মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় একটা সময় মানুষের হাতের লেখা চিঠি কবুতর কিংবা অন্যান্য প্রাণির মাধ্যমে সম্পন্ন হতো। কিন্তু সময়ের পথ-পরিক্রমায় বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর যুগে মানুষ যেসকল মাধ্যম লুপে নিয়েছে তার একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়া। এই মিডিয়া ইন্টারনেট ভিত্তিক প্লাটফর্ম যার মাধ্যমে মানুষ একে অন্যের সাথে সহজে ও অল্প সময়ে যোগাযোগ বা তথ্য আদান-প্রদান করে থাকে। আমরা প্রায়শই ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, লিংকডইন, ইউটিউব, ইমু, ভাইবার, কোওরা, রেডডিট, স্ন্যাপচ্যাটসহ অন্যান্য আরও বেশ কিছু সাইট ও অ্যাপের মাধ্যমে নানা ধরণের তথ্য প্রকাশ করে থাকি। এর সবগুলোই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যম হিসেবে পরিচিত।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি বিশ্বের বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে সংযুক্ত হওয়া, নিজের মতামত প্রকাশ করা এবং অন্যের মতামত পাওয়া, প্রবীণ নাগরিকদের নিঃসঙ্গতা হ্রাস করা, সংকটজনিত সময় জনস্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, তথ্যের দ্রুত সম্প্রসারণে সহায়তা করে থাকে। এর মাধ্যমে একাডেমিক গবেষণার ফল সরবরাহ, দূর-দূরান্তের মানুষকে শিক্ষাগ্রহণের প্রবেশাধিকার, প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের ভালো মানের শিক্ষকের কাছ থেকে শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ পায়। পেশাদার নেটওয়ার্কিং সাইটগুলি চাকরি সন্ধানকারীদের চাকরির সন্ধান লাভে সহায়তা করে। বিজ্ঞাপন ও নিবন্ধ ইত্যাদি প্রকাশের মাধ্যমে ব্যবসায়ের প্রচার করতে সুযোগ দেয়। জাতি, বর্ণ, ধর্ম ও সাংস্কৃতিক সকল বাধা পেরিয়ে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করতে সহায়তা করে। তথ্যপ্রযুক্তি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দূরকে কাছে এবং কাছেকে এনেছে আরও কাছে। প্রতিটি মানুষ এখন বিশ্বগ্রামের বাসিন্দা। সবাই যেন সবাইকে চেনে এবং জানে। প্রযুক্তির এই অবাধ প্রবাহ, এই কাছে আসা এবং কাছে থাকার অবারিত সুযোগ, মানব সম্পর্কের ক্ষেত্রে কী প্রভাব ফেলছে সেটিই এখন মূল্যায়নের সময় এসেছে।
যোগাযোগে বিপ্লব আসে টেলিফোন আবিষ্কারের ফলে। এর পর আসে ফ্যাক্স। মোবাইল ফোন আবিষ্কারের ফলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা পায়। ইন্টারনেটে সাধারণ মানুষের অ্যাকসেস থাকায় প্রযুক্তিনির্ভর সামাজিক যোগাযোগ প্লাটফর্ম দ্রুত গড়ে উঠতে থাকে। ইন্টারনেটভিত্তিক ভার্চুয়াল যোগাযোগের প্রথম প্রয়াস সিক্স ডিগ্রিস (১৯৯৭), মাই স্পেস (২০০২) সামাজিক যোগাযোগের ধারণা পাল্টে দিতে তুমুল জনপ্রিয়তা নিয়ে আসে। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে ফেসবুক, ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে ইউটিউব, ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে টুইটার, ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে ইনস্টটাগ্রাম বাজারে আসে, এভাবে প্রতিদিনই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নতুন নতুন প্লাটফর্ম ও টুলস খুলে দিচ্ছে বৈচিত্র্যের দুয়ার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবাদে বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৪৫৭ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে, এর মধ্যে ৩৫০ কোটির ওপর মানুষ ফেসবুক, ইউটিউবের সাথে যুক্ত। প্রতিবছর বাড়ছে ব্যবহারকারীর সংখ্যা। প্রতিদিন টুইট করা হয় ৫০ কোটি, মিনিটে প্রায় ৬ হাজার টি। ইউটিউবে প্রতি মিনিটে কয়েকশত ঘণ্টার ভিডিও আপলোড করা হয়। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা কোনো না কোনোভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর নির্ভরশীল। বিশ্বে বর্তমানে প্রায় তিন বিলিয়ন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৈপ্লবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সোশ্যাল মিডিয়ার হাত ধরে সারা বিশ্বে অনেক কল্যাণ সাধিত হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আমাদের মধ্যে যে সকল ব্যাধি তৈরি হচ্ছে তার মাত্রা খুবই ভয়াবহ। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে এক গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা মানসিক অবসাদ থেকে দূরে থাকতে তো সমর্থ হনই না, বরং আরো মানসিক চাপে ভোগেন। পুরুষের তুলনায় নারীর মধ্যে এই সংক্রমণ আরও বেশি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যে শুধু মানসিক বিকারগ্রস্ততা তৈরি করে তা নয়, শারীরিক অসুস্থতা তৈরি করতেও এর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে নিদ্রাহীনতা রোগের সৃষ্টি হয় ও মস্তিষ্কের ব্যাধি, এডিএইচডি এবং স্বকেন্দ্রিক ব্যক্তিত্ব বিশেষত যুব সমাজের বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। হতাশার পরিমাণ বাড়তে পারে।
স্মার্টফোন, ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বন্ধুর সংখ্যা বৃদ্ধি করলেও প্রকৃতপক্ষে মানুষ নিজেকে বন্ধুহীন করে ফেলছে। শিল্পবিপ্লবের পর মানুষ নিঃসঙ্গ হতে শুরু করে, তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এসে সে হয়ে পড়েছে চরম নিঃসঙ্গ। অসংখ্য মানুষের ভিড়ে সে একা। মনঃসমীক্ষকদের মতে একজন মানুষের সর্বোচ্চ ১৫ জন ভালো বন্ধু রাখা সম্ভব। কিন্তু এখন সামাজিক যোগাযোগ প্লাটফর্মে মানুষের বন্ধুর সংখ্যা কয়েক হাজার। কিন্তু তারা যে কেউ প্রকৃত বন্ধু নয়, সেটি কেউ বুঝতে পারছে না। অসংখ্য ভার্চুয়াল বন্ধু রাখতে গিয়ে মানুষ নিকটাত্মীয় এবং খাঁটি বন্ধুদের প্রতি মনোযোগ দিতে পারছে না। ‘ফেক’ বন্ধুর মোহে হারিয়ে ফেলছে আসল বন্ধুদেরকে। দূরের মানুষকে কাছে টানতে গিয়ে কাছের মানুষকে ঠেলে দিচ্ছে দূরে। গবেষণায় প্রমাণিত যে, সোশ্যাল মিডিয়ার প্রসার যত ঘটছে, মানুষের আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে সশরীরে যাতায়াত তত কমছে। সামাজিক কর্মকাণ্ড, যোগাযোগ ও উপস্থিতিতে মানুষ নিরুৎসাহিত হচ্ছে। উপস্থিতির বদলে ভার্চুয়াল বার্তা ছেড়ে দিয়েই দায়িত্ব এড়াতে চাইছেন অনেকে। এতে সম্পর্কের বন্ধন আলগা হয়ে যাচ্ছে এবং পারস্পরিক দায়িত্বের বোধটাও হয়ে যাচ্ছে নড়বড়ে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচুর ফেক আইডি ব্যবহারকারীর কারণে পর্নোছবি এবং অশ্লীল মন্তব্য প্রকাশ করার সুযোগ রয়েছে। অসত্য তথ্য প্রকাশ করে কোনো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের মাঝে উদ্বেগ সৃষ্টি করতে এ এসব মাধ্যমের অপব্যবহার করা হচ্ছে। তরুণ প্রজন্ম এর নেতিবাচক দিকগুলো ব্যবহার করার ফলে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক হলো কিশোর-কিশোরীদের কাছে পর্নোসাইট উন্মুক্ত হয়ে পড়া। সহজেই তারা বয়স্কদের সাইটে ঢুকতে পারে যা তাদের অপরিপক্ব মানসিকতায় ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে তরুণ ও কিশোর সমাজের। অতিমাত্রায় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার ফলে এটির প্রতি আসক্তি এবং পিতামাতা ও বন্ধুদের চেয়ে মিডিয়াকে বেশি সময় দেয়া শুরু হয়।
মানব সম্পর্কের ক্ষেত্রে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তথ্যপ্রযুক্তি এই মিথস্ক্রিয়ার পথ রুদ্ধ করে দিচ্ছে। এমনকি স্বামী-স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের মতবিনিময়ের সময়ও গিলে খাচ্ছে বর্তমান সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং। আমরা সবাই নিজের কথাটা অন্যের কাছে বলতে চাই। এই শেয়ার করার প্রবণতা আগেও ছিল। তখন হয়তো এটা বন্ধু-বান্ধবের কাছে বলা হতো। এখন সে সেটা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে দিয়ে দিচ্ছে। লোকচক্ষুর ভয়ে যে কথা সহজে বলা যায় না, ভার্চুয়াল জগতে তা অবলীলায় বলে ফেলি। ফেসবুক বা টুইটারে এমন অশ্রাব্য কথার ছড়াছড়ি দেখা যায়, যা সচরাচর সমাজের স্বাভাবিক যোগাযোগে কেউ ব্যবহার করে না। মনোবিজ্ঞানিরা একালের তরুণ প্রজন্মকে ‘কার্টুন প্রজন্ম’ নাম দিয়েছেন। বর্তমান তরুণ প্রজন্ম কার্টুনের মতোই। তাদের জীবনাচরণে চাঞ্চল্য থাকলেও নেই প্রাণের ছোঁয়া। সম্পর্ক নিবিড় করার ক্ষেত্রে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস গুরুত্বপূর্ণ। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বেড়ে উঠছে অবিশ্বাসের দেয়াল। যুক্তরাষ্টের একটি গবেষণায় উঠে এসেছে যে, দম্পতিদের মধ্যে যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি সময় ব্যয় করেন তাদের দাম্পত্য কলহ ও বিবাহবিচ্ছেদ বেশি। আমাদের দেশেও বিশেষ করে ফেসবুক ব্যবহারের কারণে দাম্পত্য ও পারিবারিক কলহ বাড়ছে। হচ্ছে পরকীয়া, ঘটছে বিবাহবিচ্ছেদ।
গবেষণায় দেখা গেছে, একজন মানুষ প্রতি আড়াই মিনিটে অন্তত একবার হাতের কাছে থাকা স্মার্টফোন নেড়েচেড়ে দেখে, কোনো প্রয়োজন ছাড়াই স্ক্রিন অন করে। এমনকি প্রেমিক-প্রেমিকা মুখোমুখি বসে থাকার সময়ও তাদের মনোযোগ কেড়ে নেয় এই যান্ত্রিক ডিভাইসটি। ফেসবুক মানুষের প্রাইভেসিকে মারাত্মকভাবে আঘাত করেছে। সম্প্রতি ভারতের পুনে শহরে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু হয়েছে এক প্রকৌশলী দম্পতির। স্ত্রী সোনালী দাম্পত্য জীবনের গোপনীয় বিষয়গুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিতেন। সুইসাইড নোট থেকে জানা যায়, বিব্রত ও অতিষ্ঠ স্বামী রাকেশ গাংগুলি নিজহাতে স্ত্রীকে হত্যার পর নিজে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের মাধ্যমে ধর্মীয় বিষয়ে মিথ্যা খবর ছড়িয়ে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের মাঝে অস্থিরতা ও গুজব সৃষ্টি করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনাসহ প্রশাসনিক কার্যক্রমে বিপর্যয় সৃষ্টি করা হয়! সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখতে পেয়েছি, সোশ্যাল সাইটগুলোতে প্রশ্নফাঁসের উৎসব। বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল শিক্ষাক্ষেত্রসহ সব রকমের প্রশাসনিক কার্যক্রম।
সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মানুষের ভৌগোলিক দূরত্ব কমে যাচ্ছে, স্থান-কাল-পাত্র উপেক্ষা করে দেশ-মহাদেশ-মহাসাগর অতিক্রম করে মানুষ একাকার হয়ে যাচ্ছে। এর সবচেয়ে বড় অবদান হলো, আমাদের পুরোনো সেই দিনগুলো যা আমরা ভুলে গেছি বা প্রিয়জন যাদের খোঁজ খবর নিতে পারতাম না-প্রযুক্তি আমাদের সব কিছুকেই কাছে এনে দিয়েছে। এই ফ্লাটফর্মের মাধ্যমে প্রতিটি মানুষ নিজের মতামত ও অনুভূতি প্রকাশ করার সুযোগ পেয়েছে। এদিক থেকে বলতে গেলে সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের সমাজে একটা সামাজিক বিপ্লব এনে দিয়েছে। সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিচ্ছবি যেমন আমরা দেখতে পাচ্ছি তেমনি ব্যক্তিমানুষের চাওয়া-পাওয়া, বেঁচে থাকা, জীবনসংগ্রামের চালচিত্রও ফুটে উঠেছে। শুধু তাই নয়, পৃথিবীর নানা জাতি, নানা সংস্কৃতির মানুষের মধ্যে জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-দর্শন-রাজনীতি-সমাজনীতি প্রভৃতি জ্ঞানসাম্রাজ্যের মণিমুক্তা আদান-প্রদান করে নিচ্ছি।
সোশ্যাল মিডিয়া সমাজের নানা ব্যাভিচার, কুসংস্কার, গোঁড়ামির মূলে যেমন কুঠারাঘাত করছে, তেমনি এর নেতিবাচক দিকগুলোকেও উপেক্ষা করা যায় না। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ১৩ থেকে ১৯ বছরের তরুণরা। তারা জেনে বা না জেনে সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে এমনভাবে জড়িয়ে পড়ছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের জীবনসংকটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। আসক্তির কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় অতিবাহিত করছে স্মার্টফোনে, ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে। যার ক্ষতিকর প্রভাব তাদের মানসিক, সামাজিক, শারীরিক বিকাশে প্রতিফলিত হচ্ছে। পড়াশোনার প্রতি তীব্র অনীহা, মনঃসংযোগের ঘাটতি, সমবয়সী বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সামাজিক মেলামেশা সব কিছুই ভীষণভাবে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। যুবকরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা এমনকি সম্পূর্ণ রাত জেগে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে। পরের দিন সকালে স্কুলে বা কলেজে যেতে চায় না। এতে তাদের রেজাল্ট খারাপ হয়। বাবা-মা চাপ দেয়। তখন তারা মানসিক রোগী হয়ে পড়ে। সন্তানদের এমন পরিস্থিতিতে মা-বাবাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা ও ভয় দানা বাধছে। যার ফলে পারিবারিক জীবনেও দেখা যাচ্ছে চরম বিশৃঙ্খলা।
অবসর সময়ে বইপড়া, গানশোনা, নাটকদেখা থেকে বিরত থেকে সবাই হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ছেন স্যোশাল মিডিয়ার অন্ধগলিতে। নিজেরাই অজান্তে ধীরে ধীরে আসক্ত হয়ে পড়ছেন এর প্রতি। তরুণরা এমন সব সাইটে ঢুকে যাচ্ছে এবং ‘যৌনতা-নির্ভর’ ওয়েব সিরিজ দেখছে। এতে করে তাদের বাস্তব জৈবিক চাহিদা বিকৃত হচ্ছে। আমি তো বলব এইসব সাইটে ঢুকে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের ক্ষতিটা হচ্ছে বেশি। কারণ এসব দেখার কারণে একটা মেয়ের স্বাভাবিক ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার যে সময় ১৩ থেকে ১৫ বছর, এখন সেটা ৮ থেকে ৯ বছরেই হয়ে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে তার মধ্যে একটা যৌনচাহিদা তৈরি হচ্ছে। তখন সে হয়ত খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে জীবনটা নষ্ট করে দিচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায়ও খারাপ গ্রুপ তৈরি হচ্ছে। গ্রুপগুলো মেয়েদেরকে, বিশেষ করে গৃহবধূদের টার্গেট করে। দীর্ঘদিন ধরে একটা সম্পর্ক তৈরি করে, এরপর তারা অনৈতিক সম্পর্ক করে এবং সেটা ভিডিও করে পরে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করে। আমরা যদি খারাপ সাইটগুলো বন্ধ করে দিতে পারি, তাহলে অনেক কিছুই ঠিক হয়ে যাবে।
সোশ্যাল মিডিয়া যতই জনপ্রিয় হোক না কেন ব্যবহারকারীদেরকে এর নেতিবাচক দিকগুলো সম্পর্কে সতর্ক হতে হবে। না হয় এই জনপ্রিয় মাধ্যমগুলো জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দিতে পারে, নষ্ট করে দিতে পারে সাজানো জীবন! সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আসক্তি পরিহার করে একে কার্যকর যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে পারলে একে যোগাযোগের হাতিয়ার বলা যেতে পারে, নয়তো একে অসামাজিকতা তৈরির হাতিয়ার হিসেবেই বিবেচনা করা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সোশ্যাল সাইটগুলোতে অনেক বেশি সময় দেন, ব্যক্তিগত জীবনে তাদের সাথে পরিবারের বেশ দূরত্ব সৃষ্টি হয়! তারা দিনশেষে বাড়ি ফিরে এমনকি সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতেও পরিবারকে সময় না দিয়ে সময় দেন সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে। ফলে দূরত্ব সৃষ্টি হয় পরিবারের সদস্যদের সাথে।
শারীরিক ও মানসিকভাবে বেড়ে উঠার জন্য প্রয়োজন মাঠে গিয়ে খেলাধুলা করার। আমরা যখন খেলার কথা ভাবতাম, তখন মাঠে গিয়ে খেলাধুলা করতাম। ছেলেমেয়েরা এখন খেলা বলতে ভিডিও গেমসকে বোঝে, সারাদিন সারারাত সোশ্যাল মিডিয়াতে সংযুক্ত থাকে। এখন ছেলেমেয়েদের বিনোদনের মাধ্যম বলতে সোশ্যাল মিডিয়াকেই বোঝায়। সেখানে তারা চ্যাট করছে, আড্ডা দিচ্ছে। ফলে ব্যক্তি-যোগাযোগ ভয়ংকরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে তাদের শারীরিক সক্ষমতা কমে যাচ্ছে এবং কর্মক্ষমতা হারাচ্ছে। তাদের ঠিকমতো ঘুম হচ্ছে না এবং মস্তিষ্ক ঠিক মতো কাজ করছে না। ফলে প্রোডাক্টটিভিটি কমে যাচ্ছে। ফেসবুকের মায়ায় প্রায়ই আটকে পড়ছে তরুণ ও কিশোর সমাজ। লেখাপড়া, কোচিং, প্রাইভেট, টিভি দেখা ইত্যাদি কারণে সময় বের করা এমনিতেই সম্ভব হয় না। তারপরও যেটুকু পাওয়া যায় তাও কেড়ে নিচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। যখন বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখার কথা তখন তারা ভাবছে ফেসবুকে কত আকর্ষণীয় ছবি আপলোড করা যায় অথবা এমন কী কথা লেখা যাবে যাতে লাইক, শেয়ারের বন্যা বয়ে যাবে। এতে বুদ্ধির বন্ধ্যাত্ব তৈরি হচ্ছে, বিঘ্নিত হচ্ছে মেধার বিকাশ।
সোশ্যাল মিডিয়ার কিছু ভালো দিকও আছে। যেমন, বইমেলায় কয়েকটি ভালো বই বের হয়েছে। যারা বই পড়ে, তাদের একটা গ্রুপ আছে। ওই বইগুলোতে কী আছে সেগুলো নিয়ে তারা আলোচনা করছে। সেটা কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়ে দিল, তার পাঁচ হাজার বন্ধু সেটা দেখল, তারা বইটা নিয়ে সমালোচনা করল, তাতে লেখক সমৃদ্ধ হলো। আমি নিজেও এই ধরণের গ্রুপে ঢুকে ওদের আলোচনাগুলো দেখি। ওরা এমন সব বই পড়ছে যে বইগুলো দুর্লভ। আমি তাদের আলোচনা দেখে সমৃদ্ধ হই। পত্রিকা বা টেলিভিশন দেখার জন্য খবরের কাগজের পাতা কিংবা টিভি স্ক্রিনে চোখ না রাখলেও চলে। নিমেষে একটিমাত্র টিপেই সব ব্রেকিং নিউজ, স্বাস্থ্যসচেতনতার খবর, সাজসজ্জা বা ঘরকন্নার খবর হাতের মুঠোয় চলে আসে। এই মাধ্যমটি আমাদের আধুনিক জীবনে এক নতুন বাস্তবতা। গ্রামের চায়ের দোকানে মানুষ তথ্যের জন্য এখন আর পত্রিকার পাতা ঘাঁটাঘাঁটি করে না। তার বদলে এসেছে স্মার্টফোন নির্ভরতা। এই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেই আমাদের ‘গণজাগরণ মঞ্চ’ তৈরি হয়েছিল।
সম্প্রতি একদল মার্কিন শিশুকল্যাণ-বিশেষজ্ঞ ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের কাছে একটি চিঠি লেখেন। এতে তারা ‘মেসেঞ্জার কিডস’ নামে বাচ্চাদের মেসেজিং অ্যাপটি বন্ধ করে দেবার আহ্বান জানান। তারা বলেন, ১৩ বছরের কম বয়সীদেরকে এই প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করতে উৎসাহিত করাটা দায়িত্বজ্ঞানহীন। তারা বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের কারণে কিশোর-কিশোরীদের মানসিকতায় অস্বাভাবিক সব পরিবর্তন হচ্ছে। কিশোর-কিশোরীদের মানসিক সমস্যা তৈরি হচ্ছে। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে রয়াল সোসাইটি অব পাবলিক হেলথ ১১ থেকে ১৫ বছর বয়স্ক দেড় হাজার কিশোর-কিশোরীর ওপর একটি জরিপকার্য পরিচালনা করেন। এতে দেখা যায় স্ন্যাপচ্যাট এবং ইনস্টাগ্রাম তাদের মনে সবচেয়ে বেশি হীনম্মন্যতা এবং দুশ্চিন্তা সৃষ্টি করে। ১০ জনের মধ্যে ৭ জন বলেছে ইনস্টাগ্রামের কারণে তাদের নিজেদের মানসিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। ১৪ থেকে ১৯ বছর বয়সের তরুণ-তরুণীদের অর্ধেকই বলেছে ফেসবুকের কারণে তাদের মানসিক দুশ্চিন্তা ও অশান্তি বেড়েছে। দুই-তৃতীয়াংশ উত্তরদাতা বলেছে, সাইবার বুলিইং বা অনলাইনে অপমান-হয়রানি করার প্রবণতা আরও গুরুতর আকার ধারণ করেছে।
সোশ্যাল মিডিয়ার নেশায় জড়িয়ে পড়েছেন সব বয়সের মানুষ। ছোট ছোট বাচ্চারাও ব্যবহার করছে তাদের বাবা-মা কিংবা কোনও অভিভাবকের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট। কিশোর-কিশোরীরাও মনের আনন্দে ব্যবহার করে যাচ্ছে এইসব যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। তারা কেউই জানে না কিভাবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এক গবেষণায় পাওয়া গেছে কিশোর এবং কিশোরী উভয়ে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করলেও ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সী কিশোরীদের স্বাস্থ্যের জন্য তা খুবই ক্ষতিকর। গবেষকদের মতে, কিশোর বয়সে অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের কারণে তাদের মস্তিষ্ক সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে না।
বাংলাদেশে মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, সোশাল মিডিয়ার কারণে অল্পবয়সী ছেলেমেয়ে থেকে শুরু করে তাদের অভিভাবকদের মধ্যেও তৈরি হচ্ছে মানসিক চাপ। রাত জেগে মোবাইলে ইন্টারনেটে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যস্ত থাকছে শিক্ষার্থীরা, যা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক বেড়ে যাচ্ছে অনেক। সারা বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৭০ শতাংশ মানুষই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংযুক্ত। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষের রয়েছে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে যে কোনো ব্যক্তি তথ্য, মতামত, ছবি, ভিডিও ইত্যাদি আদান-প্রদান করতে পারে। দেশ-বিদেশে কী ঘটছে, সেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে পেয়ে যাচ্ছে সবাই। আমাদের টাইমলাইন, নিউজফিড ভরে যাচ্ছে প্রয়োজনীয়, অপ্রয়োজনীয় সংবাদ, ছবি ও ঘটনায়। বর্তমানে সংবাদপত্র, বেতার ও টেলিভিশনের ওপর নির্ভরতা আগের তুলনায় অনেকগুণে কমেছে। সিএনএন পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, তিন-চর্তুথাংশ মার্কিন নাগরিক ই-মেইল অথবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সংবাদ পড়ে থাকে।
জঙ্গি সংগঠনগুলো তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও নিজেদেরকে সংগঠিত করার কাজে ব্যাপকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছে। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে যে সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছে তার পিছনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটা বড় ধরণের ভূমিকা রয়েছে। কেননা জঙ্গি সংগঠনগুলো সদস্য সংগ্রহের জন্য ব্যাপকভাবে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে থাকে। আইএস তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও তরুণদের সংগঠনে রিক্রুট করার কাজে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্য নিচ্ছে। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে আমাদের দেশে রামুতে বৌদ্ধমন্দিরে হামলা, বৌদ্ধদের বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপক হামলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে নভেম্বরে রংপুরের ঠাকুরপাড়ায় হামলা ও হতাহতের ঘটনায় ছিল দুর্বৃত্ত কর্তৃক ফেসবুকের অপব্যবহার।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে ফলে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে শিক্ষাক্ষেত্রসহ সব রকমের প্রশাসনিক কার্যক্রম। এর অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফল ও পরবর্তীকালে নিজেদের ক্যারিয়ারের ওপর যেমন নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে ঠিক তেমনি এভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে। এক সমীক্ষায় ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের মতে, দূরের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি; মূল্যেবোধের অবক্ষয়, সমাজে বিভক্তি সৃষ্টি, যৌন ব্যবসা, সামাজিকভাবে কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করা এবং ব্যক্তিগত ক্রোধের কারণে কাউকে ঝামেলায় ফেলা এসব ঘটনা ঘটে থাকে ফেসবুকের মাধ্যমে। জনমত গঠনে, সচেতনতা সৃষ্টিতে ও রাজনৈতিক আন্দোলনের পটভূমি হিসেবে কাজ করছে সোশ্যাল মিডিয়া। তাহরির স্কয়ারে লোক সমাগমের ক্ষেত্রে লিফলেট বিলি করার প্রয়োজন হয়নি। তারা তাদের সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দেশবাসীকে সেখানে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আর তাতেই হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিল।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার জন্য কতপয় সুপারিশ করা হয়েছে। যেমন- অনৈতিক কাজ বন্ধ করার জন্য অ্যাকাউন্ট সিকিউরিটি বৃদ্ধি করা; অশালীন ছবি ও তথ্য সম্পর্কে একটা শালীন নীতিমালা প্রণয়ন করা; ব্যবহারকারীদের নীতি ও নৈতিকতাবোধ জাগ্রত করা, ফেসবুকের নেতিবাচক দিক বর্জন করা; নারীদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করে এমন গ্রুপগুলো চিহ্নিত করে ঐ অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করা, বিনোদনের নামে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে না পড়া ইত্যাদি। এক্ষেত্রে অভিভাবকদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে কারণ তাদের ছেলেমেয়েরা কী পরিমাণ সময় ব্যয় করছে ফেসবুকে, পর্নোসাইট ভিজিট করছে কিনা, পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে পড়ছে কিনা সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। বর্তমান বিশ্বে তথ্যের চাহিদা খুবই প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। বই বা লাইব্রেরিতে হাজার হাজার বই ঘেঁটে প্রয়োজনীয় তথ্য যোগাড় করা কষ্টকর এবং সময়সাপেক্ষ। আর এই প্রয়োজন মেটানোর জন্য অনলাইনভিত্তিক ওয়েব লগের যাত্রা শুরু হয় যা পরবর্তীতে ব্লগ হিসেবে প্রচলিত হয়। মানুষের তথ্যচাহিদা পূরণের জন্য ব্লগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রতিনিয়তই মানুষ ব্লগের কল্যাণে চাহিদার ওপরে ভিত্তি করে তথ্য অনুসন্ধান করছে, এমনকি গবেষণাসহ বিভিন্ন জরিপ পরিচালনা করছে। ফলে প্রতিদিন হাজার হাজার নতুন ব্লগারের জন্ম হচ্ছে। সেই সাথে তৈরি হচ্ছে অনলাইনে লক্ষ লক্ষ নিবন্ধ।
টুইটার বর্তমান বিশ্বে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে অন্যতম। যেখানে ব্যবহারকারীরা সর্বোচ্চ ১৪০ শব্দের বার্তা আদান-প্রদান ও প্রকাশ করতে পারেন। বর্তমানে এটি এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে, হলিউড, বলিউড থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ টুইটার ব্যবহার করে থাকেন। তাছাড়া, উইকিপিডিয়া তথ্য ও সেবা প্রদানের লক্ষ্যে সৃষ্ট ওয়েবভিত্তিক বহুভাষিক মুক্ত বিশ্বকোষ হিসেবে পরিচিত। বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ও বহুল প্রচলিত এ অনলাইন তথ্যকোষের প্রতিষ্ঠাতা জিমি ওয়েলস এবং ল্যারি স্যাংগার। ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে আনুষ্ঠানিকভাবে পথচলা শুরু হয় ওয়েবসাইটটির। বর্তমানে এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং সর্বাধিক জনপ্রিয় ইন্টারনেটভিত্তিক তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ইউটিউব হচ্ছে ভিডিও আদান-প্রদান করার ওয়েবসাইট। এটি ভিডিও শেয়ারিং সাইট, যার মাধ্যমে এর সদস্যরা ভিডিও আপলোড এবং আদান-প্রদানের কাজ করে থাকে। স্কাইপ একটি ভিওআইপি সেবা এবং সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন। সামাজিক যোগাযোগের এই মাধ্যমে পরস্পরের সাথে ভয়েস, ভিডিও এবং তাৎক্ষণিক বার্তার সাহায্যে যোগাযোগ করা যায়। ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে ডেনমার্কের ধমিজা, জানুজ ফ্রিজ এবং সুইডেনের নিকলাস জেনস্ট্রম স্কাইপ প্রতিষ্ঠা করেন। উল্লিখিত মাধ্যম ছাড়াও আরও কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রয়েছে যেমন: ব্লগিমেট, এওএল ইন্সট্যান্ট মেসেঞ্জার, ফেসটাইম, গুগল টক, গুগল ভয়েস, আইসিকিউ, আইবিএম লোটাস সেমটাইম, উইন্ডোজ লাইভ, মেসেঞ্জার, জিমেইল, ইয়াহু মেসেঞ্জার ইত্যাদি।
আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি অনেক ক্ষেত্রে আশীর্বাদ হলেও মানবসম্পর্কের ক্ষেত্রে মোটেও আশীর্বাদ নয়। এই বাস্তবতায় সোশ্যাল মিডিয়ার নিয়ন্ত্রিত ও যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। আমরা সবসময়ই নেতিবাচক দিকগুলি এড়িয়ে চলব এবং ইতিবাচক কর্মকাণ্ড করব এবং অন্যকে ভালো কাজ করতে উৎসাহ দিব, তাহলেই আমরা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে উন্নতি করতে পারব। সোশ্যাল মিডিয়ার নিয়ন্ত্রিত ও যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করার উপায় খুঁজে বের করতে হবে এখনই।
লেখক: প্রফেসর ড. মো. লোকমান হোসেন, মহাপরিচালক, নায়েম