সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে এইচএসসির ফল কীভাবে

মাছুম বিল্লাহ |

আমাদের স্মরণে আছে, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসায় এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। পরে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায ফলাফলের গড় করে শিক্ষার্থীদের এইচএসসির মূল্যায়ন ফল প্রকাশ করা হয়, যা অটোপাস নামে পরিচিতি পায়। তার মানে হচ্ছে, পূর্বে যে পরীক্ষা হয়েছে সেগুলোর ফলাফলের অনুপাতে অন্য বিষয়গুলোতে নম্বর প্রদান করার রীতিই সাধারণত সাবজেক্ট ম্যাপিং হিসেবে পরিচিত। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে পরীক্ষা ছাড়া অর্থাৎ আটোপাস না দিয়ে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত ছিলো তৎকালীন সরকারের। বিষয়টি আরো একটু পরিষ্কার করা যাক। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসি, আলিম ও ভোকেশনাল পরীক্ষা করোনা মহামারির কারণে যথা সময়ে অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। এপ্রিল মাসের নির্ধারিত পরীক্ষা ৮ মাস পিছিয়ে ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষার নম্বর ও সময় কমিয়ে এ পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। পরীক্ষার্থীদের মধ্যকার সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের পরীক্ষার্থীদের একই সময়ে পরীক্ষা গ্রহণ না করে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে সংশোধিত ও পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয় অটোপাসের সমালোচনা থেকে শিক্ষার্থীদের মুক্তি দেয়ার জন্য।

এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে এসএসসি পরীক্ষায়  অংশগ্রহণ করেছিলেন, সেই নম্বরের ওপর ভিত্তি করে সাবজেক্ট ম্যাপিং করা। অন্যটি হচ্ছে কলেজভিত্তিক টেস্ট পরীক্ষার ফল। যেকোনো একটি মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয় চাইলে সাবজেক্ট ম্যাপিং করতে পারে, অর্থাৎ যে সাবজেক্টে পরীক্ষা নেয়া হয়নি, সে সাবজেক্টের নম্বর সেখান থেকে নিয়ে আসা। একজন শিক্ষার্থী ইতেমধ্যে বাংলা, ইংরেজি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং পদার্থ বিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান, যুক্তিবিদ্যা বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছে। আর বাকি রয়েছে তিনটি বা চারটি বিষয়ের পরীক্ষা। সাবজেক্ট ম্যাপিং বলতে বোঝানো হয়েছে যে পরীক্ষাগুলো ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীরা দিয়েছে নিয়ম অনুযায়ী সেগুলো সেভাবেই মূল্যায়ন করতে হবে এবং ফল তৈরি করতে হবে। আর বাকি যেসব পরীক্ষা তারা দিতে পারেনি যেমন-বিজ্ঞান বিভাগের রসায়ন, জীববিজ্ঞান ও উচ্চতর গণিত। ব্যবসা প্রশাসন বিভাগের ব্যবসার সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা, উৎপাদন ও বিপণন, ফিন্যান্স, ব্যাংকিং ও বিমা, মনাবিক বিভাগের ভূগোল, সমাজকর্ম, সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি, ইতিহাস ও কৃষি শিক্ষা ইত্যাদি সাবজেক্ট বাকি আছে। এই সকল বিষয়ের নম্বর এসএসসি-এর মাধ্যমে নিয়ে আসতে হবে। তবে এসএসসির ক্ষেত্রে মানবিক বিভাগের কয়েকটি সাবজেক্ট নেই, সে ক্ষেত্রে যে সাবজেক্ট আছে তার ভিত্তিতে মুল্যায়ন করার দাবি করছে শিক্ষার্থীরা। 

এই জটিলতায় জড়াতে চায় না অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক, তারা অটোপাসের দুর্নামের ভাগীদারও হতে চাচ্ছেন না। তাই স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করার সিদ্ধান্তে হতাশ ও ক্ষুব্ধ  পরীক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ। অনেক অভিভাবকও সরকারের এ সিদ্ধান্তে খুশি নন। তারা ফের পরীক্ষা আয়োজনের দাবি জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন পরীক্ষা বাতিল করা সমস্যা সমাধানের ভালো বিকল্প নয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাও বলেছেন, তারা পরীক্ষা বাতিলের পক্ষে নন। পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তে খুশি নন খোদ শিক্ষা উপদেষ্টাও। তিনি সম্মেলেন বলেন, এইচএসসির বাকি পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত আরো বিচার-বিবেচনা করে নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ে ঢুকে যা করেছে তা দুঃখজনক। পরীক্ষা বাতিল চাচ্ছে হয়তো কয়েক হাজার শিক্ষার্থী কিন্তু এর বাইরে তো প্রায় চৌদ্দ লাখের মতো পরীক্ষার্থী আছেন তারা কজন চাচ্ছেন সেটি দেখার সময়তো পাওয়া গেলো না। 

এখন সিদ্ধান্ত যা হয়েছে তাতে কি করা যায়? যে বিষয়গুলোর ওপর পরীক্ষা হয়েছে সে বিষয়গুলোর নম্বর ইতোমধ্যে বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে আছে। বাকি বিষয়গুলোর নম্বর দেয়ার ক্ষেত্রে দুটি প্রস্তাবনা রাখছি। এক, অনেক কলেজেই প্রি-টেস্ট ও টেস্ট পরীক্ষার নম্বর রেকর্ড আকারে রাখা হয় এবং টেস্ট পরীক্ষা যেহেতু বেশিদিন হয়নি তাই সেই রেকর্ড কলেজগুলোতে থাকার কথা। তা ছাড়া টেস্ট পরীক্ষার নম্বর বেশ কয়েক বছর যাবত বোর্ডেও পাঠানোর রেওয়াজ ছিলো।

বোর্ডে যদি নম্বর থেকে থাকে তাহলে সেই নম্বর বিবেচনা করতে হবে। আর বোর্ডে না থাকলে কলেজের প্রি-টেস্ট ও টেস্ট পরীক্ষার নম্বর সংগ্রহ করতে হবে। এই দুটোর মধ্যে যেটির নম্বর বেশি হবে সেটি এইচএসসির জন্য গ্রহণ করতে হবে। যেমন-বাংলায় টেস্ট পরীক্ষায কোন শিক্ষার্থী যদি ৬৫ নম্বর পায় আর প্রি-টেস্ট পরীক্ষায় যদি ৬২ নম্বর পেয়ে থাকে তাহলে ৬৫ গ্রহণ করতে হবে। দুটোর নম্বরে বিশাল তফাৎ থাকলে দুটোর গড় করে নম্বর নিতে হবে। ইংরেজিতে প্রি-টেস্টে যদি পায় ৪৮ এবং টেস্টে যদি পায় ৬৮ তাহলে দুটোর গড় ( ৪৮+৬৮=১১৬) এর গড় নম্বর ৫৮ গ্রহণ করতে হবে। এটি করা হলে যেসব কলেজ প্রি-টেস্ট ও টেস্ট পরীক্ষার নম্বর সংগ্রহে রাখে না সেই কলেজগুলোও এখন থেকে সচেতন হবে। উল্লেখ্য, দৈনিক শিক্ষাডটকম কলেজ র‌্যাঙ্কিংয়ের সময়ে এই বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়েছিলো। যেসব কলেজ প্রি-টেস্ট ও টেস্ট পরীক্ষার নম্বর দিতে অপারগ হবে সেসব ক্ষেত্রে এসএসসির নম্বর বিবেচনায় নিতে হবে। 

প্রাকটিক্যালের ক্ষেত্রেও প্রি-টেস্ট ও টেস্ট পরীক্ষার নম্বরের ওপর ভিত্তি করে প্রাকটিক্যালের অংশের ওপর লিখিত পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের শতকরা হারে নম্বর প্রদান করতে হবে। যেমন- লিখিত ৭৫ নম্বরের মধ্যে যদি ৬০ নম্বর পায় তাহলে প্রাকটিক্যাল ২৫-এর মধ্যে ২০ ধরা হবে। ওই নম্বর না পাওয়া গেলে এসএসসিতে যে নম্বর পেয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে প্রাকটিক্যালের অংশের ওপর শতকরা হারে নম্বর দেয়া যেতে পারে। এটি জটিলতা কমাতে সহায়তা করবে।

লেখক: ক্যাডেট কলেজের সাবেক শিক্ষক 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! এবারও ভারতে ছাপা হবে ১ কোটি পাঠ্যবই - dainik shiksha এবারও ভারতে ছাপা হবে ১ কোটি পাঠ্যবই ইউজিসিতে দুইজন নতুন সদস্য - dainik shiksha ইউজিসিতে দুইজন নতুন সদস্য বুয়েটের নতুন ভিসি অধ্যাপক বদরুজ্জামান - dainik shiksha বুয়েটের নতুন ভিসি অধ্যাপক বদরুজ্জামান উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি ওবায়দুল ইসলাম - dainik shiksha উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি ওবায়দুল ইসলাম ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি হতে না দেয়ার হুঁশিয়ারি বদলি প্রত্যাশীদের - dainik shiksha ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি হতে না দেয়ার হুঁশিয়ারি বদলি প্রত্যাশীদের নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! - dainik shiksha নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে যা যা করতে হবে - dainik shiksha ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে যা যা করতে হবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নতুন ডিজি আব্দুল হাকিম - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নতুন ডিজি আব্দুল হাকিম কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030698776245117