সুপারের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে জোর করে বিয়ে করার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গিয়ে ছাত্রীকে বিয়ে করার অভিযোগ ওঠেছে রামখানা ইউনিয়নের দক্ষিণ রামখানা রহমতিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার নেছার আহম্মেদের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ছাত্রী।

অভিযোগে জানা যায়, ওই ছাত্রী মাদ্রাসা থেকে ২০২০ সালে দাখিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর নাগেশ্বরী কামিল মাদ্রাসায় আলিম শ্রেণিতে ভর্তি হন। এরই মধ্যে তার দাখিল পাসের সনদপত্রে ভুল থাকায় বিষয়টি মাদ্রাসার সুপার নেছার আহম্মেদকে জানায়।

সুপার এই সুযোগে তার কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে নেয়। একপর্যায়ে ছাত্রীর আলিম পরীক্ষা চলতি বছরের ৬ই নভেম্বর শুরু হয়ে ৪ঠা ডিসেম্বর শেষ হয়। এরই মাঝে ওই সুপারের সঙ্গে তার দু’দিন সাক্ষাৎ হয়। এ সময় সুপার তার ভাগ্নির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। শেষ পরীক্ষার পর সুপার তার ভাগ্নি ও বোনের সহযোগিতায় তাকে বোনের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে কৌশলে একটি ফরমে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। 

পরে জানতে পারে সুপার নেছার আহম্মেদের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে। বিষয়টি ছাত্রীর ভাই জানার পর তাকে বাড়িতে আসার জন্য বলে। কিন্তু সুপার তাকে আটক করে রাখে। পরে ছাত্রীর পরিবার বিষয়টি মেনে নিয়ে তাদের দু’জনকেই বাড়িতে ডাকে। কিন্তু প্রতারক সুপার ভুক্তভোগী ছাত্রীকে কৌশলে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে পৃথক অভিযোগও করেছেন মজনু মিয়াসহ অর্ধশতাধিক অভিভাবক। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই সুপার এর আগে আরও দুটি বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রী উম্মে কুলছুম জানান, তাদের প্রথমে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। এর মাঝে তাকে নানাভাবে অত্যাচার নির্যাতন করতো তার স্বামী। পরে চলতি বছরের ২৪শে নভেম্বর তাকে বাড়িতে রেখে যায়। এরপর জানতে পারে যে, তাকে তালাক দিয়েছে। এদিকে প্রথম স্ত্রী থাকতেই তার অনুমতি ছাড়াই গোপনে ফুলবাড়ী উপজেলায় এক সন্তানের জননীকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন সুপার। পরে এক সময় তাকেও তালাক দেন।

স্থানীয় ও মাদ্রাসার অভিভাবকগণ জানান, ওই সুপার শিক্ষক নামের কলঙ্ক। সুপারের এহেন কাণ্ডে ওই মাদ্রাসায় সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন তারা। 

অপরদিকে প্রথম স্ত্রী উম্মে কুলছুমের ভাই নুরনবী মিয়ার কাছ ২০১৭ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর নগদ ১০ লাখ টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে সুপারের বিরুদ্ধে। সময়মতো টাকা পরিশোধ না করায় নোটারি পাবলিক, কুড়িগ্রাম জজ কোর্টের এডভোকেট মো. মোখলেছুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি লিগ্যাল নোটিশও পাঠানো হয়েছে তাকে। প্রতারণার শিকার নুরনবী মিয়া বলেন, নেছার আহম্মেদ আমার দুলাভাই ছিল। ভিতরবন্দ দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক হিসেবে ছিলেন তিনি। পরে রামখানা রহমতিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার পদে নিয়োগ পাওয়ার জন্য স্ট্যাম্পের চুক্তিনামায় স্বাক্ষর করে আমার কাছ  থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়েছে। তার প্রমাণও আছে।

এ বিষয়ে সুপার নেছার আহম্মেদ বলেন, সব অভিযোগ তদন্ত করেন। তদন্ত করে কী করার আছে করেন। যা ব্যবস্থা নেয়ার আছে নেন। 

অভিযোগ পেয়ে তদন্তের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে দায়িত্ব দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কামরুল ইসলাম বলেন, তদন্ত চলমান রয়েছে। প্রাথমিকভাবে কিছুটা তদন্ত হয়েছে। বাকিটা অভিভাবকদেরকে সকল এভিডেন্স দিতে বলা হয়েছে। তবে এরই মধ্যে অনেকটা সত্যতা মিলেছে। সুষ্ঠু তদন্ত করে রিপোর্ট ইউএনও মহোদয়ের নিকট জমা দিয়ে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোনো প্রকার ছাড় দেয়া হবে না।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
বিসিএসে আনুকূল্য পেতে যেচে তথ্য দিয়ে বাদ পড়ার শঙ্কায় - dainik shiksha বিসিএসে আনুকূল্য পেতে যেচে তথ্য দিয়ে বাদ পড়ার শঙ্কায় ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দেশে আদর্শ ও নীতিবান শিক্ষকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে: উপাচার্য এ এস এম আমানুল্লাহ - dainik shiksha দেশে আদর্শ ও নীতিবান শিক্ষকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে: উপাচার্য এ এস এম আমানুল্লাহ জাল সনদে চাকরি করছেন এক বিদ্যালয়ের সাত শিক্ষক - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছেন এক বিদ্যালয়ের সাত শিক্ষক কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক ছাত্র আন্দোলনে নি*হত ৯ মরদেহ তোলার নির্দেশ - dainik shiksha ছাত্র আন্দোলনে নি*হত ৯ মরদেহ তোলার নির্দেশ এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030691623687744