সাম্প্রদায়িকতামুক্ত দেশ গড়তে প্রয়োজন শিক্ষার সংস্কার

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদমুক্ত দেশ গড়তে শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার দাবি করেছেন বিশিষ্টজন। তারা বলেছেন, তরুণ প্রজন্মকে আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন। স্কুল বা মাদ্রাসা- যে শিক্ষা কাঠামোতেই শিশুরা পড়াশোনা করুক, তাদের পাঠ্যসূচি একই থাকতে হবে। এর পাশাপাশি রাজনীতি থেকে ধর্মের ব্যবহারও বন্ধ করতে হবে।  সোমবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে 'সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদমুক্ত বাংলাদেশ' শীর্ষক আলোচনা সভায় বিশিষ্টজন এসব কথা বলেন। 

জামায়াতের রাজনীতির নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, শুধু দলটির রাজনীতি নিষিদ্ধ করলেই হবে না। এর সঙ্গে মওদুদী মতাদর্শ যারা ধারণ করেন তাদের মনোজগতেও পরিবর্তন আনতে হবে। এ জন্য সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন তারা।

অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর ৯৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। ৯ ফেব্রুয়ারি ছিল কবীর চৌধুরীর জন্মদিন। এ উপলক্ষে স্মারক বক্তৃতা দেন নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। সংগঠনের সহসভাপতি শ্যামলী নাসরিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন ইন্ট্যারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের সম্মানিক সভাপতি রামেন্দু মজুমদার, ইতিহাস সম্মিলনীর সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, কবীর চৌধুরীর কন্যা অধ্যাপিকা শাহীন কবীর। শহীদসন্তান ডা. নুজহাত চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে কবীর চৌধুরীর জীবনী ও কর্মভিত্তিক 'নাইবা হলো পারে যাওয়া' শীর্ষক চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়। সভায় বাংলা একাডেমি থেকে কবীর চৌধুরীর রচনাসমগ্র এবং ঢাকার একটি সড়কের নামকরণের প্রস্তাব করা হয়।

স্মারক বক্তৃতায় শাহরিয়ার কবির বলেন, জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেই মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার অভিশাপ থেকে দেশ মুক্ত হবে- এটা বলা যাবে না। এর জন্য দরকার মওদুদীবাদ এবং ওয়াহাবিবাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, দার্শনিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তি নিষিদ্ধ করা। পাশাপাশি ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রজীবনে ধর্মনিরপেক্ষ মানবিকতা ও বিজ্ঞানমনস্কতার প্রসার ঘটাতে হবে। তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই এক-দু'দিনের বিষয় নয়। এ লড়াই আমৃত্যু চালাতে হবে। 

শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার প্রসঙ্গে শাহরিয়ার কবির বলেন, ২০০৯ সালে অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন শিক্ষা কমিশন মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার সুপারিশ করেছিল। সেটা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। 

এ কারণেই সাম্প্রদায়িকতার করাল থাবা থেকে কোমলমতি শিশুরা রেহাই পাচ্ছে না।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে দীপু মনি বলেন, নিরাপদ সড়ক বা দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার কথা যেটাই বলি না কেন, সবক্ষেত্রে যেটা প্রয়োজন তা হলো শিক্ষা ও সচেতনতা। এ জন্য সরকার শিক্ষার ওপর জোর দিয়েছে। তিনি বলেন, গত ১০ বছরে শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক অর্জন আছে। তবে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে রয়েছে। 

মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে সরকার তৎপর রয়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে ক্ষমা চাইতে হবে। পাশাপাশি পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি আরও জোরালো করতে হবে।

রামেন্দু মজুমদার বলেন, রাজনীতি থেকে ধর্মের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। নয়তো সাম্প্রদায়িক শক্তির বিনাশ সম্ভব হবে না।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ দেশের নানা সংকটে অধ্যাপক কবীর চৌধুরী নেতৃত্ব দিয়েছেন মন্তব্য করে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, এবার জামায়াতের রাজনীতি অবশ্যই নিষিদ্ধ করতে হবে। সরকার যে নিরঙ্কুশ ম্যান্ডেট নিয়ে এসেছে তাতে এটা করা অসম্ভব কিছু নয়। তিনি আরও বলেন, আমাদের পাসের হার বেড়েছে, কিন্তু পড়ার হার বাড়েনি। অনেকে পাস করেও লিখতে পারে না। এ জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কারের ওপর জোর দেন তিনি।

অধ্যাপিকা শাহীন কবীর বাবার স্মৃতিচারণ করে বলেন, বাবা মানুষের ভালো করতে চাইতেন। এটাই ছিল তার লক্ষ্য। তিনি সব মানুষকে একইভাবে দেখতেন। কাউকে মিথ্যা আশ্বাস দিতেন না। যতটুকু পারতেন তাদের জন্য সেটাই করতেন। শিক্ষা ব্যবস্থা যুগোপযোগী করতে একমুখী শিক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028119087219238