সুদহার না কমিয়ে সঞ্চয়পত্র কেনায় কড়াকড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সুদহার না কমিয়ে সঞ্চয়পত্র কেনায় কড়াকড়ি আরোপ করেছে সরকার। এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে বাধ্যতামূলকভাবে কর শনাক্তকরণ নম্বর দিতে হচ্ছে। সঞ্চয়পত্রের যাবতীয় লেনদেন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে করতে হচ্ছে ক্রেতাদের। দুর্নীতি কিংবা অপ্রদর্শিত আয়ে সঞ্চয়পত্র কেনা বন্ধে ক্রেতার যাবতীয় তথ্য একটি ডাটাবেসে সংরক্ষণের লক্ষ্যে অভিন্ন সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিক্রি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে গত সপ্তাহ থেকে সঞ্চয়পত্র কেনার সময় এসব নিয়ম পরিপালন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

সংশ্নিষ্টরা জানান, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় উচ্চ সুদে বর্তমানে চার ধরনের সঞ্চয় প্রকল্প চালু আছে। একজন ব্যক্তি কত টাকার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন, তা নির্দিষ্ট করা আছে। কেউ সীমার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনলে সঞ্চয়পত্র বিধি ১৯৭৭ (২০০২ সাল পর্যন্ত সংশোধিত) অনুযায়ী অতিরিক্ত বিনিয়োগের ওপর তিনি কোনো সুদ পাবেন না। তবে সঞ্চয়পত্রের নির্দিষ্ট ডাটাবেস না থাকায় অনেকে ভিন্ন-ভিন্ন অফিস থেকে বিপুল অঙ্কের সঞ্চয়পত্র কিনছেন। ধরা যাক- একজন ব্যক্তি নির্দিষ্ট সীমার আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৪৫ লাখ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনলেন। তিনি আবার সোনালী ব্যাংক, অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংক, সঞ্চয় অধিদপ্তর বা পোস্ট অফিস থেকেও ৪৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনলেন। নির্দিষ্ট ডাটাবেস না থাকায় এতদিন তাকে শনাক্ত করার কোনো উপায় ছিল না। সাধারণভাবে দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত বা অপ্রদর্শিত অর্থ এ উপায়ে সঞ্চয়পত্রে খাটানো হয়ে থাকে।

সূত্র জানিয়েছে, অনলাইনভিত্তিক 'জাতীয় সঞ্চয় স্কিম অনলাইন ম্যানেজমেন্ট' সফটওয়্যার ব্যবহার করে পরীক্ষামূলকভাবে চারটি অফিস থেকে সঞ্চয়পত্র বিক্রির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস, সোনালী ব্যাংকের লোকাল অফিস, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের ব্যুরো অফিস এবং বাংলাদেশ পোস্ট অফিসের প্রধান কার্যালয় বেশ কিছু দিন ধরে এ সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। শিগগিরই সব অফিসে এ সফটওয়্যার চালুর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে শুধু নতুন বিক্রির তথ্য ডাটাবেসে দিতে হবে। পর্যায়ক্রমে পুরনো সঞ্চয়পত্রও ডাটাবেসের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

ব্যাংকাররা জানান, ব্যাংকের তুলনায় সঞ্চয়পত্রে অনেক বেশি সুদ থাকায় অনেকে এখানে টাকা খাটাচ্ছেন। যে কারণে গত কয়েক অর্থবছরের বাজেটে যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। অথচ গত জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসেই নিট ৩০ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়ে গেছে। জানুয়ারি পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রে সরকারের মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৬৮ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা। একই সময় পর্যন্ত ব্যাংক ব্যবস্থায় যেখানে সরকারের ঋণ রয়েছে ৯০ হাজার কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্রের তুলনায় অনেক কম সুদে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার সুযোগ থাকলেও অতিরিক্ত বিক্রির ফলে তা পারছে না। এ রকম পরিস্থিতিতে সরকার সঞ্চয়পত্রে কড়াকড়ি আরোপ করল। গত ফেব্রুয়ারিতে সরকারের দুই বছর মেয়াদি ঋণের সুদহার ছিল ৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি ছিল ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ। অথচ সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারকে ১১ শতাংশের বেশি সুদ ব্যয় হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের নির্বাহী পরিচালক মো. মাছুম পাটোয়ারী বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তের আলোকে এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে তারা ক্রেতার টিআইএন নিচ্ছেন। এ ছাড়া সব ধরনের পরিশোধ ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ হালিম চৌধুরী  বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে অবৈধ বা কর ফাঁকির অর্থ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বন্ধ হবে। একই ব্যক্তি পাঁচ জায়গা থেকে সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন না। ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন হলে সব ক্ষেত্রে একটা রেকর্ড থাকবে। বিধায় কেউ ফাঁকি দিলে ধরা পড়বেন। অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে তিনি মনে করেন।

সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল-মাসুদ  বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে এত বেশি সুদ নেই। সরকারের এ উদ্যোগ খুবই ভালো উদ্যোগ। তবে অবসরপ্রাপ্ত সঞ্চয়কারীদের প্রয়োজনে আরও সুবিধা বাড়াতে হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027999877929688