গত প্রায় এক দেড় মাস থেকে সিলেট বিভাগের বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে আছে। বিশেষ করে এ বিভাগের সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার অবস্থা একেবারে নাজুক হয়ে পড়েছে। সিলেট জেলার কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও জকিগঞ্জ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি এতই খারাপ যে, চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। সিলেট শহরেও কোন কোন অঞ্চল বার বার বন্যার পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। জনজীবন একেবারে নাকাল হয়ে পড়েছে। এবারের বন্যা অতীতের সব বন্যাকে হার মানিয়েছে।
স্মরণকালের এই ভয়াবহ বন্যায় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষ পানির নিচে তলিয়ে আছে। দীর্ঘদিন থেকে বন্যার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। মানুষজন ও গবাদি পশুর দূর্দশা চরম আকার ধারণ করেছে। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা মারাত্মক বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অনেক লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে উঁচু এলাকায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং তাতে লোকজন আশ্রয় নিয়েছে।
মাঝখানে কয়েকদিন মেঘ, বৃষ্টি এবং বন্যার পানি কিছুটা কমলেও গত ৩-৪ দিনের প্রবল বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে এই বিভাগের নতুন নতুন এলাকা দ্রুত প্লাবিত হচ্ছে এবং আগে প্লাবিত এলাকাগুলো ভয়াবহ দূর্যোগের সম্মুখীন হয়ে পড়ছে। বিভিন্ন জায়গায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধ ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সুরমা, কুশিয়ারা, সারি, লোভা, খোয়াই, গোয়াইন প্রভৃতি নদীর পানি সবকয়টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা ও উপজেলা সদরের সঙ্গে বহু এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বৃষ্টিপাত ক্রমশ বাড়ছে। বন্যা পরিস্থিতি অধিকতর ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সারা দেশের মতো সিলেট শিক্ষা বোর্ডেও আগামী ১৯ জুন থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিলো। চলমান স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কারণে এই পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা খুবই দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছিলেন। ইতোমধ্যে অনেক পরীক্ষা কেন্দ্রে পানি উঠেছে। কোথাও কোথাও বন্যার পানি না উঠলেও পরীক্ষা কেন্দ্রে যাবার রাস্তাগুলোও প্লাবিত হয়ে গেছে। কোন কোন পরীক্ষা কেন্দ্রে প্লাবিত এলাকার লোকজন আশ্রয় নিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সারাদেশের এসএসসি পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
শত কষ্টের পরও এসএসসি পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় সিলেটের অভিভাবক ও পরীক্ষার্থীদের স্বস্তির শ্বাস ফেলেছেন। কারণ সিলেটে অবিরাম চলছে বৃষ্টিপাত। এই কয়েকদিনের মধ্যে বৃষ্টিপাত থামার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। অনেক জায়গায় শিক্ষার্থীদের পাহাড়ি খরস্রোতা নদী- খাল এবং হাওর-বিল পেরিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে হতো। প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পৌঁছানো খুবই কঠিন হতো। যাওয়ার সময় প্রবেশপত্র, রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও অন্যান্য কাগজপত্র বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হওয়ার এমনকি পরীক্ষায় যাওয়ার পথে নৌকাডুবিতে অনেকের জীবননাশের আশঙ্কা দেখা দিতো। আর বন্যায় বসতবাড়িতে পানি ওঠায় পরীক্ষার্থীরাও শেষ দিকের প্রস্তুতি নিতে পারছিলেন না। এ অবস্থায় এসএসসি পরীক্ষা আপাতত কিছুদিনের জন্য স্থগিত ঘোষণা করায় হাজার হাজার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুশ্চিন্তামুক্ত হয়েছেন।
লেখক : অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী, অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট।