সারাদেশে বিদ্যাদেবীর আরাধনা, প্রাণ ফিরে পেলো জগন্নাথ হলের সরস্বতী পূজা

ঢাবি প্রতিনিধি |

রাজধানীসহ সারাদেশের জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী, ঐশ্বর্যদায়িনী, বুদ্ধিদায়িনী, জ্ঞানদায়িনী, সিদ্ধিদায়িনী, মোক্ষদায়িনী এবং শক্তির আঁধার দেবী সরস্বতীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গেলো দুই বছর করোনা অতিমারি কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হল মাঠে ঐতিহ্যগত রীতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) অনুষ্ঠিত থেকে বিরত ছিলো। এবার সেই বিরতির পালে হওয়া লেগেছে, ফিরে পেয়েছে সেই পুরোনো প্রাণ।

জগন্নাথ হলের উপাসনালয়ে প্রধান পূজার পাশাপাশি এবারের পূজা মোট ৭৩টি মণ্ডপে পূজা উদযাপন করা হয়েছে। হলের মাঠজুড়ে ৭১টি বিভাগ নির্মাণ করা মণ্ডপ। হলের পুকুরে প্রতিবারের ন্যায় চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের তৈরি প্রতিমা ছিল। আর প্রতিবারের ন্যায় চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের তৈরি প্রতিমা থাকবে। যার উচ্চতা ৩২ ফুট, যা অন্যন্যবারের প্রতিমা থেকে বড়।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ছয়টায় প্রতিমা স্থাপনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পূজার কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর সকালে দেবীকে দুধ, মধু, দই, ঘি, কর্পূর, চন্দন দিয়ে স্নান করানো হয়। সকাল সাড়ে ৭টায় থেকে শুরু হয় বাণী বন্দনা এবং ৮টা ১০মিনিটে পুষ্পাঞ্জলি। সবশেষ সাড়ে ১১টায় প্রসাদ বিতরণের মাধ্যমে পূজার কাজ শেষ হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষার্থীর পাশাপাশি রাজধানী বিভিন্ন এলাকা থেকে সরস্বতী ভক্তরা এসেছেন। সঙ্গে পরিবারের ছোট্ট সদস্যটিও বাবা-মার হাত ধরে দেবী দর্শনে এসেছেন। কেউ কেউ চোখ-বন্ধ করে দু’হাত তুলে প্রার্থনা করছেন। আর যপ করছেন, ‘সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে বিশ্বরূপে বিশালাক্ষী বিদ্যাংদেহী নমোহস্তুতে’ মন্ত্র।

জগন্নাথ হলে রামপুরা থেকে রীতা চক্রবর্তী এসেছেন তার দুই সন্তান রুপম চক্রবর্তী ও রনিত চক্রবর্তীকে নিয়ে। রীতা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলাম। প্রায়ই পূজাতে আসা হতো, সেই ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে এসেছিলাম। করোনার পর দীর্ঘ ২ বছর পর আবার সেই পূজা, বেশ ভাল লাগছে। আগে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে উপভোগ করতাম, এখন করছি সন্তানদের সঙ্গে।

 

অল্পনা রানী সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, গেলো দু’বছর সেভাবে জাঁক-জমকভাবে পূজাতে অনুষ্ঠিত হয় নি। এবার সেই ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের আমেজ যেন ফিরে এসেছে।

এদিকে লক্ষ্মীবাজার থেকে এসেছেন তপন পাল। সঙ্গে স্ত্রী মীরা বালা ও সন্তান শুদ্ধ। তপন পাল দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, জগন্নাথ হলের পূজার মধ্যে একটা অন্য রকম বিষয় থাকে। পরিবারসহ ছোট-বড় দেবী দর্শন যেন এক অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করা। তাই পরিবার নিয়ে পূজা দেখতে আসা।

জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ ও পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, করোনার পর এবারই প্রথম উৎসাহ-উদ্দীপনা ও পুরোনো আমেজে জগন্নাথ হলে সরস্বতী পূজা পালন করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগিতায় আশা করি একটা সুন্দর পূজা অনুষ্ঠিত হবে।

জগন্নাথ হলের পাশাপাশি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, রোকেয়া হল, শামসুন নাহার হল, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল এবং কবি সুফিয়া কামাল হলেও পূজামণ্ডপ অনুষ্ঠিত হয়।

পুজামণ্ডপ পরিদর্শন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সরস্বতী বিদ্যা, জ্ঞান ও সুরের দেবী। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে সরস্বতী পূজা। বিদ্যা দেবীর আরাধনার মাধ্যমে অকল্যাণ ও অশুভ শক্তির বিনাশ হবে এবং মানুষের মাঝে সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন। অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক মূল্যবোধ ধারণ করে সকল ধর্ম ও মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সত্য, সুন্দর, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হওয়ার জন্য উপাচার্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান।

শিক্ষার্থী ছাড়াও সব বয়সের মানুষ এতে অংশ নেন। পূজা ঘিরে সারাদিন চলে বর্তমান ও সাবেকদের মিলনমেলা। বেলা গড়ার সাথে দর্শনার্থীদের ভিড়ও বাড়তে থাকে। সন্ধ্যায় শুরু হয় আরতি উৎসব। 

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথির বিদ্যা ও জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতীর সাদা রাজহাঁসে চেপে আশীর্বাদের মাধ্যমে মানুষের চেতনাকে উদ্দীপ্ত করতে প্রতি বছর মর্ত্যে আবির্ভূত হন। সরস্বতী খুশি হলে বিদ্যা ও বুদ্ধি অর্জিত হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও - dainik shiksha ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল - dainik shiksha বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক - dainik shiksha এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0056190490722656