সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি কমার উদ্বেগজনক খবর পাওয়া গেছে। গত মঙ্গলবার এ নিয়ে সংবাদে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫০-১০০ জন শিক্ষার্থী কমে গেছে। যারা বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়নি তাদের অভিভাবকেরও খোঁজ পাচ্ছে না বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এসব শিশুদের অনেকের পরিবার গ্রামে চলে গেছে। বুধবার (২৫ আগস্ট) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।

সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় অনেক অভিভাবক এমনিতেই সন্তানদের ভর্তি করেননি। অভিভাবকরা জানিয়েছেন, করোনায় সব কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্ত্রী-সন্তানদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ‘লকডাউনে’ আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত বহু মানুষ আর্থিক অসঙ্গতির কারণে যথাসময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে পারছে না।

করোনা মহামারীর কারণে দেড় বছরেরও বেশি সময় বন্ধ রয়েছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এর মধ্যে পাঠদানের উদ্দেশ্যে একটি দিনের জন্য একটি বিদ্যালয়ের একটি শ্রেণীকক্ষও খোলেনি। স্কুল বন্ধ থাকার প্রভাবেই প্রাথমিকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। সমস্যা এখানেই শেষ হয়নি। সম্প্রতি একটি বেসরকারি গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা সংক্রমণের পর বিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকার কারণে প্রাথমিকের ১৯ শতাংশ এবং মাধ্যমিকের ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী শিখতে না পারার বা শিক্ষণঘাটতির ঝুঁকিতে আছে।

ইউনিসেফের মতে, শিশুদের পড়াশোনা ও সার্বিক সুস্থতার ক্ষেত্রে স্কুল বন্ধ রাখার পরিণতি ধ্বংসাত্মক। সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে থাকা এবং যারা দূরশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায় না, তারা আর কখনও ক্লাসরুমে ফিরতে না পারার ঝুঁকিতে রয়েছে। এমনকি বাল্যবিয়ে বা শিশুশ্রমে সম্পৃক্ত হওয়ার ক্রমবর্ধমান ঝুঁকিতে রয়েছে এসব শিশু। যার বাইরে বাংলাদেশের শিশুরাও নয়।

করোনা মাহামারীর কারণে বিশ্বের যে ১৪টি দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেসব দেশের একটি হচ্ছে বাংলাদেশ। এখানে অতি সংক্রমণের মধ্যে কলকারখানা খোলা থাকে, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসার আগেই দোকানপাট আর পর্যটনকেন্দ্র খুলে দেয়া হয়। বিপণী বিতানে ভিড় জমে যায়, পর্যটন কেন্দ্রে মানুষের জমায়েত তৈরি হয়। শুধু খোলা হয় না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্তেই গলদ রয়েছে। পর্যটনকেন্দ্রগুলো খোলা, অথচ স্কুলগুলো বন্ধ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সরকারের কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার কথাও জানা যায় না। এ বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে শুরু করে প্রায় দুই মাস করোনা শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে ছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল এবং প্রায় সব দেশের বিজ্ঞানীদের পরামর্শ অনুযায়ী পরপর দুই সপ্তাহ শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে করোনা নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরে নেয়া হয়। অথচ তখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা অত্যন্ত জরুরি। এর প্রয়োজন সবাই অনুভব করছে। অনেক জায়গায় মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদানসহ আন্দোলনও হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সপ্তাহে অন্তত একদিন হলেও স্কুল খোলা রাখা উচিত।

গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদের সচিব জানিয়েছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত খুলে দিতে কর্মসূচি ঠিক করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আশা করি, এবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়টি প্রস্তুতি আর নির্দেশনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বাস্তবিক অর্থেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়া হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করতে হবে এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিতে হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0080289840698242