সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেকার তৈরির কারখানা : মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী

গাজীপুর প্রতিনিধি |

মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, আজকের যুবকেরা উদ্যোক্তা হতে চায় না। তারা সবাই চাকরি চায় এবং তা সরকারি চাকরি। আমাদের এই যে একটা প্রবণতা হয়ে গেছে সরকারি চাকরি করা আর লেখাপড়া না করে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের সার্টিফিকেট সংগ্রহ করা। আমি মনে করি, এটা জাতির জন্য এলার্মিং। সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এক অর্থে বেকার তৈরির কারখানা। আমাদের দেশে সাধারণ শিক্ষার চেয়ে কারিগরি শিক্ষা, কর্মমুখী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ানো উচিত। কারণ এসব ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ বেশি সৃষ্টি হয়।     

মঙ্গলবার দুপুরে গাজীপুরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ক্যাম্পাসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

মন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের দূর্ভাগ্য সবাই মনে করে একটা সার্টিফিকেট হলেই সরকারি চাকরি হবে। সরকারি চাকরি ছাড়া কোনো চাকরিকে আমরা চাকরি মনে করি না। এটা আমাদের জাতিগতভাবে একটা ধারণা। যখন একটা পিয়নের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়, তখন দেখা যায় ৮০ ভাগ প্রার্থী এমএ (মাস্টার্স) পাস করা।

মন্ত্রী বলেন, যদি চাকরি প্রার্থীদের বলি আমাদের এলাকায় অনেক প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান রয়েছে ওইসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি দিয়ে দেই। তখন তারা বলে না, অন্তত তাদের যেন ধান গবেষণা, কৃষি গবেষণার মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানে একজন শ্রমিক বানিয়ে দেই। পরে খোঁজ নিয়ে জানলাম, তাদের এ চাহিদা কেনো? কারণ, তাদের ধারণা সেখানে যারা চাকরি করে তাদের তেমন কোনো কাজকর্ম করতে হবে না। ওইসব প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক হলে হাজিরা দিলেই চলে। পরে ঠিকমতো বেতন পেয়ে যাবে। প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিলে সেখানে বেশি কাজ করতে হবে। বেতন বেশি পেলেও তারা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চায় না। আমরা কাজ করবো না, বেতন নেবো। এটা আমাদের একটা বড় রোগ হয়ে দেখা দিচ্ছে। 

মন্ত্রী বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি বড় আকারে বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট করা যায় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় আরও একটু পূর্ণতা পাবে। আমি মনে করি, আজকের এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধুর নামে যদি একটি গবেষণা ইনস্টিটিউট না হয়, তাহলে আমাদের দৈন্যতা প্রকাশ পাবে। এজন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ করেন।   

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর বক্তা শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, দেশের মানচিত্রসম বিস্তৃতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের। বর্তমান সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষতাভিত্তিক কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার ঘটানোর জন্য অনেক নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। আশা করছি, উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে এসব নব নব উদ্যোগ কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। 

শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, আমরা রূপকল্প ২০৪১ নিয়ে এগোচ্ছি। আমরা আগে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম। এটি এখন আমরা পেয়ে গেছি। বঙ্গবন্ধু কন্যা ডিজিটাল বাংলাদেশকে উদ্ভাবনীর বাংলাদেশ তৈরি করে একটা স্মার্ট বাংলাদেশ করবেন। এর ফলে আমরা সবদিক থেকে চৌকস হবো। আমাদের শিক্ষা হবে স্মার্ট, আর্থনীতি হবে স্মার্ট, আমাদের গভর্নেন্স হবে স্মার্ট, আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য হবে স্মার্ট। এই সব কিছুর মধ্য দিয়ে আমরা একটি স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরি করবো। সেই স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরি করতে হলে সবার আগে শিক্ষাটাকে স্মার্ট হতে হবে। 

তিনি আরও বলেন, শিক্ষাকে স্মার্ট বানাবার জন্যই আমরা কয়েক বছর ধরে নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে আগে শিক্ষাখাতকে স্মার্ট করতে হবে। এজন্য সব উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমাদের আন্তর্জাতিক ও জাতীয় কতগুলো লক্ষ্য রয়েছে। সেগুলো আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই অর্জন করতে সক্ষম হবো। 

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, আমরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে সত্যিকার অর্থেই একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে চাই। সে কারণেই স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস অবশ্যপাঠ্য করা হয়েছে। আমরা অ্যাকাডেমিক মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছি। ইতোমধ্যে ১২টি পিজিডি কোর্স চালু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ১৯টি শর্ট কোর্স চালু করতে যাচ্ছি। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে অনার্স প্রথম বর্ষে আইসিটি এবং তৃতীয় বর্ষে সফটস্কিল অবশ্যপাঠ্য হিসেবে চালু হবে। এর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের চিন্তার জগতে, মননে, মানসে নতুন সমাজের স্বপ্ন বুনে দিতে চাই। 

রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন রিমি, সংসদ সদস্য শামসুন নাহার, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিজামউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাছিমা বানু।

অনুষ্ঠান শেষে জাতীয় সংসদ সদস্য ও সংগীত শিল্পী মমতাজ বেগম, সরকারি সংগীত কলেজসহ জাতীয় পর্যায়ের শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। এর আগে  বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে একাডেমিক ভবনের সামনে এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় পায়রা এবং বেলুন উড়িয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের উদ্বোধন এবং আনন্দ র‌্যালি বের হয়। পরে ৩০ পাউন্ড ওজনের কেক কেটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও - dainik shiksha ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল - dainik shiksha বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক - dainik shiksha এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024549961090088