সাত কলেজ ক্যাম্পাসে নিয়মিত দেয়া হয় না মশা নিধন ওষুধ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের ক্যাম্পাস ও ছাত্রাবাসগুলোতে মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসের এমন কোনো জায়গা পাওয়া যায় না, যেখানে মশার উপদ্রব নেই। দিনের বেলাও শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কার্যক্রমের সময় মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে ছাত্রাবাস ও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় মশার কামড়ে বসতেই পারছে না শিক্ষার্থীরা। এসব মশার আক্রমণে প্রায় জ্বরে আক্রান্ত হন শিক্ষার্থীরা। সবচেয়ে বেশি মশার উপদ্রব ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, সরকারি কবি নজরুল কলেজ। শিক্ষার্থী ও কলেজ কর্তৃপক্ষের অভিযোগ সিটি কর্পোরেশন থেকে মাঝে মধ্যে মশা মারার যে ওষুধ দেয়া হয় তার কোনো কার্যকারিতা নেই, অন্যদিকে সিটি কর্পোরেশন বলছে প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মশা মারার নিজস্ব ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন মো. বিল্লাল হোসেন।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা কলেজে ভরদুপুরে গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস চলছে। সেই ক্লাসে শিক্ষার্থীদের বেঞ্চের পাশেই জ্বলছে মশার কয়েল! আবার অনেক জ্বলন্ত মশার কয়েলের ওপর বসে আছে মশা। এমন দৃশ্য ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে এখন স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। দিনের বেলায় মশার অত্যাচারে শ্রেণিকক্ষের পাঠদানে যথাযথভাবে মনোনিবেশ করতে পারছেন না তারা।

আর আবাসিক হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ আরও চরমে। দিনেদুপুরে মশারি টাঙিয়ে পড়াশোনা করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। সন্ধ্যা নামতেই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। সবচেয়ে বেশি মশার উপদ্রব কলেজের আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাস, পশ্চিম ছাত্রাবাস, আক্তারুজ্জামান ইলিয়াছ ছাত্রাবাস এবং উত্তর, দক্ষিণ ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীদের।

আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাসের নেওয়া আহমেদ বলেন, আমরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি, চত্বরে দোকানে চা খেতে বসলেই বুঝা যায় মশা কেমন, গণরুমে যারা থাকে তারা সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে। সিটি কর্পোরেশন কী ধোঁয়া দিয়ে যায়, ধোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গে মশা উড়ে। নিয়মিত ভালোমানের ওষুধ দিলে আমরা কিছুটা শান্তি পেতাম।

ইডেন মহিলা কলেজের আবাসিক ছাত্রীনিবাস থেকে শুরু করে ক্যাম্পাসের অনেক স্থানে শ্রেণিকক্ষে পর্যন্ত মশার উপদ্রব। কলেজটির ছাত্রীনিবাসের পানি নিষ্কাশনের কিছু ড্রেন আছে, নিয়মিত পরিষ্কার না করায় এগুলা থেকে মশার সৃষ্টি হয় বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) ছাত্রীনিবাস ও জেবুন্নেছা ছাত্রীনিবাস দুটির পেছনের দিক দিয়ে ময়লা পানি নিষ্কাশনের ড্রেনটি নিয়মিত পরিষ্কার না করায় ময়লা পানি জমে থাকে। হাসনা বেগম ছাত্রীনিবাসের পাশে একটি ড্রেন আছে সেটি সবসমই খোলা অস্থায় থাকে। এ ড্রেন পরিষ্কার করার জন্য ছাত্রীরা হোস্টেল সুপার বরাবর অভিযোগ দিলেও কোনো আমলে নেয় না কর্তৃপক্ষ।

জেবুন্নেছা ছাত্রীনিবাস শিক্ষার্থী জাকিয়া বলেন, মশার অবস্থা এমন যে, দিনের বেলায় ঘুমানো যায় না মশা এসে কানের কাছে গান শোনায়। মাসখানেক আগে ক্যাম্পাসে মশার ওষুধ দেয়া হয়েছিল, তার পর থেকে কোনো ওষুধ দেয়া হয়নি। সন্ধ্যার দিকে পুকুরপাড়ে বসা যায় না মশার জন্য। ২০ নভেম্বর আমার বান্ধবী পরীক্ষা দিতে গিয়ে মশার কামড়ে অসুস্থ হয়ে গেছে।

বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রীনিবাস ও ক্যাম্পাসে মশার উপদ্রব রয়েছে, বিশেষ করে দুটি ছাত্রীনিবাসের শিক্ষার্থীরা চমর ভোগান্তিতে পড়েছে। ছাত্রীনিবাসের শিক্ষার্থী ছালমা ইসলাম বলেন, হোস্টেলে মশার জন্য টেবিলে বসে পড়া অনেক কষ্টকর। বাধ্য হয়ে মশারি টাঙিয়ে পড়তে বসি। বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের হোস্টেল সুপার ড. মুশফিকা খাতুন বলেন, সিটি কর্পোরেশন প্রায় মশা নিধনের ওষুধ দিয়ে যায়, পাশাপাশি আমি নিজেই অ্যারাসল কিনে দেই যাতে শিক্ষার্থীরা কষ্ট না পায়।

কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ফিরোজ আলম বলেন, ক্যাম্পাসে মশার উপদ্রব এতটা বেশি যে কোথাও বসে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয়া যায় না। মশা নিধন ও বিস্তার রোধে কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। কলেজের ভেতরের ময়লার ড্রেন ও বাথরুমগুলো অপরিষ্কার থাকে।

সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী আহমেদ ফেরদাউস খান বলেন, মশার যন্ত্রণার কারণে শিক্ষার্থীদের ক্লাস বা পরীক্ষা দেয়াও দায়। প্রতিটি রুমেই মশার উপদ্রব রয়েছে। বিশেষ করে কলা ভবনের নিচ তলায় যারা ক্লাস করেন তাদের মশার কামড় খেতে হচ্ছে প্রতিদিন। মাস্টার্স ও বিজ্ঞান ভবনে একই অবস্থা। এছাড়াও কলেজের ছাত্রাবাসের অবস্থা আরও নাজুক। ছাত্রাবাসগুলোর এমন কোনো স্থান নেই যেখানে মশা নেই।

ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর নেহাল আহমেদ বলেন, সিটি কর্পোরেশন মশা মারার যে ওষুধ দেয় তার কোনো কার্যকারিতা নেই, তাদের উচিত হবে ভালোমানের ওষুধ প্রয়োগ করা যাতে মশা মারা যায়, তাহলে এতটা উপদ্রব থাকবে না।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রি জেনারেল ডা. মো. শরীফ আহমেদ বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত মশা নিধনের ওষুধ পাবলিক প্লেজে দিয়ে শেষ করতে পারি না, তার পরেও চেষ্টা করি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেয়ার জন্য, তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব মেশিন থাকা প্রয়োজন যেমনটি ঢাবির কয়েকটি হলে আছে, তাদের যে খাত আছে তা থেকে ব্যয় করবে। যদি প্রতিদিন ওই ওষুধ দেয়া হয় তাহলে মশা কমবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002551794052124