাতকানিয়া উপজেলায় কলেজ আছে ৫টি (এমপিওভুক্ত ৩) টি কলেজ, ৩৪ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২৮ টি মাদ্রাসা রয়েছে। এর মধ্যে এটুআই প্রোগ্রামের সহায়তায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সাতকানিয়ার  ৪টি কলেজ, ২৪ টি স্কুল ও ১৬টি মাদ্রাসাসহ মোট ৪৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে মাল্টিমিডিয়া পদ্ধতির ক্লাসের আওতায় আনা হয়েছে।

এ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে একটি ল্যাপটপ, ইন্টারনেট মডেম, প্রজেক্টর, প্রজেক্টর স্কিন ও সাউন্ড সিস্টেমসহ মাল্টিমিডিয়া পদ্ধতিতে ক্লাসরুম শিক্ষার্থীদের আনন্দঘর শিখন পরিবেশ নিশ্চিত করেছে।

মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমকে সক্রিয় রাখার জন্য জেলা প্রশাসক ও জেলা শিক্ষা অফিসের সমন্বয়ে মনিটরিং বোর্ড গঠন করা হয়। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ৫ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম মনিটরিং কমিটি কাজ করছে। এ কমিটির আহবায়ক উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সদস্য সচিব মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার। তারাই উপজেলার মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম মনিটরিং ও মেন্টরিং করে থাকেন। এমএমসি প্রজেক্টের আওতায় শিক্ষকদের ১৪ দিনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ১৪ দিনের প্রশিক্ষণে পাওয়ার পয়েন্ট প্রোগামের  মাধ্যমে কনটেন্ট ও স্লাইট তৈরি করে শিক্ষার্থীদের কাছে সুন্দরভাবে উপস্থাপনে যথেষ্ট সক্ষম। কিন্ত যথাযথ তদারকি এবং কারণে ১৪ দিনের প্রশিক্ষণ কোন কাজে আসছে না। ফলে মুখ থুবরে পরছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের মাধ্যমে পাঠদান। নষ্ট হচ্ছে সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা।

প্রতিদিন ৬টি বিষয়ে পাঠদান নেয়ার কথা থাকলেও অল্প কিছু প্রতিষ্ঠানে দু’একটি ক্লাস নেয়া হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে কারিগরি ত্রুটির কারণে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নেয়া বন্ধ রয়েছে। প্রতিদিন ক্লাস শেষে অনলাইনে প্রতিবেদন দাখিল করার নিয়ম রয়েছে।

বিশ্বস্থ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা সদরে অবস্হিত ছৈয়দাবাদ এমদাদুল উলুম দুধু ফকির আলিম মাদ্রসায় বাংলা বিষয় ছাড়া আর কোনো সাবজেক্টে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস হয়না। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের ব্যাপারে অধ্যক্ষের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান ‍‍‌”আমি অধ্যক্ষ, মাদ্রাসার একাডেমিক ব্যাপারে আমার সিদ্ধান্তই বাস্তবায়ন হওয়ার কথা, কিন্ত মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সদস্য হোসেনের অসহযোগিতা এবং সেচ্ছাচারিতার কারণে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নিয়মিত করা যাচ্ছেনা। মাদ্রসায় কম্পিউটার মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, সাউন্ড সিস্টেম এবং সকল উপকরণ থাকা সত্বেও বিদু্ৎ বিলের দোহায় দিয়ে এসব উপকরণ ব্যবহার করতে দেয়া হচ্ছেনা বলে অভিযোগ করেন তিনি।”

কিন্ত অপর এক সূত্র থেকে পাওয়া যায় ভিন্ন তথ্য, নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক বলেন, “অত্র মাদ্রাসা থেকে মাল্টিমিডিয়া বা এমেমসি প্রশিক্ষণ নেন সহকারি শিক্ষক(সমাজ বিজ্ঞান) জাকরিয়া, প্রভাষক আবুল বশর, সহকারি মৌলভি আবদুল আজিজ, প্রভাষক আবদুন নূর,  সহকারি মৌলভি দেলোয়ার। তাদের মধ্যে প্রভাষক আবুল বশর এবং দেলোয়ার ব্যাতীত বাকিরা মাল্টি মিডিয়া ক্লাস নেন না। এদের মধ্যে প্রভাষক আবদুন নূর, আবদুল আজিজ মাল্টিমিডিয়া দূরে থাক কম্পিউটার চালু পর্যন্ত করতে জানে না।”

প্রতিদিনের ক্লাস প্রতিদিন ওয়েব সাইটের ড্যাশবোর্ডে ইনপুট দেওয়ার কথা থাকলেও এই মাদ্রাসায় ক্লাস না নিয়ে ইনপুট দেওয়া হয়। গত ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ৯ মার্চ এবং ২২ জুলাই উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে দুই দফায় ছৈয়দাবাদ মাদ্রাসায় শোকজ নোটিশ পাঠানো হয় নিয়মিত মাল্টিমিডিয়া ক্লাস না নেওয়ার কারণে। সাতদিনের মধ্যে ওই নোটিশের জবাব চাওয়া হয় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকের কাছে। তবে অভিযোগ আছে পরবর্তিতে উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে পরিদর্শনে এলে দুপুরে ভুড়িভোজের পর হলুদ খামে দফারফা হয়।

অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এ পদ্ধতিতে ক্লাস না নিয়ে অনলাইনে (এমএমসি) প্রতিদিন প্রতিবেদন দাখিল করে দিচ্ছেন। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এমএমসি) আগস্ট মাসের প্রতিবেদনে পর্যালোচনা করে দেখা যায় আগস্ট মাসে সাতকানিয়া উপজেলায় মাত্র তিনটি প্রতিষ্ঠানে এমএমসি ক্লাস হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেরানিহাট জামেউল উলুম ফাজিল মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান মাঝে মাঝে দু’একটি ক্লাস হয়। অধিকাংশ ক্লাস এ পদ্ধতিতে হয় না। সাতকানিয়া মহিলা আদর্শ কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির জাহেদা জানান, যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয় ছাড়া আর কোন বিষয়ে মাল্টিমিডিয়া পদ্ধতিতে ক্লাস হয় না।

কেউচিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার জানান, চার মাস ধরে প্রজেক্টর নষ্ট থাকায় মাল্টিমিডিয়া পদ্ধতিতে ক্লাস নিতে পারছি না। এ ব্যপারে কথা বলতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আজিম শরীফের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028228759765625