সাত কলেজে গণহারে ফেলের নেপথ্যে কতিপয় শিক্ষা ক্যাডার

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সাত সরকারি কলেজ শিক্ষার্থীদের গণহারে ফেল করানোর নেপথ‌্যে রয়েছেন  বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কতিপয় কর্মকর্তা। কিছু শিক্ষক ইন্টেনশনালি শিক্ষার্থীদের ফেল করিয়ে দিচ্ছেন। এই শিক্ষকরা পলিটিক্যালি মোটিভেটেড। ফেল করিয়ে কী আনন্দ পান তারা? বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকারের অবসরকালীন বিদায় অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ।

মহাপরিচালকের দেওয়া ১২ মিনিটের বক্তব‌্যটি ফেসবুকে ইতোমধ‌্যে ভাইরাল হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, ডিজির বক্তব‌্য অবশ‌্যই যুক্তিসঙ্গত। সাত কলেজের পেছনের অনেক ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ ঘটনার ভুক্তভোগী হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সাত কলেজের সমস‌্যা নিয়ে বক্তব‌্যের শুরুতেই অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘সাত কলেজের সমস্যা…। সাত কলেজ আসলেই একটা সংকটে পড়বে। সাত কলেজে এতো সমস্যা, আন্দোলন, অনেক ক্রাইসিস- এসবের পেছনে রাজনীতি কাজ করে। কিছু শিক্ষকের ইন্ধন কাজ করে।’

তিনি বলেন, ‘সাত কলেজের কোনো সমস্যাই থাকার কথা না। এতদিনে আমরাই জিয়ে রাখছি। কিছু শিক্ষক ইন্টেনশনালি শিক্ষার্থীদের ফেল করিয়ে দিচ্ছে। এই শিক্ষকরা পলিটিক্যালি মোটিভেটেড। ডিজি হিসেবে এই বিষয়গুলো নিয়ে সাত কলেজের সাথে বোঝাপড়া আছে আমার।’

‘কোনো শিক্ষার্থী ক্লাস না করলে, ইনকোর্স না দিলে তাকে ফরম পূরণ করার সুযোগ দেবে না… ঠিক আছে সে বাদ…। শিক্ষকরা এমন শিক্ষার্থীকে ফরম পূরণ করার সুযোগ দিয়ে কীভাবে ইনকোর্সে ৫-৬ নম্বর দেয়? প্রত্যেকবারই এইরকম ঘটনা ঘটছে….। এই শিক্ষার্থী লিখিত পরীক্ষায় ভালো করলেও দুইটা মিলে তার পাস আসবে না। আর এই শিক্ষার্থীরাই বর্তমানে নীলক্ষেতে আন্দোলন করছে। এর পেছনে অনেক শিক্ষক দায়ী রয়েছেন।’

মহাপরিচালক  বলেন, ‘আমার বুঝে আসতো না এসএসসি ও এইচএসসিতে ডাবল এ প্লাস পাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের শত শত শিক্ষার্থী কীভাবে নট প্রমোটেড হয়? একটি ডিপার্টমেন্টের সকল স্টুডেন্ট কীভাবে গণহারে ফেল করে? ঐ সকল ডিপার্টমেন্টে একজন শিক্ষার্থীও কি পাস করার মত ছিলো না?’

ঢাকা কলেজে অধ্যক্ষ থাকাকালীন ঘটনার স্মৃতি টেনে তিনি বলেন, ‘একজন শিক্ষক ঢাকা কলেজে ছিলেন। প্রমোশন পেয়ে উনি এই কলেজে থাকতে পারেননি, ইডেনে বদলি হোন। এতে তার মনে ক্ষোভ। ঢাকা কলেজে শিক্ষক হতে পারেননি বলে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের একটি কোর্সে সবাইকে ফেল করিয়ে দিয়েছেন…।’

তিনি আরো বলেন, ‘দিনের পর দিন নীলক্ষেতে শিক্ষার্থীদের সমাবেশের পেছনে কিছু শিক্ষকের ইন্ধন কাজ করে। ক্রাইসিসের সময় কাউকে পাওয়া যায় না। সবাই বলে, সব দোষ অধ্যক্ষের। তখন ছাত্র-ছাত্রীরা অধ্যক্ষকে গিয়ে ধরে। ঘটনা ঘটায় অন্য কেউ…। অনেকেই আছেন এই সমস্যাগুলো করেন আর বাসায় বসে মুচকি মুচকি হাসেন। আর সব সমস্যা দিয়ে দেন অধ্যক্ষের ওপর।’

‘একটি ছাত্রকে ফেল করানোর মধ্যে আপনাদের এত কীসের আনন্দ? ফেল করিয়ে দেওয়ার মধ‌্যে কোনো ক্রেডিট নেই। যে শিক্ষার্থী ফেল করলো তা সেই ডিপার্টমেন্ট, সেই শিক্ষক, তাদের ব্যর্থতা…। আপনার ছাত্র কেন ফেল করবে? আপনি তাকে পড়াতে পারেন না। আপনার ক্লাসে কেন ছাত্র আসে না? কারণ আপনি যোগ্য শিক্ষক না। আপনি নিজেকে ছাত্রের কাছে সেভাবে উপস্থাপন করতে পারেননি। কারণ আপনি তাকে ক্লাসে আনার মতো মোটিভেটেড করতে পারেননি। শিক্ষার্থীর কান্না যদি আপনার হৃদয়ে না লাগে, তাহলে আপনি শিক্ষক নামের কলঙ্ক।’

নেহাল আহমেদ বলেন, ‘আমি নিজেই ইডেন কলেজ এবং সোহরাওয়ার্দী কলেজের দুজন শিক্ষকের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে জানিয়েছিলাম। এদেরকে যেন কোনো খাতা কাটতে দেওয়া না হয়। এদের পরীক্ষা কমিটিতে রাখবেন না। এরা ছাত্রবান্ধব শিক্ষক না। ছাত্রদের মুখে কান্না দিয়ে তারা আনন্দ পায়।’

মহাপরিচালক হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘যারা ইন্টেলনশনালি নাম্বার কম দিচ্ছে, শিক্ষার্থীদের ফেল করিয়ে দিচ্ছে; এখানে সাত কলেজের অধ্যক্ষরা আছেন তাদের সহযোগিতায় এই শিক্ষকদের লিস্ট করবো। তাদের ঢাকা শহরে থাকার দরকার নেই।’তিনি বলেন, ‘সাত কলেজের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে গেলে অনেক সমস্যারই সৃষ্টি হবে। সত্য কথা বলা সবসময়ই কঠিন… লাগে। নিজের বিপক্ষে গেলে সবসময়ই লাগে…।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002964973449707