দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক : বহির্বিশ্বে বসবাস করা বাংলা ভাষার কবিকে পুরস্কৃত করে নজির স্থাপন করেছে বাংলা একাডেমি। এবারের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পাওয়ার পর এমনই অভিমত ব্যক্ত করেছেন কবি, দ্বিভাষিক, লেখক সংগঠক ও গল্পকথক শামীম আজাদ। নিজের পুরস্কার শিক্ষকদের উৎসর্গ করেছেন কবি শামীম আজাদ।
কবিতায় বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী কবি শামীম আজাদ মনে করেন এই অর্জন তাকে আরো সাহসী করে তুলবে। বুধবার বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩ ঘোষণার পর গণমাধ্যমকর্মীর সাথে কথা বলেন কবি শামীম আজাদ। জানান, সাহিত্যের সাথে মেলবন্ধনের কথা।
কবি শামীম আজাদ বলেন, প্রথমে ছোট গল্প লিখতাম, পরে একাত্তরের যুদ্ধই আমাকে কবি করে তুলেছে। কবি রফিক আজাদ আমাকে কবিতায় নিয়ে এসেছেন। পুরস্কার প্রাপ্তি অপ্রত্যাশিত না হলেও দেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
শামীম আজাদ কবিতা লিখতেন কলেজ জীবন থেকেই, তবে বাংলাদেশে তার প্রথম ব্যাপক পরিচিতি ঘটে ১৯৭০ এর দশকের নামি বাংলা সাপ্তাহিক সাময়িকী বিচিত্রার সাংবাদিক হিসেবে। তখনকার দিনে ঢাকায় খুব কম মেয়েই সাংবাদিকতায় আসতেন, বা রিপোর্টিং করতেন।
বিচিত্রার প্রতিবেদক হিসেবে শামীম আজাদ সে সময়কার অনেক আলোচিত বিষয় নিয়ে রিপোর্টিং করেছেন, অনেক বড় বড় ব্যক্তিত্বের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। শামীম আজাদ ব্রিটেনে আসেন শিক্ষকতার পেশার সূত্রে ১৯৯০এর দশকে। ব্রিটেনে তিনি শিশুদের জন্য একাধিক স্কুলপাঠ্য বই লিখেছেন, পাশাপাশি জড়িত রয়েছেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের কার্যক্রম বিলেতে চালু রাখার কাজে।
দূরত্বের জন্যই কি এই স্বীকৃতি আসতে দেরি হলো, এমন প্রশ্নের জবাবে কবি শামীম আজাদ বলেন, স্বীকৃতির সময় ভাবতে হয় কি লিখছেন, কি প্রদান করছেন। দেশের জন্যই যারা বিদেশে বসেও লিখছেন বাংলা একাডেমি তাদের খোঁজ রাখেন এটা বিশাল ব্যাপার। বাংলা একাডেমির প্রতি কৃতজ্ঞতা।
প্রায় তিন দশক ধরে যুক্তরাজ্যে বসবাস করা কবি শামীম আজাদকে ৭০ এর দশকের কবি বলা হলেও কবির প্রথম কাব্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয় আশির দশকে। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৪০টি। নিজের এই অর্জন উৎসর্গ করেছেন প্রিয় শিক্ষকদের।
তিনি বলেন, তাদের জন্যই আমি বাংলা ভাষা নিয়ে আমি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি। তাদের অবদান আজ আমাকে এই জায়গায় দাঁড়াতে সহায়তা করেছে।
শামীম আজাদ শুধু কবিতাই নয়, শিক্ষকতা, সাংবাদিকতা, টেলিভিশন অনুষ্ঠান উপস্থাপনা ও সংগঠক হিসেবেও পেয়েছেন সফলতা। এই অর্জন বহির্বিশ্বে বাংলা ভাষায় সাহিত্য চর্চায় অনুপ্রেরণা যোগাবে বলে মনে করেন তিনি।
যুক্তরাজ্যে শিল্প-সাহিত্যের কল্যাণকর কাজের জন্য দ্য ন্যাশনাল লটারির বিশেষ সম্মাননাও পেয়েছেন কবি শামীম আজাদ। কবি, দ্বিভাষিক, লেখক সংগঠক ও গল্পকথক শামীম দীর্ঘ বছর ধরে আবাসিক কবি হিসেবে কাজ করছেন লন্ডনের বৃহৎ সাহিত্য সংগঠন অ্যাপেল অ্যান্ড স্নেইকসের সঙ্গে।
কবি শামীম আজাদ ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে থেকে লন্ডনে বসবাস করছেন। দীর্ঘ সময়ে ব্রিটেনের কমিউনিটিতে বিভিন্ন অবদানের জন্য তিনি সুপরিচিত মুখ। তিনি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে লন্ডন এবং ব্রিটিশ বাংলাদেশি পোয়েট্রি কালেকটিভের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার। এ ছাড়া পূর্ব লন্ডনের শিল্প-সংস্কৃতি চর্চার বৃহৎ প্রতিষ্ঠান রিচমিক্সের ট্রাস্টি এবং লন্ডনের এক্সাইল রাইটার্স ইঙ্কের নির্বাহী কমিটির সদস্য তিনি।
সূত্র : একাত্তর