কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট ও সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। রোববার (২ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত সিলেট জেলার সবকটি নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও এখন পর্যন্ত পানির উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। তবে সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় সেখানে বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এদিকে সুনামগঞ্জ জেলার সুরমাসহ সব নদনদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় সুনামগঞ্জ শহরসহ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। রবিবার (২ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যনুসারে সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলা শহরসহ একাধিক উপজেলা নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার ফলে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। লোকালয়, রাস্তাঘাটে পানি প্রবেশ করায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অনেকেই।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, উজানে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় সুরমা, কুশিয়ারা, যাদুকাটা, রক্তি, বৌলাই ও চেলাসহ জেলার প্রধান প্রধান নদনদীর পানি বেড়ে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিত দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন সুনামগঞ্জ পৌরশহরের বড়পাড়া, পশ্চিম হাজীপাড়া, কাজির পয়েন্ট, সুলতানপুর, নবীনগর এলাকার বাসিন্দারা। এছাড়া পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন জেলার ছাতক, দোয়ার বাজার, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, জগন্নাথপরসহ একাধিক উপজেলার মানুষ। জেলার তাহিরপুর সুনামগঞ্জ সড়কের শক্তিয়ারখলা ও আনোয়ারপুর এলাকার সাবমার্সিবল অংশ পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ঈদে বাড়ি থেকে কর্মস্থলের উদ্দেশে ফিরতে চাওয়া মানুষসহ এলাকাবাসী।
আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায় মৌসুমী বায়ু বেশ সক্রিয় থাকার কারণে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেড়ে গেছে। আগামী এক সপ্তাহ সিলেট অঞ্চলে বৃষ্টিপাত একই রকম থাকতে পারে। শনিবার (১ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে রবিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১১১ মিলিমিটার।
এদিকে বন্যা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মাকসুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, জেলার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকে প্রস্তত রাখা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে নগদ ২৫ লাখ টাকা, ৬০০ মেট্রিক টন চাল, ১০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার মজুদ রাখা হয়েছে।
অপরদিকে, সিলেটে বন্যার শঙ্কায় আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে জেলা প্রশাসন। ৪১৯ মেট্রিক টন চাল, ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ৪৬৬ বান্ডিল ঢেউটিন ও গৃহসংস্কার বাবদ ১৩ লাখ ৯৮ হাজার টাকা মজুদ রয়েছে। প্রয়োজনে বরাদ্দ বাড়ানো হবে। জেলা প্রশাসক মো. মজিবুর রহমান জানান, গত বছরের বন্যার সময় তৈরি করা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকে আবারও প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়াও বন্যায় উদ্ধার ও ত্রাণকাজে ব্যবহারের জন্য স্টিলের বড় দুটি নৌকাকে প্রস্তুত রেখেছে জেলা প্রশাসন। এছাড়াও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সূত্র: বাসস