সিকৃবি ভিসির ব্যক্তিগত সচিবে অতিষ্ঠ শিক্ষক-কর্মকর্তারা

দৈনিক শিক্ষাডটকম, সিলেট |

দৈনিক শিক্ষাডটকম, সিলেট: সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) ভিসি অধ্যাপক ডা. জামাল উদ্দিন ভূঞার ব্যক্তিগত সচিব (পিএস) ড. সালাহউদ্দিন আহমদের কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ শিক্ষক-কর্মকর্তারা। শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ-বাণিজ্য, শিক্ষকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ, ক্ষমতার অপব্যবহার, ছাত্রলীগের গ্রুপিং ও অভ্যন্তরীণ ছোটখাটো দরপত্র থেকে শুরু করে সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ সালাহউদ্দিন ও সিকিউরিটি সুপারভাইজার খোরশেদ আলম সিন্ডিকেটের হাতে। সাবেক এ ছাত্রদল নেতা ভিসির ‘পালক পুত্র’ হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। ঘনিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে বর্তমানে পুরো ক্যাম্পাস নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি ও তাঁর সহযোগীরা।

সালাহউদ্দিনের কার্যক্রমে অতিষ্ঠ হয়ে ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা (ছাত্র উপদেষ্টা) দপ্তরের পরিচালক, জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তরের পরিচালক। পিএসকে অপসারণ না করলে দায়িত্ব পালন করবেন না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদের সদস্যরা।

ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, জামাল উদ্দিন ভিসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর অধ্যাপক মনিরুল ইসলামকে প্রক্টর, অধ্যাপক মোহাম্মদ আতিকুজ্জামানকে ছাত্র পরিদর্শক ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক এবং অধ্যাপক মো. মোস্তাফা সামছুজ্জামানকে জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তরের পরিচালক পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেন। তাঁরা তিনজনই ভিসির আস্থাভাজন ও গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদের সদস্য। সালাহউদ্দিনের ক্ষমতার অপব্যবহার ও যেকোনো সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ, ছাত্রদের মধ্যে গ্রুপিং তৈরিসহ নানা কারণে অতিষ্ঠ হয়ে তাঁরা পদত্যাগ করেছেন।

সূত্র আরও জানায়, দুই সপ্তাহ চেষ্টা করেও তাঁদের দায়িত্বে ফেরাতে পারেননি ভিসি। পরে পরিষদের নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত বুধবার জরুরি সাধারণ সভা করে গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদ। পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মৃত্যুঞ্জয় কুন্ডের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. মনিরুল ইসলামের সঞ্চালনায় সভায় ১০৫ জন সদস্য (স্বাক্ষরিত) উপস্থিত ছিলেন। সভায় দ্রুত সময়ের মধ্যে সালাহউদ্দিনকে অপসারণ করা না হলে

দায়িত্ব পালন না করার সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া পরিষদের পরামর্শ ছাড়া পরিষদের কোনো শিক্ষককে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিলে তিনি যোগদান করবেন না মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

পরিষদের সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় কুন্ড বলেন, ‘যাঁরা পদত্যাগ করেছেন, তাঁরা বেশি ভালো বলতে পারবেন কী ধরনের আচরণ তাঁদের সহ্য করতে হয়েছে। যা-ই হোক, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন করে যাঁদের দেওয়া হয়েছে, তাঁরাও দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।’ 

পদত্যাগ করা মনিরুল ইসলাম, মোহাম্মদ আতিকুজ্জামান ও মোস্তাফা সামছুজ্জামান জানান, দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সুন্দরভাবে চালানোর চেষ্টা করেছেন। তবে নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। সবকিছুতে বাধাবিপত্তি ও হস্তক্ষেপের সম্মুখীন হয়েছেন।

শিক্ষকেরা জানান, সিকিউরিটি সুপারভাইজার খোরশেদ ক্যাম্পাসে ভিসির ‘উকিল শ্বশুর’ হিসেবে পরিচিত। অধ্যাপক জামাল ভিসি নিয়োগ পাওয়ার পর তাঁকে চুরির দায়ে শাস্তি থেকে অব্যাহতি দিয়ে পদোন্নতি দেন। এই চুরির ঘটনায় পিএস সালাহউদ্দিনও জড়িত ছিলেন। এরপর দুজন এক হয়ে এখন দাপট দেখাচ্ছেন। শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন। কাউকে পাত্তা দিচ্ছেন না।

অভিযোগ অস্বীকার করে খোরশেদ বলেন, ‘আমি মুখের ওপর কথা বলি বলে তাঁরা আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করছেন।’

সব অভিযোগ অস্বীকার করে পিএস সালাহউদ্দিন বলেন, ‘যাঁরা পদত্যাগ করেছেন তাঁদের সঙ্গে আমার কোনো কাজই নাই। ছাত্রদের কন্ট্রোল করতে না পেরে তাঁরা পদত্যাগ করেছেন। গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদ তো প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেনি।’

ছাত্রদলের রাজনীতির বিষয়টিও অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক ছিলাম।’

ভিসি জামাল উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি পুরাটা সঠিক না। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোথাও সালাহউদ্দিনের হস্তক্ষেপের ব্যাপারে কোনো আবেদন, স্মারকলিপি, অভিযোগ—কোনো কিছু কেউ দেননি। জাস্ট একটা অনৈতিক আবদারের জন্যই এই আলোচনা। ভিসি কাকে পিএস রাখবেন বা না রাখবেন, অন্যরা যে এভাবে বলেন, এটাই তো তাঁকে অসম্মান করা হয়।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে - dainik shiksha কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা - dainik shiksha ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন - dainik shiksha সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল - dainik shiksha ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে - dainik shiksha নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0042810440063477