সিলেটে এমপিও শিক্ষকদের বেতন নিয়ে ভোগান্তি

জামিল আহমেদ , সিলেট প্রতিনিধি |

teachers

জনতা ব্যাংকে সরকারি বেতন নিয়ে ভোগান্তিতে সিলেটের ৪ হাজার এমপিও শিক্ষক কর্মচারিরা। ব্যাংক কর্মকর্তাদের রুঢ় আচরণ, কাজের অবহেলা, ধীরগতি ও অদক্ষতা, মাউশির গতিহীন বেতন প্রক্রিয়ার কারণে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার শিক্ষকরা। এছাড়া সিলেট সদর, দক্ষিন সুরমা, জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলার ১৮৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীর একাউন্ট এ শাখায় থাকায় প্রতিমাসে বেতন নিতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় শিক্ষক-কর্মচারিদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে সিলেট সদর, দক্ষিণ সুরমা, জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলার প্রায় ১৮৯টি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীর সরকারি বেতন বিল আসে জনতা ব্যাংক সিলেটের জালালাবাদ শাখায়। ১৮৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১২টি কলেজ, ২৮টি মাদ্রাসা ও ৫০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

সূত্র জানায়, এ চার উপজেলায় যারা নতুন এমপিওভূক্ত হন তাদেরকে মাউশি’র নির্দেশ অনুযায়ী জনতা ব্যাংকের এই শাখায় নতুন একাউন্ট খোলতে হয়। অন্য কোন ব্যাংকে হিসাব খুললে সেটা গ্রহণ যোগ্য নয় মাউশির কাছে। এছাড়া এমপিও শিক্ষকদের এক মাসের সরকারি বেতন শীট জনতা ব্যাংকে আসে পরের মাসের ১০ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রত্যেকের একাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করতে এক সপ্তাহের বেশি সময় নেয়। এতে করে শিক্ষকদের হাতে বেতন পৌছে মাসের ২০-২২ তারিখ।

শিক্ষকদের অভিযোগ, মাউশি ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের ধীর প্রক্রিয়ার কারণে বেতন তুলতে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাদেরকে। মাউশি ইচ্ছে করলে বেতন বিভিন্ন ব্যাংকে স্থানান্তর করতে পারতো। এ নিয়ে শিক্ষক সমিতি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবরে অভিযোগ করলেও তা আমলে নেয়নি বলে জানান শিক্ষক নেতারা। শিক্ষকদের দাবি প্রতি উপজেলায় এমপিও বেতন প্রদান করা হলে এ জটিলতার সৃষ্টি হত না।

সিলেট জেলা শিক্ষক সমিতির সচিব ও দি এইডেড হাই স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক মো: শমসের আলী বলেন, আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলাম প্রত্যেক উপজেলায় সরকারি বেতন প্রদানের জন্য। উপজেলা ভিত্তিক বেতন প্রদান করা হলে শিক্ষকদের এ দুর্ভোগ পোহাতে হত না।

সিলেট জেলা শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ জানান, মাউশি ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের ধীর প্রক্রিয়ার কারণে বেতন তুলতে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয় শিক্ষকদের। এ নিয়ে শিক্ষক সমিতি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবরে অভিযোগ করলেও তা আমলে নেয়নি কর্তৃপক্ষ। প্রতি উপজেলায় এমপিও বেতন প্রদান করার জোর দাবি জানান শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ।

তবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরে জনতা ব্যাংকের শাখা না থাকায় সিলেট সদরে এ কার্যক্রম চলে। এছাড়া দক্ষিণ সুরমার স্টেশন রোড শাখায় দক্ষিন সুরমার শিক্ষকদের বেতন প্রদানের পরিকল্পনা রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ব্যাংকের শিক্ষক বেতন ডেস্কে চার হাজার শিক্ষকের বিপরীতে কাজ করেন একজন কর্মকর্তা। প্রতি মাসে বেতন ট্রান্সফার করতে হিমশিম খেতে হয় বলে জানান খোদ এই কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, কাজের চাপের কারনে এ শাখায় বদলি হয়ে আসতে চান কোন কর্মকতার।

এব্যপারে জালালাবাদ শাখার ব্যবস্থাপক নজরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনতা ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো: রিয়াজুল ইসলাম বলেন, আমাদের ব্যাংকের একটি মাত্র শাখায় চার উপজেলার শিক্ষকের বেতন প্রদান করা হয়। সেটা শিক্ষকদের ও আমাদের কর্মকর্তাদের কষ্টের ব্যাপার সেটা আমরা জানি। কিন্তু এটা আমাদের বিষয় না মাউশির সাথে জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিসের আলোচনার দরকার। তবে জৈন্তাপুর ও দক্ষিণ সুরমার এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন স্টেশন রোড শাখায় স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। কবে নাগাদ হবে সেটা বলা যাচ্ছে না।

তিনি আরো জানান, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরে জনতা ব্যাংকের কোন শাখা না থাকায় এ দুই উপজেলার শিক্ষকদের সিলেট সদর থেকে বেতন তোলতে হবে। তবে এখন সব শাখা অনলাইন করা হয়েছে। টাকা জমা হলে যেকোন শাখা তেকে তুলতে পারবে।

সিলেট শহর কিংবা দক্ষিণ সুরমায় ব্যাংকের শাখা থাকতে কেন এই শাখায় সকল এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন প্রদান করা হয় এমন প্রশ্নের জবাবে উপ মহা ব্যবস্থাপক জানান, এটা মাউশির সাথে ব্যাংকের লোকাল অফিসের সম্পর্ক। চাইলেই অন্য শাখায় স্থানান্তর করা যাবে না।

এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার মো: জহাঙ্গীর হোসেন জানান, এ বিষয়ে আমি শুনেছি। এটা সম্পূর্ণ মাউশি’র ব্যাপার। তবে এটা বিকেন্দ্রীকরণ করলে শিক্ষকদের সুবিধা হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির - dainik shiksha বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ - dainik shiksha ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0061018466949463