সাবজেক্ট ‘কম্পালসারি’ টিচার ‘অপশনাল’

চৌধুরী মুমতাজ আহমদ |

অন্য শিক্ষকদের মতো তারাও নিয়মিত ক্লাস নেন। আইসিটি বিষয়ের শিক্ষক তারা। বিশেষ জ্ঞান থাকায় ক্লাসের বাইরে বাড়তি হিসেবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল প্রকার কম্পিউটার কম্পোজ, ই-মেইল আদান প্রদান, ওয়েবসাইটে তথ্য আপলোড-ডাউনলোড, শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম, মাল্টিমিডিয়া ক্লাস পরিচালনা, পরীক্ষার ফল পৃষ্ঠা তৈরিসহ কম্পিউটার ও প্রযুক্তিনির্ভর সকল কাজ করেন তারা। সরকারি বেতনের হিসাবের খাতায় তাদের নাম ওঠছে না। এমপিওভুক্ত না হওয়ায় সারা দেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের ৫ হাজার ৭২ জন শিক্ষক অমানবিক দিনযাপন করছেন। বেঁচে থাকার লড়াইয়ে টিকে থাকতে আন্দোলনে নেমেও ফায়দা হয়নি আইসিটি শিক্ষকদের।

তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পথচলায় যাতে পিছিয়ে পড়তে না হয় সে লক্ষ্যেই ২০১২ সাল থেকে মাধ্যমিক স্তরে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত আইসিটি বিষয় বাধ্যতামূলক করা হয়। বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হলেও বিড়ম্বনা থেকে যায় এ বিষয়ের শিক্ষকদের জন্য। নতুন বিষয় হওয়ায় তারা এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না। ২০১১ সালের শেষের দিকে জারি হওয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপন তাদের এমপিও ক্ষেত্রে প্রধান বাধা। ওই বছরের ১৩ই নভেম্বর জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে নির্দেশনা ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন করে কোনো শ্রেণিশাখা-বিভাগ খোলা হলে এর বিপরীতে নিযুক্ত শিক্ষকের বেতন-ভাতা সরকারের পক্ষ থেকে বহন করা হবে না। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকেই শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বহন করতে হবে।

তখন ‘কম্পিউটার শিক্ষা’ নামে চালু থাকা তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষাদানের বিষয়টি বাধ্যতামূলক না হওয়ায় এটিও এ হিসাবের মধ্যে ঢুকে যায়। কিন্তু পরবর্তী বছরই যখন বিষয়টিকে বাধ্যতামূলক করা হলো তখন প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইসিটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। ‘শখে’ নয় বাধ্য হয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিতে হলেও আগের নির্দেশনার কারণে আইসিটি শিক্ষকদের বেতনের ভার থেকে যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাঁধেই। নিজেদের সামর্থ্য অনুসারে প্রতিষ্ঠানগুলো দায়সারাভাবে বেতন দেয় শিক্ষকদের। বিপাকে পড়তে হয় সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের। একই প্রতিষ্ঠানে অন্য বিষয়ের শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হওয়ার কারণে যেখানে কমপক্ষে ১৬ হাজার টাকা বেতন পান সেখানে আইসিটি শিক্ষকদের ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকায় সন্তুষ্ট থাকতে হয়। তবে আশায় ছিলেন এমপিওভুক্তির বাধা সরে গেলে সুখের দেখা পাবেন তারা। ৫ বছর অপেক্ষার পর তাদের সে আশাও মলিন হয়ে যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি পরিপত্রে। ২০১৬ সালের ২৮শে এপ্রিল জারিকৃত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক পরিপত্রে স্পষ্টভাবে নির্দেশনা দেয়া হয় সাধারণ শিক্ষা ও মাদরাসা শিক্ষাসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইসিটি বিষয়ে নিয়োগকৃত শিক্ষকদের বেতন ভাতাদি স্ব-স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বহন করতে হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন নির্দেশনায় চোখে অন্ধকার দেখেন আইসিটি শিক্ষকরা। আন্দোলনে নামেন তারা। আইসিটি পাঠদানকারী শিক্ষককে এমপিওভুক্তির দাবিতে ২০১৬ সালের ১৫ মে থেকে ক্লাস বন্ধ রেখে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন। ১৭ই মে আন্দোলনকারীদের হটাতে মাঠে নামে পুলিশ। জলকামান ব্যবহার করে রাস্তা থেকে সরানো হয় আন্দোলনকারীদের।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের প্রজ্ঞাপনের কারণে অধিকাংশ এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার বা আইসিটি বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রাখে। কিছু প্রতিষ্ঠান শিক্ষক নিয়োগ দিলেও তাদের জন্য নামমাত্র বেতন-ভাতার ব্যবস্থা করা হয়। পরে আইসিটি বিষয় বাধ্যতামূলক হলে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক নিয়োগ দিলেও তারা বেতনভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ রকম ১ হাজার ২৪৪ জন শিক্ষককে এমপিও সুবিধা দেয়ার জন্য ২০১৬ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর একটি তালিকা ও প্রস্তাবনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। তবে সে প্রস্তাবনাটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাচ্ছে না। পরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে আবারও একটি প্রস্তাবনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে মাউশি। তবে পুরো প্রক্রিয়াটি এখনো চিঠি চালাচালির পর্যায়েই আছে। ইতিমধ্যে বেতন-ভাতা বঞ্চিত আইসিটি শিক্ষকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭২ জনে।

সৌজন্যে : মানবজমিন।

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003176212310791