বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ জিল্লুর রহমানের আজ জন্মদিন। তিনি ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মেহের আলী মিঞা ছিলেন একজন আইনজীবী, তৎকালীন ময়মনসিংহের লোকাল বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং জেলা বোর্ডের সদস্য।
তার স্ত্রী আইভি রহমানও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের ২১ আগস্ট রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় জিল্লুর রহমান তার সহধর্মিনী ও মহিলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভানেত্রী আইভি রহমানকে হারান।
তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় বাড়ীর পাশের ভৈরব আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এখান থেকে পাস করে ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভৈরব কে.বি পাইলট মডেল হাই স্কুলে চলে যান। সেখান থেকে মাধ্যমিক পাস করেন ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে। তারপর ঢাকা কলেজ থেকে তিনি আইএ পাস করেন। জিল্লুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইতিহাস বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় হতে তিনি আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
জিল্লুর রহমান ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছাড়াও জিল্লুর রহমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যসহ বিভিন্ন সময়ে দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের গণঅভ্যুত্থানসহ বিভিন্ন গণ-আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের ১১ জানুয়ারি তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নিলে যখন শেখ হাসিনা গ্রেফতার হন তারপর থেকেই তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাল ধরেন।
২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কিশোরগঞ্জ-৬ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় মহাজোট বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। জিল্লুর রহমান কিশোরগঞ্জ-৬ আসন থেকে পঞ্চমবারের মতো সংসদ সদস্য হন এবং জাতীয় সংসদে সংসদ উপনেতা নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়। তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন।
দীর্ঘদিন রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ১০ মার্চ কিডনি ও মূত্রপ্রদাহে আক্রান্তজনিত কারণে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি হন জিল্লুর রহমান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ২০ মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।