দৈনিক শিক্ষাডটকম, সিকৃবি : অ্যানিমেল হাসবেন্ড্রি প্রকল্প আইন-২০২৩ গঠনকল্পের সভা বন্ধের দাবিতে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি) ক্লাস বর্জন ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা এই সভাকে প্রাণিসম্পদ সেক্টেরকে বিভাজন করার পক্ষপাতদুষ্ট উদ্যোগ আখ্যায়িত করে সেটি বন্ধের আহ্বান জানান অন্যথায় কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
জানা যায়, সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) এনিম্যাল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল আইন ২০২৩ গঠনকল্পে সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব ড. নাহিদ রশিদের সভাপতিত্বে সভা আহ্বান করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে সারাদেশের ১৪টি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে ভেটেরিনারি শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে সিকৃবি ভেটেরিনারি ছাত্র সমিতির সাধারণ সম্পাদক শিমুল মজুমদার বলেন, গত ১০ ও ১৪ ডিসেম্বর দুটি চিঠি থেকে আমরা জানতে পারি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ভেটেরিনারি কাউন্সিলের আদলে তারা পশু পালনের সেক্টরের জন্য নতুন একটি কাউন্সিল গঠন করতে যাচ্ছে যেটার একেবারেই কোনো প্রয়োজন নেই। ইতোমধ্যে যেখানে ভেটেরিনারি কাউন্সিলেই দুইটি অনুষদীয় সব একাডেমিক ও নিয়োগসংক্রান্ত বিষয়াবলি বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা আছে। এই উদ্যোগটি বাস্তবায়নে আজ (১৮ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় তারা অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে গোপনীয়ভাবে মিটিং ডাকে। এটি মূলত বর্তমান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যে সচিব রয়েছেন উনার একটি অসৎ চাওয়া। উনি নিজে একজন পশুপালন গ্র্যাজুয়েট এবং উনি যে মিটিং ডেকেছেন সেখানে ৮ জন পশুপালন গ্র্যাজুয়েট রেখে মাত্র ৩ জন ভেটেরিনারি গ্র্যাজুয়েট রেখেছেন। পাশাপাশি তারা এই সময়টাকেই বেছে নিয়েছেন কারণ এখন সংসদ অধিবেশনের কোনো সুযোগ নেই। পরবর্তীতে যখন সংসদ অধিবেশন হবে সহজেই যেন এটি সংসদে পাশ করিয়ে ফেলা যায়। তার উপর উনার ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব বহাল থাকবে। উনি তার আগেই তড়িঘড়ি করে কিছু একটা করে ফেলতে চাচ্ছেন। তবে আমরা ভেটেরিনারি ছাত্রসমাজ এই কুচক্রীমহলের এমন অন্যায় চাওয়ার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং এই মিটিং যেন না হয় সেই দাবি জানাচ্ছি।
মানববন্ধনে সিকৃবি ভেটেরিনারি ছাত্র সমিতির সহসভাপতি আতিকুল হক বলেন, একটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে একই ধরনের দুটি কাউন্সিল করা ঠিক হবে না। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানেও এমন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় রয়েছে। তারাও একটি কাউন্সিল দিয়েই সকল কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে। এই কুচক্রীমহল কেন দুটি কাউন্সিল করতে চাচ্ছে তা আপনারা সকলেই বুঝতে পারছেন। তারা আমাদের ভেট সমাজের বিরুদ্ধে কাজ করবে। ইতোমধ্যেই পশুপালন গ্র্যাজুয়েটরা আমাদের অনেক পদ ও নিয়োগে ভাগ বসিয়েছি। পশুপালনের অনেক কোর্স আমাদের পড়ানো হলেও আমরা সেগুলোর স্বীকৃতি পাই না। আমরা এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে জানিয়ে দিতে চাই এই সকল কুচক্রীমহলের স্বার্থ হাসিলের কোনো সুযোগ আমরা ভেটেরিনারি শিক্ষার্থীরা দেবে না।
এর আগেও চলতি বছরের ৩০ মে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের (ক্যাডারবহির্ভূত গেজেটেড কর্মকর্তা এবং নন-গেজেটেড কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা-২০২৩ প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত গেজেটে জু অফিসার, সহকারী ব্যবস্থাপক, সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, পোলট্রি ডেভেলপমেন্ট অফিসার, অ্যানিমেল প্রোডাকশন অফিসার ও পশুপালন কর্মকর্তা পদগুলোতে ভেটেরিনারি সায়েন্স অ্যান্ড অ্যানিমেল হাজব্যান্ড্রি ডিগ্রিধারীদের আবেদনের যোগ্যতার কথা বলা হয়। কিন্তু ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (ডিভিএম) ডিগ্রিধারীদের আবেদনের সুযোগ রাখা হয়নি প্রকাশিত গেজেটে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বর্জন ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।