শিওরক্যাশের অক্ষমতায় উপবৃত্তির টাকা পেতে ভোগান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক |

শিওরক্যাশের অক্ষমতা ও দুর্নীতির কারণে আবারও উপবৃত্তির টাকা পেতে দুর্ভোগে পড়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। কোনও টেন্ডার ছাড়াই প্রাথমিকের ১ কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি বিতরণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে রুপালীব্যাংক-শিওরক্যাশকে, যাদের বিরুদ্ধে রয়েছে বিগত দিনে উপবৃত্তি বিতরণে নানা অনিয়ম, অযোগ্যতা আর দুর্নীতির অভিযোগ। 

প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তি প্রকল্পের আওতায় সরকার শিক্ষার্থীদের শ্রেণিভেদে জনপ্রতি মাসে ১০০ টাকা উপবৃত্তি দিচ্ছে।

দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে জানা যায়, খুলনা সদরসহ ১০ উপজেলার  ১ লাখ ৬৭ হাজার ৬২৭ জন শিক্ষার্থী উপবৃত্তির টাকা নিতে পারছে না। টাকা ওঠানোর সময় অতিরিক্ত চার্জ না দেয়ার ব্যাপারে সরকারি নির্দেশনা থাকলেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে শিওরক্যাশের এজেন্টরা। ভুক্তভোগী অভিভাবক ও শিক্ষকরা দৈনিক শিক্ষার কাছে এমন অভিযোগ করেছেন। 

প্রাথমিকের শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তারা জানান, দক্ষতা এবং সক্ষমতা না থাকলেও তদবির ও লবিং করে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা বিতরণের দায়িত্ব নিয়েছে শিওরক্যাশ। এরই মধ্যে ঢাকার সাতটি বড় সরকারি কলেজ ও কয়েকটি স্কুল থেকে শিওরক্যাশকে বাদ দেয়া হয়েছে। লবিং করে এসব কলেজের ছাত্রবেতন ও পরীক্ষার ফি আদায় করার দায়িত্ব পেলেও দুর্নীতি ও অক্ষমতার কারণে শিওরক্যাশকে বাদ দেয়া হয়েছে। 

আরও পড়ুন: টিউশন ফি’র ১০ লাখ টাকা সিওরক্যাশের পকেটে!

                জটিলতায় শিওরক্যাশের মাধ্যমে উপবৃত্তি বিতরণ

দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানের জানা যায়, ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে খুলনা সদরসহ কয়রা, ডুমুরিয়া, তেরখাদা, দাকোপ, দিঘলিয়া, পাইকগাছা, ফুলতলা, বটিয়াঘাটা এবং রূপসা উপজেলা এলাকার ১ হাজার ১৫৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা ছাড় দেয়া শুরু হয়। শিশু শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত এই উপবৃত্তির টাকা দেয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের তালিকাভুক্ত মোবাইলে শিওর ক্যাশের টাকা দিচ্ছে রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে। 

হাবিবুর রহমান নামের একজন অভিভাবক দৈনিকশিক্ষাকে বলেন, উপবৃত্তির টাকা মোবাইল ফোনে এলেও এজেন্টরা টাকা দিচ্ছে না। ডিস্ট্রিবিউটরদের সঙ্গে এজেন্টদের সমস্যার কারণে শিওরক্যাশের মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা ক্যাশ করা যাচ্ছে না। তারা বলেন, ২-৩ জন এজেন্ট ক্যাশ করতে চাইলেও তারা ২০-৩০ টাকা হারে অতিরিক্ত দাবি করছে। কিন্তু শিক্ষা অফিস থেকে বলেছে, উপবৃত্তির টাকা উঠানোর সময় কোনো অতিরিক্ত টাকা দেয়া লাগবে না।

খুলনা সদর থানার একজন শিওরক্যাশ এজেন্ট দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, আমরা কোনো চার্জ করি না। উপবৃত্তির টাকা উঠানোর সময় যদি কেউ খুশি হয়ে কিছু দেয় সেটি নিই। কারণ শিওর ক্যাশ উপবৃত্তির জন্য হাজারে ৫ টাকা কমিশন দেয় এজেন্টদের।

মোবাইল ব্যাংকিং রিচার্জ অ্যাসোসিয়েশনের দৌলতপুরের সভাপতি মেহেদী হাসান লিমন সাংবাদিকদের বলেন, আমার শিওরক্যাশ অ্যাকাউন্টে প্রায় ৩০ হাজার টাকা আছে। কিন্তু ডিস্ট্রিবিউটরদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। ফলে অনেক শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা দিতে পারছি না।

খুলনা জেলা শিক্ষা অফিসের মনিটরিং অফিসার (উপবৃত্তি) লুৎফা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, উপবৃত্তির টাকা বৃহস্পতিবার থেকে ছাড় দেয়া হয়েছে। রূপালী ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়া শিওরক্যাশের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা টাকা পাবে। অনেকেই অভিযোগ করেন, শিওরক্যাশের এজেন্টরা উপবৃত্তির টাকা ওঠানোর সময় অতিরিক্ত টাকা নেন। কিন্তু এটা অন্যায়। সরকারি নির্দেশ আছে যে, উপবৃত্তির টাকা দেয়ার সময় এজেন্টরা কোনো ধরনের অতিরিক্ত টাকা নিতে পারবেন না। এছাড়া কোনো শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা না দিতে চাইলে সেই এজেন্টকে বাতিল করার জন্য সুপারিশ করা হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, ছদ্মবেশী শিবিরকর্মী ও বর্তমানে উপবৃত্তির দালাল শফিকুল ইসলামকে দেখা যায় ঘুর ঘুর করতে। বিগতদিনে উপবৃত্তির টাকা বিতরণে শিওরক্যাশের অক্ষমতা ও অদক্ষতা সত্ত্বেও কেন শিওরক্যাশকেই ফের দায়িত্ব দেয়া হলো তা অনুসন্ধানের বিষয়। টেন্ডার ছাড়াই শিওরক্যাশ কীভাবে উপবৃত্তির শত শত কোটি টাকা বিতরণের দায়িত্ব পেল তা দুনীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধানের বিষয়। 

গত সপ্তাহে শিওরক্যাশের দালাল শফিকুল ইসলামকে দেখা যায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে ঘুর ঘুর করতে। জানতে চাইলে শফিকুল বলেন, একের পর এক স্কুল কলেজ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে শিওরক্যাশের। দেখি স্যারদের সঙ্গে কথা বলে কিছু করা যায় কিনা। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0047180652618408